হস্তমৈথুন বা মাস্টারবিউশন করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায় ?

Masterbution-korle-ki-roja-venge-jay-masterbution-er-opokarita

মুফতি রেজাউল করিম।।

রোযার একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা ৷ আর রোযা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না ৷

হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله تعالى : الا الصوم فإنه لى وانا أجزى به يدع شهوته وطعامه من أجلى

অর্থাৎ মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয় একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত।আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি  নিজেই এরবিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ  করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ  করেছে।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ ]

কেউ যদি রোযার অবস্থায় হস্তমৈথুন করে এবং এতে বীর্য বের হয় তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। যদি এ রোযাটি ফরয রোযা হয় তাহলে তাকে এ রোযার কাযা করতে হবে ৷

কাফফারা দিতে হবে না। কারণ কাফফারা শুধু সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করলে সেক্ষেত্রে ফরয হয়। আর আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। কারণ রোযা রাখা বা রোযা না-রাখা উভয় অবস্থাতেই হস্তমৈথুন করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। আর রোযা অবস্থায় এর ভয়াবহতা আরো বেশি। সর্বদা এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

[আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০, আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৭৭, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৫]

আরো পড়ুন [সময় টিভি: গণমাধ্যমে আলেমদের অংশগ্রহণ]

ইবনে কুদামা রহমাতুল্লাহি আলাহি বলেন, "যদি কেউ হস্তমৈথুন বা মাষ্টারবিউশন করে ৷ সে একটি হারাম কাজ করল ৷ এতে যদি বীর্য বের হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ বীর্য বের না হলে রোযা ভাঙ্গবে না ৷"

[আলমুগনী লি ইবনে কুদামা]

শাইখ উসাইমিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, " হাত দ্বারা অথবা মাটিতে ঘষাঘষি করার মাধ্যমে যদি কেউ বীর্য বের করে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷"


ফতোয়ার উল্লেখযোগ্য কিতাব " আলবাহরুর রায়েক" কিতাবে এসেছে, "রোযাদার ব্যক্তি যদি হস্তমৈথুন করে এবং এর ফলে বীর্য বের হয় ৷ তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং পরবর্তীতে তা ক্বাযা করতে হবে ৷"
[আলবাহরুর রায়েক, 2/475]


হস্তমৈথুন বা মাস্টারবিউশনের  অপকারিতাঃ

হস্তমৈথুন বা মাস্টারবিউশন সব ধর্মেই নিষেধ করা হয়েছে। অপচয় করা প্রায় সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে অপচয়কারিকে শয়তানের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বীর্য  বা মনী আল্লাহর  তায়ালার একটি নিয়ামত ৷ আর হস্তমৈথুনের ফলে এই নিয়ামতের অপচয় হয়ে থাকে। অতিরিক্ত  হস্তমৈথুুনের  ফলে লিঙ্গ বা যোনীপথে ঘা এর সৃষ্টি হতে পারে ৷  এমনকি রক্তক্ষরন ও হতে পারে।

বিশেষ করে মেয়েদের যোনীতে বিভিন্ন বস্তু প্রবেশের কারনে জীবানু সংক্রমন ঘটতে পারে। উভয়ের বেলায় প্রশ্রাবে জালাপোড়া সহ জীবানু সংক্রমনে সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

আরো পড়ুন [মহামারিতে মুমিনের করণীয়]

নিয়মিত ও অতিরিক্ত হস্তমৈথুনে যৌনশক্তি কমে যাওয়া ও শারিরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ইহা অভ্যাসে পরিনত হতে পারে এবং দীর্ঘদিন এই অভ্যাসের ফলে যৌন আকাঙ্খা কমে যেতে পারে।

তাছাড়া বিবাহিত জীবনে যৌন অনীহার সৃষ্টি হতে পারে যা দাম্পত্বে জীবনেও প্রভাব ফেলবে।


হস্তমৈথুনে লিপ্ত ব্যক্তি যেভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন:

১। এই অভ্যাস থেকে বাঁচার প্রেরণা যেন হয় আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।

২। স্থায়ী সমাধান তথা বিয়ের মাধ্যমে এ অভ্যাসকে প্রতিরোধ করা। কারণ এটাই ছিল যুবকদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ।

৩। নানা রকম কু-চিন্তা ও খারাপ ভাবনা থেকে দূরে থাকা। দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যাণকর চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ কু-চিন্তাকে বাড়তে দিলে সেটা এক পর্যায়ে কর্মের দিকে নিয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রয়ের বাইরে গিয়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

৪। দৃষ্টিকে নত রাখা। কারণ কোন ব্যক্তি বা অশ্লীল ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করা, সেটা জীবিত মানুষের হোক কিংবা আঁকা হোক, বাঁধহীন দৃষ্টি ব্যক্তিকে হারামের দিকে নিয়ে যায়।
এ কারণে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে”

[সূরা নূর, আয়াত: ৩০]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি দিবে না”

[সুনানে তিরমিযি ২৭৭৭]

তাই প্রথম দৃষ্টি, যে দৃষ্টি হঠাৎ করে পড়ে যায় সেটাতে গুনাহ না থাকলেও দ্বিতীয় দৃষ্টি হারাম। এছাড়া যে সব স্থানে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার উপকরণ বিদ্যমান থাকে সেসব স্থান থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

আরো পড়ুন [ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ স্পর্শ করা ও পড়া যাবে কি?]


৫। নানাবিধ ইবাদতে মশগুল থাকা। পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার মত কোন অবসর সময় না রাখা।

৬। এ ধরণের কু-অভ্যাসের ফলে যেসব শারীরিক ক্ষতি ঘটে থাকে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। যেমন- দৃষ্টিশক্তি ও স্নায়ুর দুর্বলতা, প্রজনন অঙ্গের দুর্বলতা, মেরুদণ্ডের ব্যথা ইত্যাদি যেসব ক্ষতির কথা চিকিৎসকরা উল্লেখ করে থাকেন। অনুরূপভাবে বিভিন্ন মানসিক ক্ষতি; যেমন- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মানসিক পীড়া অনুভব করা। এর চেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে- নামায নষ্ট করা। যেহেতু বারবার গোসল করা লাগে, যা করা কঠিন। বিশেষতঃ শীতের রাত্রিতে। অনুরূপভাবে রোযা নষ্ট করা।

৭। ভুল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পরিতুষ্টি দূর করা। কারণ কিছু কিছু যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার ধুয়া তুলে এই কু-অভ্যাসকে জায়েয মনে করে। অথচ হতে পারে সে যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতার নিকটবর্তী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।

৮। কঠিন ইচ্ছা ও শক্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। শয়তানের কাছে হার না মানা। একাকী না থাকা; যেমন একাকী রাত কাটানো। হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন পুরুষকে একাকী রাত কাটাতে নিষেধ করেছেন।[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ তে রয়েছে]

৯। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত প্রতিকার পদ্ধতি গ্রহণ করা; সেটা হচ্ছে– রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে এবং যৌন চাহিদাকে পরিশীলিত করে।

এর সাথে উদ্ভট আচরণ থেকে সাবধান থাকা; যেমন- হস্তমৈথুন পুনরায় না করার ব্যাপারে শপথ করা কিংবা মানত করা। কারণ যদি কেউ পুনরায় করে ফেলে তাহলে সে ব্যক্তি পাকাপোক্ত-শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে যৌন উত্তেজনা নিরোধক ঔষধ সেবন না করা। কেননা এসব ঔষধ সেবনে শারীরিক ঝুঁকি আছে। তাছাড়া যৌন উত্তেজনা একেবারে নিঃশেষ করে ফেলে এমন কিছু সেবন করা থেকে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হয়েছে ।

আরো পড়ুন [মাস্ক পরে নামায আদায় করা যাবে কি?]


১০। ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলা। যেমন- ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিষেধ আছে।


১১। বিশেষ করে আল্লাহ্‌র  কাছে ধর্ণা দেয়া ৷  দোয়ার মাধ্যমে তাঁর কাছে মিনতি করা ৷  তাঁর কাছে  সাহায্য প্রার্থনা করা ৷ এই  কু-অভ্যাস থেকে বাঁচার  সবচেয়ে বড় উপায় এটাই । কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়াকারীর ডাকে সাড়া দেন।

[ প্রিয় পাঠক! আপনিও এ ব্লগে লিখতে পারেন ৷ লেখার বিষয় হতে পারে, ইসলামি আর্টিকেল, জীবনাচার, গল্পগুচ্ছ, মাসয়ালা, ইত্যাদি ৷ আপনার লেখা ছবিসহ আপনার নামে ছাপা হবে ৷ লেখা পাঠাতে হবে এই মেইলে
 rezua1995@gmail.com ]


সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন