জিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আমল

কুরআন সুন্নাহয় রয়েছে জিলহজ্ব মাসের বিশেষ ফযিলত৷ কিন্তু আমরা ওনেকেই তা জানি না৷ বিধায় আমলও করা হয় না৷ এ প্রবন্ধে জিলহজ্ব মাসে ৬ টি আমল নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে৷ যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো,


জিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আমল

১৷ তাকবীরে তাশরীক 


তালবিয়া উচ্চারিত হয় হাজ্বীগণের মুখে৷ শুধু মক্কায়। কুরবানীদাতার মুখে উচ্চারিত হয় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। কিন্তু তাকবীরে তাশরীক এমন এক যিকির, যা উচ্চারিত হয় মক্কাসহ পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ। এ যিকির উচ্চারিত হয়, প্রতিটি মসজিদে, প্রতিটি মুসলিমের ঘরে৷ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের শেষে৷  নারী-পুরুষ সকলের মুখে। তাকবীরে তাশরীকের পুরো বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহীদ ও আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসা৷ তাকবিরে তাশরিক হলো,

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الْحَمْدُ

তাকবিরে তাশরিক কখন পড়তে হবে?



৯ ই যিলহজ্ব ফজর হতে ১৩ ই যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্তের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়া হোক বা একাকি৷ পুরুষ হোক বা নারী৷ মুকীম বা মুসাফির৷ সকলের উপর ওয়াজিব। এমনকি ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে এবং ওই কাযা এই দিনগুলোর ভিতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। পুরুষগণ তাকবীর বলবে উচ্চ আওয়াজে আর নারীগণ নিন্মস্বরে।

আরো পড়ুন: বিতর নামায আদায়ের পদ্ধতি



২৷ গুনাহের মাধ্যমে এ মাসের সম্মান ও মর্যাদা বিনষ্ট না করা৷


আমরা তোমুমিন ও মুসলমান৷ আর মুমিনের সিফাত হলো, আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সময় ও সুযোগকে গনীমত মনে করে কাজে লাগানো। এসকল ফযীলতপূর্ণ মওসুমে নেক আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার আমল নামার  খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারো দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক আমলের তো তাওফীক হল না; কিন্তু গুনাহের কালিমায় কলুষিত হল আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়।  কবি শেখ সাদী  বড় সুন্দর বলেছেন,

قوت نيکی نداری بد مکن

অর্থাৎ নেক আমল করতে যদি নাও পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।

নেক আমল যতটুকু করতে পারি আর না পারি; গুনাহ ও পাপাচারে মাধ্যমে যেন এ সম্মানিত দিনগুলোর অসম্মান না করি। এর মাধ্যমে তো আমি নিজেকেই অসম্মানিত করছি।

ইবনে রজব হাম্বলী রাহিমাহুল্লাহ লাতাইফুল মাআরিফে যিলহজ্বের আলোচনায় বলেন,

احذروا المعاصي فإنها تحرم المغفرة في مواسم الرحمة.

অর্থাৎ রহমতের মওসুমসমূহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে। 
(লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ৩৭৯)

আর যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন সে আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ

(সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। (সূরা তাওবা (৯) : ৩৬)

আল্লাহর নাফরমানী নিজের উপর সবচেয়ে বড় যুলুম। কারণ, এর ক্ষতি তো নিজের উপরই আপতিত হবে। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সাথে সাথে নেক আমলেও যত্নবান হওয়া উচিৎ।


৩৷ যিলহজ্বের প্রথম নয় দিন রোযা রাখি


অধিকাংশ ফকীহগণ এই নয় দিন রোযা রাখা উত্তম বলেছেন। কারো পক্ষে সম্ভব হলে সে পুরো নয় দিনই রোযা রাখল। কারণ, যিলহজ্বের পুরো দশকের আমলই আল্লাহর কাছে প্রিয়। এ দশককে আমলে প্রাণবন্ত রাখার জন্য রোযার বিকল্প কোনো আমল নেই। কারণ, রোযা আল্লাহর কাছে অত্যধিক প্রিয় আমল। সুতরাং আমাদের যাদের জন্য সম্ভব যিলহজ্বের প্রথম দশক তথা নয় যিলহজ্ব পর্যন্ত রোযা রাখতে চেষ্টা করি। হাদীস শরীফে এসেছে-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصُومُ تِسْعَ ذِي الْحِجّةِ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্বের নয়টি দিবস রোযা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭)

হাফসা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন,

أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ

অর্থাৎ চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৪২২)

আরো পড়ুন: সহীহ হাদীস কি বুখারী মুসলিমে সীমাবদ্ধ?

৪৷ নয় যিলহজ্ব রোযা রাখা



কারো পক্ষে যদি পূর্ণ নয় দিন রোযা রাখা সম্ভব হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পুরো নয় দিন যদি সম্ভব না হয়, তাহলে নয় যিলহজ্বের রোযার ফযীলত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। কারণ, এ দিনের রোযার ফযীলত সম্পর্কে আবু কাতাদা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ، وَالسّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ

অর্থাৎ আরাফার দিনের তথা নয় যিলহজ্বের রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, এর দ্বারা আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২)


৫৷ যিলহজ্ব শুরু হলে নখ-চুল না কাটি


 যিলহজ্বের প্রথম দশ দিনে নখ-চুল না কেটে আমরাও সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারি হাজ্বীদের সাথে এবং অর্জন করতে পারি বিশেষ সওয়াব ও ফযীলত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত উম্মে সালামা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

 إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ

অর্থাৎ যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩)


উল্লিখিত হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছন, কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটা মুস্তাহাব। তাই যিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহজ্বের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা  না হয়ে যায়, যা সুন্নতের খেলাফ।


যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না? এ ব্যাপারে ফুকাহাদের মতবিরোধ রয়েছে৷ কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম কেবলমাত্র কুরবানিকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলীল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেছেন, কুরবানি যারা করবে না তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাযিআল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত, নবী  এক ব্যক্তিকে বললেন,

 أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ، فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ

অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে৷
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫)

উক্ত হাদীসে যেহেতু কুরবানির দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে  তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহমাতুল্লাহি অালাইহি বলেছেন,

أَنّ ابْنَ عُمَرَ، مَرّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِي أَيّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ: لَوْ أَخّرْتِيهِ إِلَى يَوْمِ النّحْرِ كَانَ أَحْسَنَ.

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু এক নারীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তাহলে বড় ভাল হত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০)

৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল, মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন,

 كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.

অর্থাৎ ইবনে সীরীন রাহিমাহুল্লাহ যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮)

এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বে প্রথম দশকে নখ, গোঁফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানিদাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৬৷ আরাফার দুআ ও যিকির শ্রেষ্ঠ দুআ ও যিকির


যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের মধ্যে আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন। এ দিবসে আল্লাহর নিকট দুআ ও যিকিরের গুরুত্ব রয়েছে আরো বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পূর্ববর্তী নবীগণ এ দিনে যে দুআ ও যিকির করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমানিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

خَيْرُ الدّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.

অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ দুআ ও যিকির হলো, আরাফার দুআ। এ দিনের দুআ ও যিকির হিসেবে সর্বোত্তম হল ঐ দুআ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হল,

لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

(জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৭৭৮)

সুতরাং আসুন এ দিবসটি হেলায় খেলায় নষ্ট না করে দুআ ও যিকির ও মশগুল হই৷

আরো পড়ুন: অভিভাবক ছাড়া কি মেয়েদের বিয়ে হবে না?

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নেক আমল করে জিলহজ্ব মাসের সম্মান রক্ষা করতে পারি সে তাওফিক দান করুন৷ আমীন৷









সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন