মুফতি রেজাউল করিম।
কখনও কখনও কোন হাদীসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগানো হয় যখন তা উম্মত এর (আয়িম্মায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীন) গ্রহণ করে। যদিও তার কোন সহীহ সনদ না থেকে থাকে।
অর্থঃ ইবনু আব্দিল বার তার ইস্তেযকার নামক কিতাবে যখন তিরমিজী (রহঃ) এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী সুমুদ্রের হাদীসকে সহীহ বলেছেন “তার পানি পবিত্র” অথচ মুহাদ্দিসীনগণ এ ধরনের সনদকে সহীহ বলেন না ’ তখন বলেন তবে হাদীসটি আমার নিকট সহীহ কেননা উলামায়ে কেরাম তা কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন।
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) আরো বলেন , হাদীসটি তিরমিজী রহ. এনেছেন এবং বলেছেন, ইমাম আহমাদ সহ অন্যরা হুসাইনকে যঈফ বলেছেন। আহলে ইলমদের নিকট উক্ত হাদীসের উপর আমল জারী রয়েছে। একথা দ্বারা তিরমিজী (রহঃ) এদিকে ইশারা করেছেন যে, হাদীসটি উলামাদের সমর্থনে শক্তিশালী হয়েছে। আর অনেকেই স্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ করেছেন, আহলে ইলমদের কোন হাদীসের সপক্ষে বক্তব্যই হাদীস সহীহ হওয়ার দলীল। যদিও তার নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ না থেকে থাকে।
অর্থঃ কোন হাদীসের স্বপক্ষে উলামায়ে কেরামের আমল হাদীসটিকে সহীহ সাব্যস্ত করার একটি কারণ। আর ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন কোন হাদীস মদীনাতে প্রসিদ্ধ হওয়া তার সনদ সহীহ হওয়াকে বেনিয়াজ করে দেয়।
অর্থঃ ওয়ারিশের জন্য কোন ওসিয়ত নেই” হাদীসটি সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ তবে তার হুকুম প্রমাণীত হওয়ার ব্যপারে সকলে একমত। তিনি আরো বলেন উলামাদের একটি দল বলেছেন কোন হাদীস যখন (উম্মতের) আমল দ্বারা শক্তিশালী হয় তখন তা দূর্বল অবস্থা থেকে কবূলের স্তরে পৌছে যায়। আর এটাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। যদিও তা যারা সনদ নিয়ে গবেষণা করেন তাদের জন্য ভারি হয়ে উঠে। বাস্তবতার বিবেচনা আমার নিকট নীতির উপর চলার চেয়ে উত্তম। (ফয়জুল বারী ৩/৪০৯)
অর্থঃ ইমাম নাসাঈর মাযহাব ছিল তিনি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির হাদীস আনতেন যাকে তরক করার ব্যপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত হননি। ইবনে মানদাহ বলেন, অনুরূপভাবে ইমাম আবূ দাউদ ও তার পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দুর্বল সনদের হাদীস (তার সুনানে) নিয়ে আসেন যখন তিনি কোন অধ্যায় যঈফ সনদ ব্যতীত অন্য কোন হাদীস না পান। কেননা তার নিকট যঈফ সনদ মানুষের কিয়াস থেকে উত্তম। আর এটা ইমাম আহমাদ (রহঃ) এরও মত। তিনি বলেছেন যঈফ হাদীস আমার নিকট মানুষের কিয়াসের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।
فإذا لم يجد في الباب أثرًا يدفعه ولا قولَ صاحب ولا إجماع على خلافه كان العمل به عنده أولى من القياس
وليس أحَدٌ من الأئمة [الأربعة] إلا وهو موافِقُه على هذا الأصل من حيث الجملة فإنه ما منهم أحد إلا و قد قَدَّم الحديثَ الضعيف على القياس
فقدم أبو حنيفة حديثَ القهْقَهَة في الصلاة على مَحْض القياس وأجمع أهل الحديث على ضَعْفِه وقدم حديثَ الوضوء بنبيذ التمر على القياس وأكثر أهل الحديث يُضَعِّفه وقدَّم حديثَ: “أكْثَرُ الحيضِ عَشَرَةُ أيامٍ” وهو ضعيف باتفاقهم على محض وقَدَّم حديثَ: “لا مهر أقلّ من عشرة دراهم” وأجمعوا على ضعفه بل بطلانه على مَحْض القياس
وقَدَّم الشافعي خبر جواز الصلاة بمكة في وقت النهي مع ضعفه ومخالفته لقياس غيرها من البلاد، وقَدَّم في أحد قَوْليه حديث: “مَنْ قاءَ أو رُعِفَ فليتوضأ ولْيَبْنِ على صلاته” على القياس مع ضعف الخبر وإرساله
وأما مالك فإنه يقدم الحديث المرسَلَ، والمنقطع، والبَلاغات، وقولَ الصحابي على القياس
فإذا لم يكن عند الإمام أحمد في المسألة نصّ ولا قول الصحابة أو أحد منهم ولا أثر مرسل أو ضعيف عَدَل إلى الأصل الخامس وهو القياس-فاستعمله للضرورة، وقد قال في “كتاب الخلَّال”: سألت الشافعي عن القياس، فقال: إنما يُصَار إليه عند الضرورة ، أو ما هذا معناه
অর্থঃ সমস্ত হানাফী উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, আবূ হানীফাহ (রহঃ) এর মাযহাব হল, কিয়াস করার চেয়ে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা তার নিকট উত্তম যখন তিনি উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য কিছু পান না।
অর্থঃ যদি কোন হাদীসের দূর্বলতা এরসালের কারণে বা তাদলীসের কারণে বা রাবীর অবস্থা অজ্ঞতার কারণে হয় তবে ভিন্ন সনদে আসার দ্বারা উক্ত দূর্বলতা দূর হয়ে যাবে। তখন হাদীসটি (হাসান লি গাইরিহী হবে) হাসান লি জাতিহী
হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
অর্থঃ যার স্মরণশক্তিতে দূর্বলতা রয়েছে এমন কোন রাবীর সমর্থনে যখন উল্লেখযোগ্য কোন হাদীস পাওয়া যায় আর তা তার সমকক্ষ বা উপরে হয় তার নিচে না হয় অথবা উক্ত সমর্থন এমন রাবীর পাওয়া যায় যে গোলতাল পাকিয়ে ফেলে, একটি থেকে অন্যটি আলাদা করতে পারে না অথবা উক্ত সমর্থন কোন অজানা রাবীর বা মুরসাল সনদের বা কোন মুদাল্লাস সনদের পাওয়া যায় তখন তাদের হাদীস (যঈফের সীমা অতিক্রম করে) হাসান হয়ে যাবে। তবে হাসান লিযাতিহী নয় বরং হাসান লি-গাইরিহী।
আল্লামা শারানী (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল মুহাদ্দিসীন যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তার একাধিক সনদ পাওয়া যায়। তারা কখনও উক্ত হাদীসকে সহীহের সাথে সম্পৃক্ত করেন কখনও হাসানের সাথে।
قَالَ اَلشَّيْخُ أَبُو عَمْرٍو لَا يَلْزَمُ مِنْ وُرُودِ اَلْحَدِيثِ مِنْ طُرُقِ مُتَعَدِّدَةٍ أَنْ يَكُونَ حَسَنًا لِأَنَّ اَلضَّعْفَ يَتَفَاوَتُ فَمِنْهُ مَا لَا يَزُولُ وَمِنْهُ ضَعْفٌ يَزُولُ بِالْمُتَابَعَةِ كَمَا إِذَا كَانَ رَاوِيهِ سَيِّئَ اَلْحِفْظِ أَوْ رَوَى اَلْحَدِيثَ مُرْسَلًا فَإِنَّ اَلْمُتَابَعَةَ تَنْفَعُ حِينَئِذٍ وَيُرْفَعُ اَلْحَدِيثُ عَنْ حَضِيضِ اَلضَّعْفِ إِلَى أَوْجِ اَلْحُسْنِ أَوْ اَلصِّحَّةِ
অর্থঃ শায়েখ আবূ আমর উবনুস সলাহ বলেছেন কোন হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান হওয়া জরূরী নয়। কেননা দূর্বলতার একাধিক স্তর রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয় না। আর কতক দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। যেমন কোন দূর্বল হাদীসের বর্ণনাকারী যদি দূর্বল স্মৃতিশক্তির হয় অথবা হাদীসটি মুরসাল সনদে বর্ণিত হয় তখন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটিকে পাওয়া উল্লেখিত দূর্বল হাদীসকে উপকৃত করবে এবং হাদীসটি দূর্বলতার তলদেশ থেকে হাসান অথবা সহীহের শিখরে উঠে আসবে।
অর্থঃ তবে সিজদায়ে সাহূতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া প্রসঙ্গে সুনানে নাসাঈ ও আবূ দাউদে ইবনে মাসউদ থেকে এবং সুনানে বাইহাক্বীতে মুগীরাহ থেকে রেওয়ায়েত রয়েছে। আর উভয় সনদে দুর্বলতা রয়েছে। তবে বলা হবে হাদীস তিনটি তাশাহহুদে সমষ্টিগতভাবে হাসানের স্তরে উন্নিত হয়।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনাবী (রহঃ) বলেন, জেনে রাখা উচিত যে, সনদের প্রয়োজনীয়তার দিক দিয়ে আহকাম এবং গায়রে আহকাম (যা আহকামের সাথে সম্পৃক্ত নয়) উভয়টি বরাবর। যার কোন সনদ নেই তা ধর্তব্য নয়। তবে উভয়ের মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আর তা হল হালাল হারাম সংক্রান্ত আহকামের হাদীসে কড়াকড়ি করা হয়। এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যঈফ সনদকে কবুল করা হয় কিছু শর্ত সাপেক্ষে যেগুলো উলামায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন,
إذا روينا في الحلال والحرام شددنا وإذا روينا في الفضائل ونحوها تساهلنا
অর্থঃ যখন আমরা হালাল – হারামে রেওয়ায়েত করি (সনদে খুব) কড়াকড়ি করি। আর যখন ফযীলাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে রেওয়ায়েত করি শিথিলতা করি।
মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন, যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের নিকট।
তিনি অন্যত্র বলেন, ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীসের উপর সর্বসম্মতিক্রমে আমল করা হবে। এজন্যই আমাদের আয়িম্মায়ে কেরাম বলেছে, মাথা মাসেহ করা সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন, আমি ফাতোয়া দিয়েছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতাকে তার জন্য জীবিত করা হয়েছিল এই মর্মে বর্ণিত হাদীসটি জাল নয়। যেমনটি হাফেযে হাদীসের একটি দল দাবী করেছেন। বরং তা ঐ পর্যাযের যঈফ হাদীস যাতে ফাযায়েলের ক্ষেতে বর্ণনা করতে শিথিলতা করা হয়।
উক্ত হাদীসটির ব্যপারে তিনি অন্যত্র বলেন উলামায়ে কেরাম এক্ষেত্রে তার সনদের দুর্বলতাকে ক্ষমাযোগ্য মনে করেন এবং ফাযায়েল ও মর্যাদার অধ্যায়ে যা সহীহ নয় এমন হাদীসের আনয়ন গ্রহনযোগ্য মনে করেন।
আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন,
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام
অর্থঃ হাদীস বিশারদকারীদের নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ তা’য়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়।
سمعت شيخنا ابن حجر مرارا يقول شرائط العمل بالحديث الضعيف ثلاثة
الأول متفق عليه وهوأن يكون الضعف غير شديد كحديث من انفرد من الكذابين والمتهمين ممن فحش غلطه
والثاني أن يكون مندرجا تحت أصل عام فيخرج ما يخترع بحيث لا يكون له أصل أصلا
والثالث أن لا يعتقد عند العمل ثبوته لئلا ينسب إلى النبي {صلى الله عليه وسلم} ما لم يقله
অর্থঃ আমি আমার শায়েখ ইবনে হাজার আসক্বালানীকে বহুবার বলতে শুনেছি যঈফ হাদীসের উপর আমলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।
এক. সর্বস্বীকৃত আর তা হল দুর্বলতা মারাত্মক পর্যায়ের হতে পারবে না। এর দ্বারা ঐ সকল (দুর্বল) রেওয়ায়েত বের হয়ে গেল যা একক ভাবে কোন মিথ্যুক, অপবাদ আরোপকৃত ব্যক্তি এবং যার ভুল বেশী হয় এমন ব্যক্তি রেওয়ায়েত করে।
দুই. সাধারণ কোন মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত হবে। এর ফলে ঐ সকল উদ্ভাবন বের হয়ে গেল যার শরীআতে কোন ভিত্তি নেই।
তিন. তার উপর আমল করার সময় (অকাট্যভাবে) তা প্রমানীত হওয়ার বিশ্বাস না রাখা। যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এমন কিছু সম্বন্ধ যুক্ত না করা হয় যা তিনি বলেন নি।
বর্তমানে আমাদের অনেক ভাইকে দেখা যায় তারা যখন কোন হাসীসের ব্যাপারে জানতে পারেন তা যঈফ তখন ভ্রকুঞ্চিত করেন। কেমন যেন হাদীসটিকে অযোগ্যর কাতারে ফেলে দেন। অথচ অনেক ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা ওয়াজিব। শুধু তাই নয় বরং কোন কোন ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস কুরআনের আয়াতকে পর্যন্ত রহিত করে দিয়েছে। চলমান প্রবন্ধটিতে আমরা যঈফ হাসীস সংক্রান্ত কয়েকটি হুকুমের পর্যালোচনা করব।
1। যঈফ হাদীস উম্মত গ্রহণ করে নিলে তার উপর আমল করা ওয়াজিব।
কখনও কখনও কোন হাদীসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগানো হয় যখন তা উম্মত এর (আয়িম্মায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীন) গ্রহণ করে। যদিও তার কোন সহীহ সনদ না থেকে থাকে।
হাফেয সাখাবী রহ. ফাতহুল মুগিছে বলেন,
إذا تلقت الأمة الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى أنه ينزل منزلة المتواتر في أنه ينسخ المقطوع به ولهذا قال الشافعي رحمه الله في حديث لا وصية لوارث إنه لا يثبته أهل الحديث ولكن العامة تلقته بالقبول وعملوا به حتى جعلوه ناسخا
لاية الوصية له.
অর্থঃ উম্মত যখন কোন যঈফ হাদীসকে কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তখন তার উপর আমল করা হবে । এমনকি তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়। ফলে তা অটাক্যভাবে প্রমাণীত কোন বিষয়কেও রহিত করে দেয়। এজন্যই ইমাম শাফী (রহঃ) “ওয়ারিসের জন্য কোন ওসিয়ত নেই” এই হাদীসের ব্যপারে বলেছেন, মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসটি সহীহ সনদে মেনে নেননি। তবে উম্মত তা গ্রহণ করেছে এবং তার উপর আমল করেছে। এমনকি কুরআনের ওসিয়তের আয়াতকে পর্যন্ত তা রহিত করে দিয়েছে।
( ফাতহুল মুগিছ, পৃষ্ঠা- 120)
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন,
قال ابن عبد البر في "الاستذكار" : لما حكى عن الترمذي أن البخاري صحح حديث البحر : « هو الطهور ماؤه » ، وأهل الحديث لا يصححون مثل إسناده . لكن الحديث عندي صحيح ؛ لأن العلماء تلقوه بالقبول.
অর্থঃ ইবনু আব্দিল বার তার ইস্তেযকার নামক কিতাবে যখন তিরমিজী (রহঃ) এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী সুমুদ্রের হাদীসকে সহীহ বলেছেন “তার পানি পবিত্র” অথচ মুহাদ্দিসীনগণ এ ধরনের সনদকে সহীহ বলেন না ’ তখন বলেন তবে হাদীসটি আমার নিকট সহীহ কেননা উলামায়ে কেরাম তা কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন।
(তাদরীবুর রাবী, পৃষ্ঠা- 25)
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) আরো বলেন , হাদীসটি তিরমিজী রহ. এনেছেন এবং বলেছেন, ইমাম আহমাদ সহ অন্যরা হুসাইনকে যঈফ বলেছেন। আহলে ইলমদের নিকট উক্ত হাদীসের উপর আমল জারী রয়েছে। একথা দ্বারা তিরমিজী (রহঃ) এদিকে ইশারা করেছেন যে, হাদীসটি উলামাদের সমর্থনে শক্তিশালী হয়েছে। আর অনেকেই স্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ করেছেন, আহলে ইলমদের কোন হাদীসের সপক্ষে বক্তব্যই হাদীস সহীহ হওয়ার দলীল। যদিও তার নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ না থেকে থাকে।
( আত- তায়াক্কুবাত, পৃষ্ঠা-12)
অন্যত্র আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন,
يحكم للحديث بالصحة اذا تلقاه الناس بالقبول وان لم يكن له اسناد صحيح
অর্থঃ যখন মানুষ কোন হাদীসকে কবূলের দৃষ্টি কোন থেকে গ্রহণ করে তখন উক্ত হাদীসকে সহীহ হওয়ার ফয়সালা দেওয়া হয়। যদিও তার কোন সহীহ সনদ না থেকে থাকে।
( তাদরীবুর রাবী, পৃষ্ঠা-24)
হাফেয ইবনে হাজার বলেন,
কোন হাদীস কবূল হওয়ার গুনাবলীর মধ্য হতে একটি হলো, হাদীসের বিষয়বস্তুর উপর উলামায়ে কেরাম আমলের ব্যপারে একমত হবেন। এমন হাদীসকে কবূল করা হবে এমনকি তার উপর আমল করা ওয়াজিব।আইম্মায়ে উসুলের একটি দল এমনই বলেছেন।
তার উদাহরণ সমূহের মধ্য থেকে হল, ইমাম শাফী (রহঃ) এর বক্তব্য নাপাকী পানিতে প্রবেশের দ্বারা নাপাক হওয়ার ব্যপারে যখন পানির স্বাদ বা গন্ধ বা রং পরিবর্তন হয়ে যায়, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন সূত্রে বর্ণিত যা মুহাদ্দিসীনগণ (আমলযোগ্য) সাব্যস্ত করেন না। অথচ এটাই সকলের মত। উলামাদের এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ আমার জানা নেই। (আল ইফসা আলা নুকাতি ইবনুস সালাহ)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী (রহঃ) ‘‘কিতাবুর রূহ’’ এ মৃত ব্যক্তিকে কবরে তালকীনের ব্যপারে ‘‘মু’জামে তাবারানী’’র একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটি যদিও (সহীহ সূত্রে) প্রমাণীত নয় তবে সকল যুগে ও সকল শহরে হাদীসটির উপরে কোন আপত্তি ছাড়াই আমল চালু থাকা হাদীসটির উপর আমলের জন্য যথেষ্ট।
এর পূর্বে তিনি বলেন ইমাম আহমাদকে (রহঃ) এ আমলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি এটাকে উত্তম বলেছেন এবং উক্ত হাদীসের উপর উম্মতের আমলকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন।( কিতাবুর রুহ, পৃষ্ঠা-14)
এর পূর্বে তিনি বলেন ইমাম আহমাদকে (রহঃ) এ আমলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি এটাকে উত্তম বলেছেন এবং উক্ত হাদীসের উপর উম্মতের আমলকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন।( কিতাবুর রুহ, পৃষ্ঠা-14)
মুহাক্কিক ইবনুল হুমাম রহ. ‘‘ফাতহুল ক্বদীর’’রে বলেন,
وَمِمَّا يُصَحِّحُ الْحَدِيثَ أَيْضًا عَمَلُ الْعُلَمَاءِ عَلَى وَفْقِهِ وَقَالَ مَالِكٌ شُهْرَةُ الْحَدِيثِ بِالْمَدِينَةِ تُغْنِي عَنْ صِحَّةِ سَنَدِهِ
অর্থঃ কোন হাদীসের স্বপক্ষে উলামায়ে কেরামের আমল হাদীসটিকে সহীহ সাব্যস্ত করার একটি কারণ। আর ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন কোন হাদীস মদীনাতে প্রসিদ্ধ হওয়া তার সনদ সহীহ হওয়াকে বেনিয়াজ করে দেয়।
( ফাতহুল ক্বাদীর ৩/ ১৪৩)
নিম্নে এমন কিছু হাদীস দেওয়া হল যেগুলো সনদের দিক দিয়ে দূর্বল তবে উম্মত তা কবুলের দৃষ্টিকোন থেকে গ্রহণ করেছে এবং তার উপর আমল চালু রেখেছেন,
(1) من ذرعه قىء وهو صائم فليس عليه قضاء وإن استقاء فليقض
অর্থঃ যার রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বমি হয়ে যায় তার (রোযা) ক্বাযা করতে হবে না। আর যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে তবে সে যেন ক্বাযা করে নেয়।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৩৮২
হাফেয ইবনে হাজার ফাতহুল বারীতে বলেন বুখারী (রহঃ) তারিখে কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা
অর্থঃ যার রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বমি হয়ে যায় তার (রোযা) ক্বাযা করতে হবে না। আর যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে তবে সে যেন ক্বাযা করে নেয়।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৩৮২
হাফেয ইবনে হাজার ফাতহুল বারীতে বলেন বুখারী (রহঃ) তারিখে কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি ছহীহ নয়।
হাদীসটি চার সুনানের ইমাম এবং হাকেম নাইসাবূরী ঈসা বিন ইউনুসের সনদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিজী বলেছেন হাদীসটি গরীব। ঈসা বিন ইউনুস ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে হাদীসটি আমার জানা নেই। আমি বুখারীকে তার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি তাকে মাহফূজ মনে করি না।
হাদীসটিকে ইবনে মাজাহ এবং হাকেম হাফস বিন গিয়াসের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অবশেষে তিরমিজী বলেন হাদীসটি আবূ হুরাইরা থেকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। তার সনদ সহীহ নয়। তবে উলামাদের আমল তার উপরই জারী রয়েছে।(সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৭২০)
হাদীসটিকে ইবনে মাজাহ এবং হাকেম হাফস বিন গিয়াসের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অবশেষে তিরমিজী বলেন হাদীসটি আবূ হুরাইরা থেকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। তার সনদ সহীহ নয়। তবে উলামাদের আমল তার উপরই জারী রয়েছে।(সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৭২০)
( 2) عن يعلى بن مرة عن أبيه عن جده كانوا مع النبي صلى الله عليه و سلم في مسير فانتهوا إلى مضيق وحضرت الصلاة فمطروا السماء من فوقهم والبلة من أسفل منهم فأذن رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو على راحلته وأقام فتقدم على راحلته فصلى بهم يومئ إيماء يجعل السجود أخفض من الركوع قال أبو عيسى هذا حديث غريب تفرد به عمر بن الرماح [ البلخي ] لا يعرف إلا من حديثه وقد روى عنه غير واحد من أهل العلم وكذلك روي عن أنس بن مالك أنه صلى في ماء وطين على دابته والعمل على هذا عند أهل العلم.
অর্থঃ ইয়ালা ইবনে মুররাহ তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন আমরা কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। অতঃপর নামাযের সময় হলে বৃষ্টি বর্ষিত হল। আকাশ থেকে পানি এবং নিচ থেকে কাদা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায প্রস্তুত করলেন এবং ছাওয়ারীতে একটু এগিয়ে গেলেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে ইশারায় নামায আদায় করলেন। আর সিজদায় রুকূ থেকে একটু বেশী ঝুকলেন।
)সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং- 411)
হাদীসটিকে বাইহাক্বী, ইবনুল আরবী ও ইবনে কাত্তান যঈফ বলেছেন। ইমাম তিরমিজী বলেন তবে হাদীসটির উপর উলামায়ে উম্মতের আমল চালু রয়েছে। আর ইমাম আহমাদ ও ইসহাকও এমনটি বলেছেন।
(3 ) عن سراقة بن مالك قال حضرت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقيد الأب من ابنه ولا يقيد الابن من أبيه
অর্থঃ হযরত সুরাকা বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পিতাকে সন্তান থেকে দিয়ত দিচ্ছিলেন। কিন্তু সন্তানকে পিতা থেকে দিয়ত দিচ্ছিলেন না।
অর্থঃ হযরত সুরাকা বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পিতাকে সন্তান থেকে দিয়ত দিচ্ছিলেন। কিন্তু সন্তানকে পিতা থেকে দিয়ত দিচ্ছিলেন না।
)সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং- ১৩৯৯)
ইমাম তিরমিজী বলেন হাদীসটির সনদ সহীহ নয়। হাদীসটির মধ্যে এযতেরাব রয়েছে। তবে আহলে ইলমদের আমল উক্ত হাদীসের উপর চালু রয়েছে যে, পিতা তার সন্তানকে হত্যা করলে কেসাস নেওয়া হয় না এবং অপবাদ দিলে শাস্তি প্রয়োগ করা হয় না।
(4) القاتل لا يرث
অর্থঃ হত্যাকারী মীরাছ পায় না।) সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২১০৯(
ইমাম তিরমিজী বলেন হাদীসটি সহীহ নয়। উল্লেখিত সূত্র ব্যতীত হাদীসটি অন্য কোন ভাবে জানা যায় না। তবে আহলে ইলমদের আমল উক্ত হাদীসটির অনুকুলে।
অর্থঃ হত্যাকারী মীরাছ পায় না।) সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২১০৯(
ইমাম তিরমিজী বলেন হাদীসটি সহীহ নয়। উল্লেখিত সূত্র ব্যতীত হাদীসটি অন্য কোন ভাবে জানা যায় না। তবে আহলে ইলমদের আমল উক্ত হাদীসটির অনুকুলে।
উপরে আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, যখন কোন হাদীসকে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীন যঈফ সাব্যস্ত করেন আর কিছু মুহাদ্দিসীন সহীহ সাব্যস্ত করেন তখন হাদীসটি সহীহ সাব্যস্তকরণে যারা যঈফ বলেছেন তাদের বক্তব্য কোন প্রভাব ফেলবে না। কেননা যারা হাদীসটিকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন তারা এই দিকটি বিবেচনা করেছেন যে, হাদীসটির সনদ সমূহের মধ্য থেকে কোন সনদই আপত্তি থেকে খালি নয়। আর যারা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন তারা উম্মতের হাদীসটিকে কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করা এবং হাদীসটির সনদগুলোর সমষ্টিগত বিচারে তা বলেছেন।
বরং আমাদের নিকট কোন হাদীসকে উম্মত কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহন করলে তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়।
বরং আমাদের নিকট কোন হাদীসকে উম্মত কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহন করলে তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়।
আল্লামা জাসসাস রহ. আহকামুল কুরআনে বলেন,
وقد استعملت الأمة هذين الحديثين في نقصان العدة، وإن كان وروده من طريق الآحاد، فصار في حيز التواتر; لأن ما تلقاه الناس بالقبول من أخبار الآحاد فهو عندنا في معنى المتواتر لما بيناه في مواضع،
অর্থঃ এই দুটি হাদীসকে উম্মত আমলে নিয়েছেন যদিও তা খবরে ওয়াহেদের (একক সূত্রের) ভিত্তিতে বর্ণিত হয়েছে। এটা মুতাওযাতের এর মত হয়ে গিয়েছে। কেননা কোন খবরে ওয়াহেদকে যখন উম্মত কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তখন তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়। এর কারণে আমার একাধিক স্থানে বর্ণনা করেছি।
অর্থঃ এই দুটি হাদীসকে উম্মত আমলে নিয়েছেন যদিও তা খবরে ওয়াহেদের (একক সূত্রের) ভিত্তিতে বর্ণিত হয়েছে। এটা মুতাওযাতের এর মত হয়ে গিয়েছে। কেননা কোন খবরে ওয়াহেদকে যখন উম্মত কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তখন তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়। এর কারণে আমার একাধিক স্থানে বর্ণনা করেছি।
(আহকামুল কুরআন, ১/৩৮৬)
উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন,
وهذا الحديثُ ضعيفٌ باتفاق مع ثبوت حُكْمه بالإِجماع وذهب بعضُهم إلى أن الحديثَ إذا تأيَّد بالعملِ ارتقى من حال الضَّعْف إلى مرتبة القبول قلت: وهو الأَوْجَهُ عندي وإن كَبُر على المشغوفِين بالإِسناد واعتبارُ الواقع عندي أولى مِن المَشْي على القواعد .
অর্থঃ ওয়ারিশের জন্য কোন ওসিয়ত নেই” হাদীসটি সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ তবে তার হুকুম প্রমাণীত হওয়ার ব্যপারে সকলে একমত। তিনি আরো বলেন উলামাদের একটি দল বলেছেন কোন হাদীস যখন (উম্মতের) আমল দ্বারা শক্তিশালী হয় তখন তা দূর্বল অবস্থা থেকে কবূলের স্তরে পৌছে যায়। আর এটাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। যদিও তা যারা সনদ নিয়ে গবেষণা করেন তাদের জন্য ভারি হয়ে উঠে। বাস্তবতার বিবেচনা আমার নিকট নীতির উপর চলার চেয়ে উত্তম। (ফয়জুল বারী ৩/৪০৯)
সার কথা কোন হাদীস সনদিক বিচারে যঈফ হলেই তা আমলযোগ্য নয় এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। বরং কোন হাদীস যঈফ হলেও যদি উম্মত তা কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে অর্থাৎ যুগ যুগ ধরে উক্ত হাদীসের উপর উলামায়ে কেরামের আমল চালু থাকে তবে এটাই উক্ত হাদীসকে সহীহ সাব্যস্ত করবে। যেমনটি উপরে উল্লেখিত পাহাড় সমতুল্য এক ঝাক পূর্ববতি মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
2। কোন বিষয়ে যঈফ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন দলীল পাওয়া না গেলে যঈফ হাদীস ই একমাত্র অবলম্বন।
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনে সাদ আল বাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেন,
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনে সাদ আল বাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেন,
كان من مذهب النسائي أن يخرج عن كل من لم يجتمع على تركه قال ابن منده وكذلك أبو داود يأخذ مأخذه ويخرج الإِسناد الضعيف إذا لم يجد في الباب غيره لأنه أقوى عنده من رأي الرجال وهذا أيضاً رأي الإِمام أحمد فإنه قال إن ضعيف الحديث أحب إليه من رأي الرجال
অর্থঃ ইমাম নাসাঈর মাযহাব ছিল তিনি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির হাদীস আনতেন যাকে তরক করার ব্যপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত হননি। ইবনে মানদাহ বলেন, অনুরূপভাবে ইমাম আবূ দাউদ ও তার পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দুর্বল সনদের হাদীস (তার সুনানে) নিয়ে আসেন যখন তিনি কোন অধ্যায় যঈফ সনদ ব্যতীত অন্য কোন হাদীস না পান। কেননা তার নিকট যঈফ সনদ মানুষের কিয়াস থেকে উত্তম। আর এটা ইমাম আহমাদ (রহঃ) এরও মত। তিনি বলেছেন যঈফ হাদীস আমার নিকট মানুষের কিয়াসের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।
(আল্লামা সুয়ূতী, তাদবীবুর রাবী, পৃষ্ঠা ৯৭)
হাফেয সাখাবী (রহঃ) ফাতহুল মুগীছে বলেন,
হাফেয সাখাবী (রহঃ) ফাতহুল মুগীছে বলেন,
احتج رحمه الله بالضعيف حيث لم يكن في الباب غيره، وتبعه أبو داود وقدماه على الرأي، والقياس ويقال عن أبي حنيفة أيضاً ذلك، وإن الشافعي يحتج بالمرسل إذا لم يجد غيره
অর্থঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ) যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি কোন অধ্যায়ে উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস না পান। ইমাম আবু দাউদও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তারা উভয়েই হাদীসকে যুক্তি ও কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আবু হানীফার (রহঃ) ব্যাপারেও অনুরূপ বলা হবে। আর ইমাম শাফী (রহঃ) মুরসাল রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি তা ছাড়া অন্য কোন রেওয়ায়েত না পান।
(হাফেয সাখবী, ফাতহুল মুগীছ, পৃষ্ঠা ১২০)
আল্লামা ইবনুল কাইউম হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
আল্লামা ইবনুল কাইউম হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
فإذا لم يجد في الباب أثرًا يدفعه ولا قولَ صاحب ولا إجماع على خلافه كان العمل به عنده أولى من القياس
وليس أحَدٌ من الأئمة [الأربعة] إلا وهو موافِقُه على هذا الأصل من حيث الجملة فإنه ما منهم أحد إلا و قد قَدَّم الحديثَ الضعيف على القياس
فقدم أبو حنيفة حديثَ القهْقَهَة في الصلاة على مَحْض القياس وأجمع أهل الحديث على ضَعْفِه وقدم حديثَ الوضوء بنبيذ التمر على القياس وأكثر أهل الحديث يُضَعِّفه وقدَّم حديثَ: “أكْثَرُ الحيضِ عَشَرَةُ أيامٍ” وهو ضعيف باتفاقهم على محض وقَدَّم حديثَ: “لا مهر أقلّ من عشرة دراهم” وأجمعوا على ضعفه بل بطلانه على مَحْض القياس
وقَدَّم الشافعي خبر جواز الصلاة بمكة في وقت النهي مع ضعفه ومخالفته لقياس غيرها من البلاد، وقَدَّم في أحد قَوْليه حديث: “مَنْ قاءَ أو رُعِفَ فليتوضأ ولْيَبْنِ على صلاته” على القياس مع ضعف الخبر وإرساله
وأما مالك فإنه يقدم الحديث المرسَلَ، والمنقطع، والبَلاغات، وقولَ الصحابي على القياس
فإذا لم يكن عند الإمام أحمد في المسألة نصّ ولا قول الصحابة أو أحد منهم ولا أثر مرسل أو ضعيف عَدَل إلى الأصل الخامس وهو القياس-فاستعمله للضرورة، وقد قال في “كتاب الخلَّال”: سألت الشافعي عن القياس، فقال: إنما يُصَار إليه عند الضرورة ، أو ما هذا معناه
.
অর্থঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ) যখন কোন অধ্যায়ে কোন আছার পান না, কোন সাহাবীর বক্তব্য পান না বরং এমন যঈফ হাদীস পান যার বিপরীতে উম্মতের ইজমা বর্ণিত হয়নি তখন তার নিকট উক্ত যঈফ হাদীসের উপর আমল করাই উত্তম কিয়াসের চেয়ে।ইমামদের মধ্য হতে এমন কেই নেই যে যিনি এই মুলনীতিতে একমত নন। তাদের মধ্য হতে একজনও এমন নেই যে যিনি যঈফ হাদীসকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দেন না।যেমন আবু হানীফা (রহঃ) নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ সমস্ত মুহাদ্দিসীন হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত। নাবীযে তামার (খেজুর ভিজিয়ে রাখা পানি) দ্বারা উযূর হাদীসকে প্রধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ অধিকাংশ মুহাদ্দিসীন তা যঈফ বলেছেন। “হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা দশ দিন” এই হাদীসকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ সর্বসম্মতিক্রমে তা যঈফ। “দশ দিরহামের নীচে মোহর নেই” এই হাদীসকে যুক্তির উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যপারে একমত।
বরং অনেকে মওযু বলেছেন।
অনুরূপভাবে ইমাম শাফী (রহঃ) নিষিদ্ধ সময়ে মক্কায় নামায জায়েয হওয়ার হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ তা যঈফ ও কিয়াস পরিপন্থী। তার এক মত অনুযায়ী “কেউ নামাযে বমি করলে বা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সে যেন উযূ করে পূর্বের নামাযের উপর বেনা করে” এই হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ হাদীসটি যঈফ এবং মুরসাল।
ইমাম মালেক (রহঃ) মুরসাল, মুনকতে (যার সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে), বালাগাত এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেন কিয়াসের উপর।আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন বিষয়ে দলীল খুজে পান না এবং সাহাবায়ে কেরামের বা তাদের কারো বক্তব্য পান না এবং কোন যঈফ বা মুরসাল রেওয়ায়েতও পান না তখন পঞ্চম মূলনীতি কিয়াসের প্রতি ধাবিত হন।
ইমাম মালেক (রহঃ) মুরসাল, মুনকতে (যার সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে), বালাগাত এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেন কিয়াসের উপর।আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন বিষয়ে দলীল খুজে পান না এবং সাহাবায়ে কেরামের বা তাদের কারো বক্তব্য পান না এবং কোন যঈফ বা মুরসাল রেওয়ায়েতও পান না তখন পঞ্চম মূলনীতি কিয়াসের প্রতি ধাবিত হন।
( ইবনুল কাইউম হাম্বলী, ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন ১/৩১ (انتهي بتقديم و تاخير)
ইবনে হাযম রহ. বলেন,
وأصحاب أبي حنيفة مجمعون على أن مذهب أبي حنيفة أن ضعيف الحديث أولى عنده من القياس إذا لم يجد في الباب غيره
অর্থঃ সমস্ত হানাফী উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, আবূ হানীফাহ (রহঃ) এর মাযহাব হল, কিয়াস করার চেয়ে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা তার নিকট উত্তম যখন তিনি উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য কিছু পান না।
( আন নুকাত আলা ইবনিস সালাহ,2/319)
ইবনে হাযম অন্যত্র বলেন,
আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালার রাসূল থেকে বর্ণিত যঈফ হাদীস আমার নিকট কিয়াসের চেয়ে উত্তম। তা থাকা অবস্থায় কিয়াস করা জায়েয নেই।
( আল ইহকাম ফি উছূলিল আহকাম ৭/৫৪)
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, আয়িম্মায়ে কেরাম এবং মুহাদ্দিসীনদের মুলনীতি হল, কোন বিষয়ে তারা যঈফ হাদীস পেলে যুক্তির পিছনে পড়েন না। বরং উক্ত বিষয়ে অন্য কোন দলীল পাওয়া না গেলে তা-ই একমাত্র অবলম্বন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের যঈফ হাদীস ও মানুষের যুক্তি ও বিবেকের অনেক উর্দ্ধে। তাই আল্লাহ তাআলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যঈফ সনদে বর্ণিত কোন হাদীস বা বুখারী মুসলিমের বাইরে কোন হাদীসের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন পূর্ববতি সমস্ত মুহাদ্দিসীনদের তরীকা পরিপন্থী। যার সামান্যতম বিবেক আছে তার জন্য এটা শোভনীয় নয়। বিশেষভাবে যখন উক্ত বিষয়ে অন্য কোন হাদীস পাওয়া যায় না।
হ্যাঁ, ইমামদের উল্লেখিত বক্তব্য সকল দুর্বল হাদীসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং দুর্বলতা গ্রহণের একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে। এ ব্যপারে শায়েখ আওয়ামা বলেন, এক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকে চার ভাগে ভাগ
হ্যাঁ, ইমামদের উল্লেখিত বক্তব্য সকল দুর্বল হাদীসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং দুর্বলতা গ্রহণের একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে। এ ব্যপারে শায়েখ আওয়ামা বলেন, এক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকে চার ভাগে ভাগ
করা প্রয়োজন।
1। ঐ যঈফ হাদীস যার দূর্বলতা মুতাবাআত বা শাহেদ দ্বারা দূর হয়ে গিয়েছে। আর এগুলো হলো ঐ পর্যায়ের হাদীস যেগুলোর কোন এক রাবীর ব্যপারে বলা হয় তিনি হাদীসে শিথিল বা তার মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। ….2। মধ্যম পর্যায়ের দুর্বল। যার রাবীর ব্যপারে বলা হয় তিনি হাদীসে দুর্বল বা তার হাদীস
প্রত্যাখ্যাত বা মুনকারুল হাদীস।
3। মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। আর তা হল এমন হাদীস যাতে মিথ্যার অপবাদে জড়িত ব্যাক্তি থাকে।
4। মওযু বা জাল বর্ণনা ।
ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য ইমামদের বক্তব্য উপরোক্ত প্রথম দুই প্রকারের জন্য প্রযোজ্য।
( আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী, কাওয়ায়িদু ফি উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ১০০,১০১ ذكره السيخ عبد الفتاح ابو غده تعليقا)
3। কোন যঈফ হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান লি-গাইরিহী এর পর্যায়ে পৌছে যায়।
আল্লামা যফর আহমাদ ওসমানী (রহঃ) বলেন কোন যঈফ হাদীস যখন একাধিক সনদে বর্ণিত হয় যদিও তার ভিন্ন একটি মাত্র সনদ থাকে তবে সমষ্টিগত বিচারে হাদীসটি হাসানের মর্যাদায় পৌছে যায় এবং তা দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য হয়।
(যফর আহমাদ ওসমানী, কাওয়ায়িদ ফি উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৭৮)
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন,
ولا بدع في الاحتجاج بحديث له طريقان لو أنفرد كل منهما لم يكن حجة كما في المرسل إذا ورد من وجه آخر مسند
অর্থঃ যে হাদীসের দুটি সনদ রয়েছে তা দ্বারা দলীল পেশ করতে দোষণীয় কিছু নেই যদিও পৃথকভাবে প্রত্যেকটি সনদ দলীল হিসেবে পেশের যোগ্য না হয়। যেমন মুরসালের ক্ষেত্রে যখন তা ভিন্ন একটি সংযুক্ত সনদে বর্ণিত হয় (তখন তা গ্রহণযোগ্য)।
(বাদরীবুর রাবী, পৃষ্ঠা 91)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وكذا إذا كان ضعفها لإِرسال أو تدليس أو جهالة رجال زال بمجيئه من وجه آخر وكان دون الحسن لذاته
অর্থঃ যদি কোন হাদীসের দূর্বলতা এরসালের কারণে বা তাদলীসের কারণে বা রাবীর অবস্থা অজ্ঞতার কারণে হয় তবে ভিন্ন সনদে আসার দ্বারা উক্ত দূর্বলতা দূর হয়ে যাবে। তখন হাদীসটি (হাসান লি গাইরিহী হবে) হাসান লি জাতিহী
হবে না।
( তাদবীবুর রাবী, সুয়ূতী পৃষ্ঠা ১০৪)
হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
متى توبع السيّئُ الحفظ بمعتبر كان يكون فوقَه أو مثله لا دونه وكذا المختلط الذي لم يتميز و المستور و الاسناد المرسل و كذا المدلس إذا لم يعرف المحذوف من إسناده صار حديثهم حسناً لا لذاته
অর্থঃ যার স্মরণশক্তিতে দূর্বলতা রয়েছে এমন কোন রাবীর সমর্থনে যখন উল্লেখযোগ্য কোন হাদীস পাওয়া যায় আর তা তার সমকক্ষ বা উপরে হয় তার নিচে না হয় অথবা উক্ত সমর্থন এমন রাবীর পাওয়া যায় যে গোলতাল পাকিয়ে ফেলে, একটি থেকে অন্যটি আলাদা করতে পারে না অথবা উক্ত সমর্থন কোন অজানা রাবীর বা মুরসাল সনদের বা কোন মুদাল্লাস সনদের পাওয়া যায় তখন তাদের হাদীস (যঈফের সীমা অতিক্রম করে) হাসান হয়ে যাবে। তবে হাসান লিযাতিহী নয় বরং হাসান লি-গাইরিহী।
(ইবনে হাজার, শরহে নুখবাহ, পৃষ্ঠা ৭৪,৭৫)
আল্লামা শারানী (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল মুহাদ্দিসীন যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তার একাধিক সনদ পাওয়া যায়। তারা কখনও উক্ত হাদীসকে সহীহের সাথে সম্পৃক্ত করেন কখনও হাসানের সাথে।
( আল্লামা শা‘রানী, আল-মীযান ১/৬৮)
আল্লামা তাক্বী উদ্দীন সুবকী (রহঃ) ইবনুস সালাহ এর উদ্ধুতি দিয়ে বলেন, এক প্রকার যঈফ হাদীস যার দূর্বলতা বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তির দুর্বলতার কারণে হয়। অথচ বর্ণনাকারী সত্যবাদি এবং আমানতদার। আমরা যখন দেখব উল্লেখিত রাবী যা বর্ণনা করেছে তা ভিন্ন সনদে বর্ণিত রয়েছে তখন আমরা বুঝব তিনি সঠিক বর্ণনা করেছেন এবং উক্ত হাদীস আয়ত্ত করতে তার কোন ত্রুটি হয়নি। এরপর সুবকী (রহঃ) বলেন, কাজেই এই ধরণের কয়েকটি যঈফ হাদীস একত্রিত হয়ে যাওয়া শক্তিতে বৃদ্ধি করে। আর এর দ্বারা হাদীসটি হাসান বা সহীহ এর পর্যায়ে উন্নিত হয়।
( শিফাউস সাকাম, পৃষ্ঠা ১১)
হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) ইখতিসারু উলূমিল হাদীস নামক কিতাবের হাসান হাদীসের আলোচনায় বলেন,
قَالَ اَلشَّيْخُ أَبُو عَمْرٍو لَا يَلْزَمُ مِنْ وُرُودِ اَلْحَدِيثِ مِنْ طُرُقِ مُتَعَدِّدَةٍ أَنْ يَكُونَ حَسَنًا لِأَنَّ اَلضَّعْفَ يَتَفَاوَتُ فَمِنْهُ مَا لَا يَزُولُ وَمِنْهُ ضَعْفٌ يَزُولُ بِالْمُتَابَعَةِ كَمَا إِذَا كَانَ رَاوِيهِ سَيِّئَ اَلْحِفْظِ أَوْ رَوَى اَلْحَدِيثَ مُرْسَلًا فَإِنَّ اَلْمُتَابَعَةَ تَنْفَعُ حِينَئِذٍ وَيُرْفَعُ اَلْحَدِيثُ عَنْ حَضِيضِ اَلضَّعْفِ إِلَى أَوْجِ اَلْحُسْنِ أَوْ اَلصِّحَّةِ
অর্থঃ শায়েখ আবূ আমর উবনুস সলাহ বলেছেন কোন হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান হওয়া জরূরী নয়। কেননা দূর্বলতার একাধিক স্তর রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয় না। আর কতক দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। যেমন কোন দূর্বল হাদীসের বর্ণনাকারী যদি দূর্বল স্মৃতিশক্তির হয় অথবা হাদীসটি মুরসাল সনদে বর্ণিত হয় তখন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটিকে পাওয়া উল্লেখিত দূর্বল হাদীসকে উপকৃত করবে এবং হাদীসটি দূর্বলতার তলদেশ থেকে হাসান অথবা সহীহের শিখরে উঠে আসবে।
(ইখতিসারু উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৪৩)
সারকথা কোন হাদীসকে কোন একটি দূর্বল সনদে দেখেই তার বিষয় বস্তুকে দূবল বলে দেওয়া যাবে না। বরং উক্ত হাদীসটি একাধিক সনদে পাওয়া গেলে তা দূর্বলতা থেকে কেটে উঠে হাসান অথবা সহীহের পর্যায়ে পৌছে যায়। কেননা সেক্ষেত্রে একটি সনদ অপরটিকে মজবূত করে।
যেমন হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) সিজদায়ে সাহূতে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে কি না এ সংক্রান্ত
আলোচনার শেষে বলেন,
لكن قد ورد في التشهد في سجود السهو عن بن مسعود عند أبي داود والنسائي وعن المغيرة عند البيهقي وفي اسنادهما ضعف فقد يقال أن الأحاديث الثلاثة في التشهد باجتماعها ترتقي إلى درجة الحسن
অর্থঃ তবে সিজদায়ে সাহূতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া প্রসঙ্গে সুনানে নাসাঈ ও আবূ দাউদে ইবনে মাসউদ থেকে এবং সুনানে বাইহাক্বীতে মুগীরাহ থেকে রেওয়ায়েত রয়েছে। আর উভয় সনদে দুর্বলতা রয়েছে। তবে বলা হবে হাদীস তিনটি তাশাহহুদে সমষ্টিগতভাবে হাসানের স্তরে উন্নিত হয়।
(ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসক্বালানী ৩/৯৯)
তবে একথাও স্বতসিদ্ধ যে সর্ব প্রকার দূর্বলতা একাধিক সনদ প্রাপ্তির দ্বারা দূর হয় না। বরং যে যঈফ হাদীসের দুর্বলতা কোন বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তি জনিত ত্রুটি বা এ ধরণের অন্য কোন ত্রুটির কারণে হয় তা একাধিক সনদে পাওয়া যাওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। এবং হাদীসটি হাসানের স্তরে উন্নিত হয়। আর যদি দূর্বলতা কোন বর্ণনাকারীর মিথ্যার অপবাদ আরোপকৃত হওয়া বা এ ধরণের অন্য কোন সমস্যার কারণে হয় তবে সেই দুর্বলতা একাধিক সনদ দ্বারা দূর হবে না যেমনটি উলাময়ে কেরাম স্পষ্ট করে বলেছেন।
(উলূমিল হাদীস, হাফেয ইবনুস সলাহ পৃষ্ঠা ৩৭)
4। ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। আর ক্ষেত্র বিশেষে আহকামেও যঈফ হাদীসের উপর আমল করা হয়। যেমনটি প্রথম দুই শিরোনাম দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনাবী (রহঃ) বলেন, জেনে রাখা উচিত যে, সনদের প্রয়োজনীয়তার দিক দিয়ে আহকাম এবং গায়রে আহকাম (যা আহকামের সাথে সম্পৃক্ত নয়) উভয়টি বরাবর। যার কোন সনদ নেই তা ধর্তব্য নয়। তবে উভয়ের মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আর তা হল হালাল হারাম সংক্রান্ত আহকামের হাদীসে কড়াকড়ি করা হয়। এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যঈফ সনদকে কবুল করা হয় কিছু শর্ত সাপেক্ষে যেগুলো উলামায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন।
(আল-আজউবাতুল ফাযেলা, পৃষ্ঠা ৩৬)
ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন,
إذا روينا في الحلال والحرام شددنا وإذا روينا في الفضائل ونحوها تساهلنا
অর্থঃ যখন আমরা হালাল – হারামে রেওয়ায়েত করি (সনদে খুব) কড়াকড়ি করি। আর যখন ফযীলাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে রেওয়ায়েত করি শিথিলতা করি।
(হাফেয সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৯৮)
মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন, যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের নিকট।
তিনি অন্যত্র বলেন, ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীসের উপর সর্বসম্মতিক্রমে আমল করা হবে। এজন্যই আমাদের আয়িম্মায়ে কেরাম বলেছে, মাথা মাসেহ করা সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
( আলমাউজূআত, মোল্যা কারী, পৃঃ ৭৩)
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন, আমি ফাতোয়া দিয়েছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতাকে তার জন্য জীবিত করা হয়েছিল এই মর্মে বর্ণিত হাদীসটি জাল নয়। যেমনটি হাফেযে হাদীসের একটি দল দাবী করেছেন। বরং তা ঐ পর্যাযের যঈফ হাদীস যাতে ফাযায়েলের ক্ষেতে বর্ণনা করতে শিথিলতা করা হয়।
( আত তাযীম ওয়াল মিন্নাহ, সূয়ূতী, পৃষ্ঠা ২)
উক্ত হাদীসটির ব্যপারে তিনি অন্যত্র বলেন উলামায়ে কেরাম এক্ষেত্রে তার সনদের দুর্বলতাকে ক্ষমাযোগ্য মনে করেন এবং ফাযায়েল ও মর্যাদার অধ্যায়ে যা সহীহ নয় এমন হাদীসের আনয়ন গ্রহনযোগ্য মনে করেন।
(আল-মাকামাতুস সুনদুসিয়্যাহ, সূয়ূতী, পৃষ্ঠা ৫)
হাফেয ইরাক্বী (রহঃ) বলেন, যা জাল নয় তার সনদে শিথিলতা করা উলামায়ে কেরাম জায়েয বলেছেন এবং আহকাম ও আকায়েদ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা উল্লেখ করা ছাড়াই বর্ণনা করার অনুমতি দিয়েছেন। বরং ফাযায়েলে আমাল, ঘটনা, ওয়াজ ইত্যাদি বিষয়ের তারগীব ও তারহীবে অনুমতি দিয়েছেন। আর যদি তা হালাল – হারাম সম্বলিত আহকামে শরইয়্যাহ এর মধ্যে হয় অথবা আকায়েদে হয় যেমন আল্লাহ তাআলার ছিফাত এবং তার জন্য যা সম্ভব ও অসম্ভব ইত্যাদি তবে তারা তাতে শিথিলতা করেন না। ইমামদের মধ্য থেকে যারা এমনটি বলেছেন তাদের অন্যতম হলেন আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী, আহমাদ ইনবে হাম্বল এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক সহ অন্যান্যরা।
( শরহু আল ফিয়াতিল হাদীস, হাফেয ইরাক্বী, ২/২৯১)
আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন,
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام
অর্থঃ হাদীস বিশারদকারীদের নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ তা’য়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়।
(তাক্বরীবে নববী, পৃষ্ঠা ১৯৬)
তবে এ কথাও স্বতসিদ্ধ যে ফাযায়েলে আমালে সকল প্রকার দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এর একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে।
তবে এ কথাও স্বতসিদ্ধ যে ফাযায়েলে আমালে সকল প্রকার দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এর একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে।
উলামায়ে কেরাম যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত উল্লেখ করেছেন।
হাফেয সাখাবী (রহঃ) বলেন,
হাফেয সাখাবী (রহঃ) বলেন,
سمعت شيخنا ابن حجر مرارا يقول شرائط العمل بالحديث الضعيف ثلاثة
الأول متفق عليه وهوأن يكون الضعف غير شديد كحديث من انفرد من الكذابين والمتهمين ممن فحش غلطه
والثاني أن يكون مندرجا تحت أصل عام فيخرج ما يخترع بحيث لا يكون له أصل أصلا
والثالث أن لا يعتقد عند العمل ثبوته لئلا ينسب إلى النبي {صلى الله عليه وسلم} ما لم يقله
অর্থঃ আমি আমার শায়েখ ইবনে হাজার আসক্বালানীকে বহুবার বলতে শুনেছি যঈফ হাদীসের উপর আমলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।
এক. সর্বস্বীকৃত আর তা হল দুর্বলতা মারাত্মক পর্যায়ের হতে পারবে না। এর দ্বারা ঐ সকল (দুর্বল) রেওয়ায়েত বের হয়ে গেল যা একক ভাবে কোন মিথ্যুক, অপবাদ আরোপকৃত ব্যক্তি এবং যার ভুল বেশী হয় এমন ব্যক্তি রেওয়ায়েত করে।
দুই. সাধারণ কোন মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত হবে। এর ফলে ঐ সকল উদ্ভাবন বের হয়ে গেল যার শরীআতে কোন ভিত্তি নেই।
তিন. তার উপর আমল করার সময় (অকাট্যভাবে) তা প্রমানীত হওয়ার বিশ্বাস না রাখা। যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এমন কিছু সম্বন্ধ যুক্ত না করা হয় যা তিনি বলেন নি।
( আল কওলুল বদী, হাফেয সাখাবী পৃষ্ঠা ১৯৫)
উপরের আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে আহকাম ও আকায়েদ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। বিশেষভাবে ফাযায়েলের ক্ষেত্রে। বরং আহকামেও যঈফ হাদীসের উপর আমল করা হয় যখন তার মধ্যে সতর্কতা থাকে। আর পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে কোন যঈফ হাদীসকে উত্তত যখন কবুলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তখন তা সহীহ এর কাতারে চলে যায় এবং তার উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
কিন্তু আফসোসের বিষয় আমাদের মধ্যে এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ যারা স্বাধীনচেতা, ব্যক্তিগতভাবে লেখাপড়া করেই দ্বীন পেতে চায় এবং দ্বীনের কর্ণধার হতে চায় তারা যখন কোন হাদীসের ব্যপারে যঈফ শব্দটি শুনতে পায়, তাদের চেহারা পাল্টে যায়। তারা মনে করে যঈফ হাদীসকে সর্বদা ছেড়ে দেওয়াই অটল একটি সিদ্ধান্ত। অথচ এটা পূর্ববতি এবং পরবর্তি সকল উলামা এবং মুহাদ্দিসীনদের মূলনীতি পরিপন্থি। এক্ষেত্রে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) এর একটি উক্তি স্বর্ণাক্ষরে লিখার মত যা তার অন্যতম যোগ্য শাগরেদ আল্লামা ইউসূফ বানূরী (রহঃ) নকল করেছেন। তিনি বলতেন “সনদের প্রয়োজনীয়তা এ জন্য যে যাতে দ্বীনের মধ্যে এমন জিনিস প্রবেশ করতে না পারে যা দ্বীনের অন্তভুক্ত নয়। এজন্য না যে, যারা সনদ নিয়ে গবেষণা করেন তাদের কর্মে প্রমানীত বিষয় দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়”।
অর্থাৎ সনদ নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা আমাদের পূর্ববর্তিগণ এজন্য করেছেন যাতে বানোয়াট জিনিস দ্বীনে প্রবেশ না করতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য এটা ছিল না যে, দ্বীনী বিষয়কে দ্বীন থেকে বের করে দেওয়া।
অর্থাৎ সনদ নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা আমাদের পূর্ববর্তিগণ এজন্য করেছেন যাতে বানোয়াট জিনিস দ্বীনে প্রবেশ না করতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য এটা ছিল না যে, দ্বীনী বিষয়কে দ্বীন থেকে বের করে দেওয়া।