নারী অধিকার: আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান রাহ.


বিশিষ্ট তাবেয়ী আমরা বিনতে আবদুর রহমান। লালিত পালিত হন আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.-এর কোলে। আম্মাজান আয়েশা রা. আরো নবীপত্নীগণের ন্যায় নিঃসন্তান ছিলেন। তবে তিনি কিছু শিশুদের লালন পালন করতেন। যেমন তাঁরই ভাগ্নে উরওয়া, ভাতিজা কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ। এঁদের মধ্যে একজন হলেন আমরা বিনতে আবদুর রহমান। আম্মাজান আয়েশা প্রত্যেককে এমনভাবে গড়ে তোলেন যে, পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকে আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগী, দুনিয়া বিমুখতা, দ্বীনী জযবা ইত্যাদি গুণাবলিতে এবং কুরআন-হাদীস, ফিকহ তথা ইলমী যোগ্যতায়ও যুগশ্রেষ্ঠ মনীষীতে পরিণত হন।
খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল  আযীয রাহ. উরওয়া সম্পর্কে বলেন,
ما اجد اعلم من عروة بن الزبير وما اعلمه يعلم شيا اجهله                              
উরওয়া অপেক্ষা (তাঁর যুগে) অধিক জ্ঞানী  কেউ নেই। আর আমি মনে করি না যে, দ্বীন সম্পর্কে উরওয়ার কোনো বিষয় অজানা আছে।
আবুয যিনাদ উরওয়া সম্পর্কে বলেন,


فقهاء المدينة أربعة: سعيد وعروة وقبيصة وعبد الملك بن مروان
মদীনার ফকীহ চারজন: এক.সাঈদ বনে মুসায়িব দু. উরওয়া তিন. কবিসা চার. আব্দুল মালেক বনে মারওয়ান।
কাসেম সম্পর্কে বিশিষ্ট ইমাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব রাহ. বলেন, তিনি এ উম্মতের ফকীহ। ইজলী বলেন, ইনি শ্রেষ্ঠ তাবেয়ীদের একজন।
এদের ন্যায় হযরত আমরাকেও আম্মাজান আয়েশা ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলেন। হতে হতে তিনিও এদের মত যুগশ্রেষ্ঠ আবেদ, যাহেদ, দুনিয়াবিমুখ, ইবাদতগুযার, মুফতী, মুহাদ্দিসে পরিণত হন।
ইমাম যাহাবী রাহ. তাঁর সম্পর্কে লেখেন,
كانت عالمة فقيهة حجة كثيرة العلم
 তিনি আলেমা, ফকীহা, হাদীসের বড় ইমাম ও অনেক ইলমের অধিকারী ছিলেন।
কাসেম ইবনে মুহাম্মাদের কথা একটু পূর্বেই উল্লেখ হয়েছে। প্রসিদ্ধ হাদীস সংকলক ইবনে শিহাব যুহরী বলেন,
قال لي يا غلام اراك تحرص علي طلب العلم أفلا ادلك علي وعائة قلت بلي قال عليك بعمرة فانها كانت في حجر عائشة قال فاتيتها فوجدتها بحرا لا ينزف.
একদিন কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ আমাকে বললেন, বৎস! আমি তোমাকে ইলম অন্বেষণে বেশ আগ্রহী দেখছি। আমি কি তোমাকে ইলমের ভান্ডারের সন্ধান দিব? আমি বললাম অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমরা-এর নিকট যাও। কেননা, সে আয়েশার কোলে গড়ে উঠেছে। যুহরী বলেন, অতপর আমি তাঁর নিকট আসলাম এবং তার কাছ থেকে শিখতে থাকলাম। শিখতে শিখতে তাকে এমন অথৈ সমুদ্র পেলাম, যা নিঃশেষ হবার নয়।
হযরত আমরাও ইলম অন্বেষণে এমন মনযোগ ও শ্রম ব্যয় করেন যে, হযরত আয়েশা রা. থেকে যা শুনতেন সবই মুখস্থ করে নিতেন। হযরত আয়েশার হাদীস, ফতোয়া, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র সম্পর্কে যে কয়জন সবচে বেশি অবগত ছিলেন তিনি তাদের উল্লেখযোগ্য। হযরত আয়েশার হাদীসের পরিধি কত বিস্তৃত তা বলাই বাহুল্য। তাঁর ইলমের গভীরতা ও ব্যপ্তি- বলার অপেক্ষা রাখে না। হযরত আমরা রাহ. আয়েশা রা.-এর এ বিশাল হাদীস-ভাণ্ডার আয়ত্ত করে নেন। খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. একদিন বলেন, আয়েশা রা.-এর হাদীস সম্পর্কে আমরা অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী আর কেউ বেঁচে নেই। সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন,
اعلم الناس بحديث عائشة ثلاثة: القاسم بن محمد بن أبي بكر الصديق وعروة بن الزبير وعمرة بنت عبد الرحمن
 আয়েশা রা.-এর হাদীস সম্পর্কে তিন জন বেশি জ্ঞাত। আমরা, কাসেম, উরওয়া।
খলিফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. যখন হাদীস সংকলনে ব্রতী হন এবং এর জন্য ইমাম যুহরী, আবু বকর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাযমকে নিযুক্ত করেন, তখন তিনি আবু বকরকে সবিশেষ নির্দেশ দেন যে, তুমি নবীজীর হাদীসের পাশাপাশি উমর রা.-এর বাণীও সংকলন করবে। সাথে সাথে আমরা-এর হাদীস ও ইলম লিপিবদ্ধ করবে।
ইলম অন্বেষণের পর পরবর্তীতে এই মহীয়সী নারী ইলম প্রসারেও ব্রতী হন। তাঁর হাতে অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস গড়ে ওঠে। অনেক ছাত্র তার কাছ থেকে হাদীস, ফিকহ তথা দ্বীন শেখেন।


তার ভাতিজা হারেছা, তার ভাই মুহাম্মাদ, তার ভাগ্নে আবু বকর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাযম, আরেক ভাতিজা ইয়াহইয়া ইবনে আব্দুল্লাহ, ভাগ্নের ঘরের নাতী আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর, তার ছেলে আবুর রিজাল, তার নাতী মালিক, মদীনার শ্রেষ্ঠ মুফতী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আলআনসারী ও সুলাইমান ইবনে ইয়াসার, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আম্র ইবনে দীনার, হাদীস সংকলক ইবনে শিহাব যুহরী, রায়েতা, ফাতেমাসহ অনেক বিদ্বান তাঁর হাতে গড়ে উঠেন এবং তার কাছ থেকে হাদীস শেখেন।
হিজরী ৯৭ কিংবা ৯৮ সনে এ বিদুষী নারী তাঁর কর্মমুখর জীবন সমাপ্ত করে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন।
তথ্যসূত্র : তাহযীবুল কামাল; সিয়ারু আলামিন নুবালা; তাবাকাতে ইবনে সাআদ ইত্যাদি।

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন