এক ভিডিও তে সজল রোশানের পাঁচটি মিথ্যাচার

সজল রোশান বলেছেন "সবার আগে সহীহ বুখারী ও মুসলিম ৷" তার কথার অর্থ হলো, অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের পূর্বে সহীহ বুখারী ও মুসলিম তারজীহ বা প্রাধান্য পাবে ৷ তিনি বুখারী মুসলিমের হাদীসকে সর্বাবস্থায় অগ্রগণ্য বলে মনে করেন। অথচ অধিকতর সহীহ হওয়া বা বুখারী মুসলিমে থাকা  অগ্রগণ্যতার কারণসমূহের মধ্য হতে একটি কারণ মাত্র। অগ্রগণ্যতার আরও অনেক কারণ আছে।


ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ ইবনে মূসা আল হাযেমী রাহ. তাঁর ‘আলই‘তিবার ফিন নাসিখি ওয়াল মানসূখি মিনাল আছার’ কিতাবে (খ- ১, পৃষ্ঠা ১৩২-১৬০) পঞ্চাশটি উজূহুত তারজীহ (অগ্রগণ্যতার কারণ) উল্লেখ করেছেন, যেগুলোর দ্বারা পরস্পরবিরোধী দুই হাদীসের মধ্যে অগ্রগণ্য নির্ধারণে সহযোগিতা নেওয়া হয়।


এই পঞ্চাশটি কারণের মধ্য হতে একটি কারণও এই বলেননি যে, পরস্পরবিরোধী দুই হাদীসের মধ্যে একটি বুখারী বা মুসলিমে আর অন্যটি অন্য কোনো হাদীসের কিতাবে থাকলে বুখারী বা মুসলিমের হাদীসটি অগ্রগণ্য হবে। তিনি পঞ্চাশটি উজূহুত তারজীহ উল্লেখ করার পর বলেছেন, ‘এই পঞ্চাশটি কারণ ছাড়াও অগ্রগণ্যতার আরও অনেক কারণ আছে, এই সংক্ষিপ্ত কিতাবের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমি সেগুলোর উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম।’


হাফেজ যাইনুদ্দীন আলইরাকী রাহ. (৭২৫-৮০৬ হি.) মুকাদ্দিমাতু ইবনিস সালাহর উপর তাঁর লিখিত টীকা-গ্রন্থ ‘আত তাক্ঈদ ওয়াল ঈজাহ শারহু মুকাদ্দিমাতি ইবনিস সালাহ’-এ (খ- ১, পৃষ্ঠা ২৮৯) হাযেমী রাহ.-এর উক্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর বলেছেন, উজূহুত তারজীহ বা অগ্রগণ্যতার কারণসমূহের সংখ্যা একশতেরও বেশি। এরপর তিনি ঐ পঞ্চাশটি কারণ সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন অতপর অবশিষ্ট কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি ১১০টি উজূহুত তারজীহ বা অগ্রগণ্যতার কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অগ্রগণ্যতার কারণ হিসাবে বুখারী মুসলিমে কোনো হাদীস থাকাকে একটি কারণ হিসাবে যখন উল্লেখ করেছেন তখন সেই কারণকে তিনি ১০২ নম্বরে ফেলেছেন। তাহলে বুঝুন ব্যাপারটা!



বিশিষ্ট আলেম শাওকানী রাহ. তাঁর ‘ইরশাদুল ফুহূল’ গ্রন্থে অগ্রগণ্যতার ১৬০টি কারণ উল্লেখ করেছেন। সনদগত বিচারে অগ্রগণ্যতার ৪২টি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্য হতে বুখারী মুসলিমের হাদীসকে অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের হাদীসের উপর অগ্রগণ্যতার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন ৪১ নম্বরে ।

তো সনদগত বিচার ছাড়াও অন্যান্য বিচারে অগ্রগণ্যতার কারণসমূহকে উপেক্ষা করে এবং সনদগত বিচারে অগ্রগণ্যতার কারণসমূহের মধ্য হতে সর্বশেষ কারণটিকে প্রথমেই বিবেচনায় নিয়ে এই কথা বলে দেওয়া যে, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের বিরোধী বিধায় শায বা প্রত্যাখ্যাত বা তা গ্রহণযোগ্য নয় কিরূপ অর্বাচিনতা ও হঠকারিতা তা আপনি একটু চিন্তা করে দেখবেন কি?


দ্বিতীয়ত সজল রোশান দাবী করেছেন, সহীহ বুখারী ও মুসলিম এ দুটি সহীহ অনলি হাদীসের সংকলন ৷ তার কথার অর্থ হলো, সব সহীহ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে আছে ৷ অন্য কোন কিতাবে সহীহ হাদীস নেই ৷ এটি একটি চরম মিথ্যা কথা ৷ কারণ, সব সহীহ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে নেই


তিনি সম্ভবত এই ধারণা পোষণ করেন যে, বুখারী ও মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো গ্রন্থে সহীহ হাদীস নেই। থাকলেও তা বুখারী ও মুসলিমের সহীহ হাদীসের সমপর্যায়ের সহীহ নয়। এই কারণে কোনো বিষয়ে হাদীস পেশ করা হলে বলে, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমে নেই, বুখারী মুসলিমের হাদীস দেখান। কিংবা বলে, এর বিপরীতে বুখারী মুসলিমে যে হাদীস আছে তা অধিকতর সহীহ।


এটা উসূলুল ফিকহ ও উসূলুল হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাজনিত কথা। এইসব আল্লাহর বান্দাহরা যদি এ সম্পর্কে খোদ বুখারী ও মুসলিমের বক্তব্য কী তা জানার চেষ্টা করত তাহলে এইরূপ কথা বলত না। কারণ খোদ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রাহ. পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, তাঁরা তাঁদের কিতাবুস সহীহতে সব সহীহ হাদীস সংকলন করেননি। তার ইচ্ছাও করেননি। কথাটি উভয় ইমাম থেকে সহীহ সনদে প্রমাণিত।


ইমাম বুখারী রাহ. বলেছেন,


مَا أَدْخَلْتُ فِى كِتابِيْ “اَلْجَامِعِ” إِلّا مَا صَح وَتَرَكْتُ مِنَ الصِّحَاحِ لِحَالِ الطُّوْلِ.

অনুবাদঃ আমি আমার কিতাবুল জামি‘তে শুধু সহীহ হাদীস এনেছি। তবে গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় (বহু) সহীহ হাদীস আনা থেকে বিরত থেকেছি। [ইবনে আদী, আল কামিল, খ- ১, পৃষ্ঠা ২২৬; খতীব বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ, খ- ২, পৃষ্ঠা ৮-৯]


‘শুরূতুল আইম্মাতিল খামছা’য় (পৃষ্ঠা ১৬০-১৬৩) ইমাম ইসমাঈলীর সূত্রে ইমাম বুখারীর বক্তব্যের আরবী পাঠ এইরূপ :


لَمْ أُخَرِّجْ فِيْ هَذَا الْكِتَابِ إِلّا صَحِيْحًا وَمَاتَرَكْتُ مِنَ الصّحِيْحِ أَكْثَرُ

অনুবাদঃ আমি এই কিতাবে শুধু সহীহ হাদীস এনেছি। আর যে সহীহ হাদীস আনিনি তার সংখ্যা বেশি।


বুঝা গেল, ইমাম বুখারী মনস্থ করেছিলেন, তাঁর কিতাবে তিনি যা আনবেন তা হবে সহীহ হাদীস। কিন্তু তিনি এই মনস্থ করেননি যে, সব সহীহ হাদীস তিনি তাঁর কিতাবে আনবেন। সব সহীহ হাদীস আনার ইচ্ছাও করেননি, আনেনওনি। অনেক সহীহ হাদীস তাঁর কিতাবের বাইরে রয়ে গেছে।



ইমাম মুসলিমের ব্যাপারটিও একই রকম। তিনিও তাঁর কিতাবে সব সহীহ হাদীস আনার ইচ্ছাও করেননি, আনেনওনি। খতীব বাগদাদী রাহ. ‘তারীখে বাগদাদে’ (খ- ১২, পৃষ্ঠা ২৭৩)

তরজমা : আহমদ ইবনে ঈসা আততুসতুরী) এবং হাযেমী ‘শুরূতুল আইম্মাতিল খামসা’য় (পৃষ্ঠা ১৮৫) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম আবূ যুর‘আ রাযী রাহ. (ইমাম মুসলিম রাহ.-এর উস্তায) একবার সহীহ মুসলিম সম্পর্কে বললেন, এর দ্বারা তো বিদ‘আতপন্থীদের জন্য পথ খুলে দেওয়া হল। তাদের সামনে যখন কোনো হাদীস দ্বারা দলীল দেওয়া হবে তখন তারা বলবে, এ তো কিতাবুস সহীহতে নেই।


আবূ যুর‘আ রাযী রাহ. বুঝাতে চাচ্ছেন যে, সব সহীহ হাদীস তো সহীহ মুসলিমে সংকলিত হয়নি। কাজেই কিতাবের নামের সাথে যখন সহীহ কথাটি যুক্ত করা হয়েছে তখন এর দ্বারা পরবর্তীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং মানুষ সহীহ মুসলিমে কোনো হাদীস না পেলে সেটা সহীহ হওয়া সত্ত্বেও সেটাকে গ্রহণ করতে চাইবে না- শুধু এই অজুহাতে যে, হাদীসটি সহীহ মুসলিমে নেই। আবূ যুর‘আ রাযীকে আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়র দান করুন। তিনি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। না হলে আমরাও হয়তো সজল রোশান সাহেবদের মত তার আশংকা অনুযায়ী বিদআতপন্থী হয়ে যেতাম।


আরও দেখুন, ইমাম ইবনে ওয়ারা রাহ.ও সরাসরি ইমাম মুসলিমকে সম্বোধন করে এই আশংকা ব্যক্ত করেছিলেন। তখন ইমাম মুসলিম রাহ. বলেছিলেন, ‘আমি এই কিতাব সংকলন করেছি এবং বলেছি, এই হাদীসগুলো সহীহ। কিন্তু আমি তো বলিনি যে, এ কিতাবে যে হাদীস নেই তা যঈফ।’


অতএব বোঝা গেল যে, অন্যান্য গ্রন্থেও সহীহ হাদীস আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।



তৃতীয়ত, তিনি বলেন মুয়াত্তায় মালেকে বিদায় হজ্জের ভাষণ মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে ৷ আর মুরসাল হাদীস পরিত্যাজ্য ৷ এটা তিনি মিথ্যা বলেছেন ৷ এবার আমি দেখাব মুরসাল হাদীস দলীল যোগ্য প্রমাণযোগ্য ৷ পরিত্যাজ্য নয় ৷


          মাযহাবের ইমামগণের মতামত

ইমাম মালিক এবং মালিকি মাযহাবের সকল প্রসিদ্ধ ফকীহগণের মত হল, নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির মুরসাল হাদীস শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং এর উপর আমল করা যাবে। তাদের কেউ কেউ আবার মুরসাল হাদীসকে মুসনাদ হাদীসের চেয়ে উত্তমও বলেছেন।

[তাজরীদ আল তামহীদ লিমা ফি আল মুয়াত্তা মিনাল আসানিদ, ইউসুফ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল বার, কায়রো, ১৩৫০, ১:২]


ইমাম আবু হানিফাও ইমাম মালিকের মতই মুরসাল হাদীসকে সহীহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, চাই এর সমর্থনে অন্য কোন সহীহ হাদীস থাকুক বা না থাকুক।


ইমাম শাফিঈ মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তাঁর কিতাব " আল রিসালাহ " তে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং কিছু শর্ত দিয়েছেন। সেগুলো হলঃ


ক) এর সমর্থনে অন্য সনদে মুসনাদ হাদীস থাকতে হবে অথবা মুরসাল হাদীসের বক্তব্যের সাথে অধিকাংশ স্কলারদের মতের মিল থাকতে হবে।

খ) আর যে রাবী মুরসাল হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাকে উত্তম তাবেঈ হতে হবে।

[ আল রিসালাহ, ইমাম শাফী, আহমদ শাখির এর সংস্করণ, কায়রো, ১৩৫৮/১৯৪০, পৃঃ৪৬১-৪৭০]


ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) মুরসাল হাদীস গ্রহণ করেছেন যদি তার বিপরীতে কোন কিছুই পাওয়া না যায় এবং তিনি কিয়াসের চেয়ে মুরসাল হাদীসকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।[ইলাম আল মুয়াক্কিন, ইবনুল কায়্যিম, দ্বিতীয় সংস্করণ, দারুল ফিকর, বায়রুত, ১৩৯৭/১৯৭৭, ১:৩১]


আল্লামা ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ


মুরসাল হাদীছকে ইমাম মালেক (রহঃ) ও ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সহীহ – এর শ্রেণীভুক্ত করেছেন। [তাকরীবু লিন নববীঃ খ-১, পৃ-১৯৮]


আল্লামা সাইফুদ্দীন আল আমেদী (রহঃ) বলেনঃ


মুরসাল হাদীছ এর গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইমামগণ মতবিরোধ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), ইমাম মালিক (রহঃ) ও ইমাম আহমদ (রহঃ) এর প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী উক্ত হাদীছ শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। [আল আহকাম ফি উসূলিল আহকামঃ খ-২, পৃ-১৭৭]


    আবু দাউদ (রহঃ)


আবু দাউদ (রহঃ) এর মতেও মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য, শর্ত হল, ঐ বিষয়ে কোন মুসনাদ হাদীস পাওয়া যাবে না, আর যদি যাই তাহলে তা মুরসাল হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।

[ সুরুত আল আইম্মাহ আল খামসাহ, আল হাজিমি, আল কাউসারী সংস্করণ, কায়রো, পৃ - ৪৫ ]


খতীব আল বাগদাদী (রহঃ)



খতীব আল বাগদাদী (রহঃ)ও মুরসাল হাদীসকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন যদি তা উত্তম তাবেঈ থেকে বর্ণিত হয় অথবা তার সমর্থনে মুসনাদ হাদীস পাওয়া যায়। [আল কিফায়া ফি ইলম আল রিওয়ায়াহ, খতীব বাগদাদী, হায়দারাবাদ, ১৩৫৭, পৃ - ৩৮৭]


ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা


ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী থেকে ইরসাল করা হলে সেই মুরসাল হাদীসকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।


[ মিনহাজ আল সুন্নাহ আন নববীয়াহ ফী নকদ কালাম আল শিয়া ওয়াল ক্বাদারিয়াহ, ইবনে তাইমিয়্যা, মাকতাবাহ আল আমিরীয়াহ, বুলাক, ১৩২২, ৪:১১৭]


উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) মুরসাল হাদীসকে গ্রহণযোগ্য ও সহীহ বলে রায় দিয়েছেন। আর ইমাম শাফিঈ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত দিয়েছেন। 




সজল রোশান বলেছেন, দুটি হাদীস পরস্পর বিপরীত হলে দুটিই বাতিল ৷ এটিও চরম মিথ্যাচার ৷ দেখুন পরস্পর বিরোধী বিশুদ্ধ হাদিসের ক্ষেত্রে করণীয়


এক. যদি উক্ত ধরনের উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা যায়, তাহলে তা করে উভয় হাদীসের উপর আমল করতে হবে। যেমন আমরা ‘রিবাল ফায্‌ল’ ও 'রিবান নাসিয়াহ' এর ক্ষেত্রে আমরা দেখি,

রাসূল (স) বলেন, ‘সুদ শুধুমাত্র ‘রিবান-নাসীআহ' এর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ’। [বুখারী]

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উবাদাহ (রা) এর হাদীছ প্রমাণ করে যে, ‘রিবাল ফায্‌ল’ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা রাসূল (স) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশী দিল বা নিল, সে সুদী কারবার করল’। [মুসলিম, ‘বরগা চাষ’ অধ্যায়, হা/১৫৮৮]

এক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী এই দুইটি সহিহ হাদিসের জন্য আমাদের ভূমিকা কি হবে?

আমাদের ভূমিকা হবে, রিবান নাসিহার হাদীছটাকে আমরা এমন অর্থে গ্রহণ করব, যাতে ‘রিবাল ফায্‌ল’- হাদীছের সাথে এই হাদীছও মিলে যায়। সেজন্য আমরা বলব: মারাত্মক সুদ হচ্ছে, ‘রিবান নাসীআহ’- যার কারবার জাহেলীযুগের লোকেরা করত এবং যে সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেওনা’। [৩/১৩০]। তবে ‘রিবাল ফায্‌ল’ তদ্রুপ মারাত্মক নয়। সে কারণে ইবনুল ক্বাইয়িম রহেমাহুল্লাহ তাঁর ‘এ‘লামুল মুওয়াক্কেঈন’-এ বলেন, মূল সুদের অন্যতম মাধ্যম হওয়ার কারণে ‘রিবাল ফায্ল’-কে হারাম করা হয়েছে। সেটাই যে মূল সুদ, সে হিসাবে নয়।



দুই.আর যদি উভয়ের মাঝে কোন সামঞ্জস্য বিধান করা না যায়, তা হলে দেখতে হবে যে, এর মধ্যকার কোন একটি অপরটির জন্য নাসিখ তথা রহিতকারী কি না। তা জানা গেলে রহিতকারী হাদীসকে অগ্রাধিকার দিয়ে সেটির উপর আমল করতে হবে এবঙ মানসূখ তথা রহিতকৃত হাদীসকে বাদ দিতে হবে।




তিন. তা জানা সম্ভব না হলে একটিকে অপরটির উপর অগ্রাধিকার দানের নিয়মানুযায়ী একটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। [এটা আরেক অধ্যায়, আলিমদের থেকে জেনে নেবেন]




চার.তাও যদি সম্ভব না হয়, তা হলে কোন একটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার মত কোন কারণ না পাওয়া পর্যন্ত উভয় হাদীসের উপর ‘আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।


সারকথা হলো, কোন বিষয়ে যদি পরষ্পর বিপরীতমুখী বিশুদ্ধ হাদীস থাকে অথবা একটি হাদীস থেকে দু’রকমের অর্থ গ্রহণের সম্ভাব্যতা থাকে, আর সে কারণে যদি তা নিয়ে ইমামগণের ইজতেহাদের মাঝেও বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এবং পরবর্তী আলেমগণও যদি কোন ভাবেই সে ব্যপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে দু’রকম আমল করেন, আর তাঁদের অনুসরণে আমরাও সে রকম করি, তা হলে আশা করি এতে তাঁরা এবং আমরা সবাই আল্লাহর কাছে উপযুক্ত ওজর পেশ করতে পারবো।

কিন্তু যে বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীতে অপর কোন বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়া যায় না এবং এর বাহ্যিক অর্থেরও ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা করা যায়না, এমন হাদীসের উপর আমল করার ক্ষেত্রে কারো ভিন্ন মত পোষণ করার কোন এখতিয়ার থাকে না। অনুরূপভাবে একটি কর্ম যদি সাহাবীদের যুগ থেকে দু’ভাবে করা জায়েয প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে একটিকে গ্রহণ করে অপরটিকে না জায়েয বা মাকরূহ বলারও কারো কোন অধিকার নেই।

এখন যে বিষয়টা থেকে যায় তা হল সহীহ নির্নয়ে মতপার্থক্য। এক্ষেত্রে যারা সহীহ যয়ীফ নির্ধারণ করতে পারেন তারা তাদের মত করে নির্ণয় করবেন। সাধারণ মানুষ যখন আলিমদের মধ্যে সহীহ যয়ীফ নির্ণয়ে পার্থক্য দেখবে তখন সে তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য আলিমের মতামত অনুসরণ করবে এবং অন্য মগতের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকবে।


  মুসতাদরাকে হাকেম ও তার রাবীগণ কি অক্ষাত?


তিনি মুসতাদরাকে হাকেম কে অক্ষাত কিতাব ও বিদায় হজ্জের ভাষণ বর্ণনাকারী রাবীদেরকে কুক্ষাত বলেছেন ৷ এটাও চরম পর্যায়ের মিথ্যাচার ৷ আমি পূর্বেই বলেছি হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার মানদন্ড কোন কিতাব নয় বরং সনদ ৷ হাদীস যেই কিতাবেই থাকুক না কেন সনদ সহীহ হলে হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে ৷ দ্বিতীয়ত বিদায় হজ্জের ভাষণের রাবীগণ কুক্ষাত নয় ৷ তার বর্ণনাকারী দুই জন ৷ এক, সাওর বিন যায়েদ ৷ দুই, ইবনে শিহাব যুহরী ৷ উভয়ই বর্ণনা করেছেন ইকরিমা রাঃ থেকে আর তিনি ইবনে আব্বাস রাঃ থেক ৷ দেখুন সাওর বিন যায়েদ পরিচিত ও ছিকা রাবী ৷ তার বর্ণাকৃত হাদীস গ্রহণযোগ্য ৷ তার থেকে ইমাম মালেকও হাদীস বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ বলেছেন, তার হাদীস গ্রহণযোগ্য ৷ ইমাম যুহরীর কথা কী বলবো ৷ তিনি তো তিনিই ৷

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন