রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে ও কানে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
byসত্য প্রকাশ•
0
মুফতি রেজাউল করিম।।
আমরা অনেকেই জানি রক্ত বের হলেই রোজা ভেঙ্গে যায়। রমযান আসলেই এ প্রশ্ন বারবার আসতে থাকে ৷ যে আমি দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়েছে, আমার রোযা কি ভেঙ্গে গিয়েছে?
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে চাই কম হোক বা বেশি হোক ৷ কোনো ক্ষত হওয়ার কারণে হোক অথবা অন্য কোনো কারণে ৷ রোযা ভাঙ্গে না। তদ্রুপ রক্তদান করণার্থে সিরিঞ্জ দ্বারা রক্ত বের করা হলেও রোযা ভাঙ্গে না।
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গার হুকুমটি শিঙ্গা লাগানোর হুকুমের মত ৷ শিঙ্গা লাগালে রোযা ভাঙ্গে না ৷ তদ্রুপ রক্ত বের হলেও রোযা ভাঙ্গবে না ৷ হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم احتجم وهو محرم، واحتجم وهو صائم
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন ৷ অন্য হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখভরে বমি হল। তিনি তখন বললেন-
ثلاث لا يفطرن الصائم : القيء، والحجامة، والحلم.
অর্থাৎতিন বস্ত্ত রোযাভঙ্গের কারণ নয় :বমি,শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।
[সুনানে কুবরা,বাইহাকী ৪/২৬৪]
সতর্ক থাকতে হবে, রোযা অবস্থায় থুথু বা কফের সাথে রক্ত বের হলে এবং তা যদি গলার ভেতরে প্রবেশ করে এবং রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷
অধিকাংশ মানুষ মনে করেন রোযা রেখে রক্ত দিলে বা নিলে রোযার ক্ষতি হবে বা ভেঙ্গে যাবে। এ কথাটি সঠিক নয়। বরং রোজা রেখে রক্ত দান করলে বা নিলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না।
এ প্রসঙ্গে "ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা" নামক কিতাবে মুফতি দিলওয়ার সাহেব লিখেছেন ‘রক্ত দিলে বা নিলে কোনো অবস্থাতেই রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ রক্ত দিলে তো কোনো বস্তু দেহের অভ্যন্তরে ঢুকেনি, তাই এতে রোজা ভাঙ্গার প্রশ্ন আসে না।
আর রক্ত নিলে যদিও তা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না। তেমনিভাবে রোযা ভঙ্গ হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য যে রাস্তা দিয়ে প্রবেশের কথা, তা দিয়ে প্রবেশ করে না। বিধায় রোযা ভঙ্গ হবে না। [ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা পৃষ্ঠা-৩২৬]
কানে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
কানে ড্রপ, ওষুধ, তেল ও পানি ইত্যাদি দিলে রোযা ভাঙ্গবে না। কারণ, কান থেকে গলা পর্যন্ত কোন রাস্তা নেই। তাই কানে কিছু দিলে তা গলায় পৌঁছে না। আদি যুগে ছিদ্র পথ আছে বলে ধারণা করা হতো ৷ বিধায় সে যুগের কিতাবাদিতে রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।