মৃত্যুর স্বরণ ও সদকায়ে জারিয়া

মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে আখিরাত জন্য প্রস্তুত করে এবং নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
অন্যায়-অসত্য পথ পরিহার করতে সহায়তা করে। সর্বোপরি দুনিয়ার সব ধরনের অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার থেকে ফিরে থাকার মানসিকতা তৈরি করে দেয়। মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় একবার স্বরণ করুন! এ জগতে আমরা ছিলাম না! এখন আছি! সামনে থাকব না! আল্লাহ তায়ালা বলেন, مِنها خَلَقناكُم وَفيها نُعيدُكُم وَمِنها نُخرِجُكُم تارَةً أُخرى. এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব! (ত্বহা, 55)
এ বসুন্ধরায় আমরা
থাকতে পারব না! আমাদের মৃত্যুবরণ করতেই হবে! ইরশাদ হচ্ছে, كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। কবি বলেন, موت كاس كل ناس شارب قبر بيت كل ناس داخل. আল্লাহর সত্য রাসুল বলেন, أكثروا ذكر هادم اللذات: الموت. - সকল ভোগ-উপভোগ বিনাশকারীকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ কর।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৪০৯
সবচেয়ে বুদ্ধিমান কে? রাসূল স. বলেন,
عَنْ أبي يَعْلَى شَدَّادِ بْن أَوْسٍ عن النَّبيّ ﷺ قَالَ: الكَيِّس مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِما بَعْدَ الْموْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَه هَواهَا، وتمَنَّى عَلَى اللَّهِ رواه التِّرْمِذيُّ وقالَ: حديثٌ حَسَنٌ، الدنيا مزرعة الاخرة. তিনটি আমল ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যাবে, عن أبي هريرة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ((إذا مات الإنسانُ انقطع عنه عملهُ إلا من ثلاثةٍ: إلا من صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له))؛ رواه مسلم[1]. “মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীতঃ সদকায়ে জারিয়া,এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে”। মুসলিম:৩০৮৪ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ 2:3 ৩। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, [1] যথাযথভাবে নামায পড়ে[2] ও তাদেরকে যা দান করেছি তা হতে
মসজিদ নির্মাণের ফযিলত,
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ. {التوبة:18}. 'নিশ্চয় আল্লাহর (ঘর) মসজিদ সমূহকে আবাদ করে সে-ই, যে বিশ্বাস করে আল্লাহ্ ও পরকালে এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।' (সূরা তওবা, আয়াত-১৮) وقال النبي صلى الله عليه وسلم : مَنْ بَنَى مَسْجِدًا بَنَى اللَّهُ لَهُ مِثْلَهُ فِي الْجَنَّةِ . رواه البخاري (450) ومسلم (533) من حديث عثمان رضي الله عنه . হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ্ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّه رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : (مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ ، أوْ أَصْغَرَ ، بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ) وروى ابن ماجه (738)
হযরত ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,যে ব্যক্তি আল্লাহ সন্তুষ্টির নিমিত্তে পাখির ডিম পাড়ার স্থান পরিমান মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (আহমাদ,সহীহ) আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ (9) তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে না দেয়। যারা এরূপ করে তারাই হলো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন : ৯) পরে আফসোস করতে হবে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! আবু বকরকে (রাঃ) কোনদিন ছাড়িয়ে যেতে পারবোনা আবু বকর (রা:) তাঁর অতুলনীয় বিশ্বাসপরায়ণতার জন্যে উপাধি পেয়েছিলেন আস সিদ্দিক। শুধু বিশ্বাস ও আমলেই নয়, দানশীলতার ক্ষেত্রেও তাঁর কোন তুলনা ছিল না। উমার ইবনে খাত্তাব(রা:) বলেছেন, তাবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে মহানবী(সা:) আমাদের যার যা আছে তা থেকে যুদ্ধ তহবিলে দান করার আহবান জানালেন। এ আহবান আমি নিজে নিজেকে বললাম, “আমি যদি আবু বকরকে অতিক্রম করতে পারি তাহলে আজই সেই দিন।” এই চিন্তা করে আমি আমার সম্পদের অর্ধেক মহানবীর(সা:) খেদমতে হাজির করলাম। আল্লাহর রাসুল জিজ্ঞাসা করলেন, “পরিবারের জন্য তুমি কি রেখেছ ?” বললাম, “যেই পরিমাণ এনেছি সেই পরিমাণ রেখে এসেছি।” এরপর আবু বকর তাঁর দান নিয়ে হাজির হলেন। মহানবী(সা:) ঠিক ঐভাবেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আবু বকর, পরিবারের জন্য কি অবশিষ্ট আছে?” আবু বকর জবাব দিলেন, “তাদের জন্য আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল রয়েছেন।” আমি আগের মত করেই বললাম “কোন ব্যাপারেই আবু বকরকে কোন দিন ছাড়িয়ে যেতে পারবোনা।”
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন