চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন,"ঈদে কোলাকুলি আর মুসাফাহা না করলে ঈদ, ঈদই মনে হয় না। সকালে ঈদের জামাতে নামাজ আ’দায় করার দিনগুলো খুব মিস করছি। এতদিন শৈশবের স্মৃতিগু’লো খুব মিস করতাম।"
এবার দেখুন "কোলাকুলি করার শরয়ী বিধান"
১৷ কোলাকুলি কয় বার করতে হয়?
হাদীসে কোলাকুলি মূলত একবার করার কথা পাওয়া যায়। একাধিক বা তিনবারের অধিক কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না৷ কিন্তু আমাদের সোসাইটির প্রচলনে কোলাকুলি তিনবার করা হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে এটি সুন্নত নয়।
হযরত আয়শা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন,
قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي فَأَتَاهُ فَقَرَعَ الْبَابَ فَقَامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرْيَانًا وَاللهِ مَا رَأَيْتُهُ عُرْيَانًا قَبْلَهُ فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ
অর্থাৎ হযরত জায়েদ বিন হারেসা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু মদীনায় এলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। হযরত জায়েদ রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরজায় কড়া নাড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বেরিয়ে গেলেন খালি গায়েই। আল্লাহর কসম আমি এর আগে কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে খালি গায়ে দেখিনি। তারপর তিনি তার সাথে মুআনাকা করলেন এবং তাকে চুমু খেলেন।
(তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯০৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৩২)
২৷ ঈদের নামাযের পর কোলাকুলি করার বিধান।
মূলত কোলাকুলি করার বিধান হলো, দীর্ঘদিন পর কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত হলে কোলাকুলি করবে। সে হিসেবে ঈদের জামাতের পর যদি কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা হয়, তাহলে সালাম বিনিময়ের পর কোলাকুলি করতে কোন সমস্যা নেই।
বাট, এটিকে ঈদের নামাযের পরের সুন্নত মনে করা বিদআত। অথবা ব্যাপকভাবে সবার সাথেই ঈদের নামায শেষ হতেই কোলাকুলি শুরু করে দেয়া একটি রুসুম রেওয়াজ যা সুন্নাত বা মুস্তাহাব কিছুই নয়।
আর এটিকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করা বিদআত বলে গণ্য হবে।
হযরত আয়শা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মাঝে এমন বিষয়ের নতুন চালু করে, যা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল না, তাহলে সে কাজটি বর্জনীয়।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮]
চিত্রনায়ক রিয়াজ আরো বলেন,
"এ বছর করোনার কারণে অনেকেই অ’সহায় হয়ে পড়েছে। শুরু থেকেই চেষ্টা করে আসছি, তাদের পাশে দাঁড়াতে। এবারের কোরবানির অর্থ সেসব মানুষের সেবায় ব্যয় করেছি।"
ইসলাম কি বলে এ ব্যাপারে?
কুরবানি ইসলামের একটি ওয়াজিব বিধান। যার ওপর কুরবানি ওয়াজিব, তাকে অবশ্যই কুরবানি দিতে হবে বা এই বিধান পালন করতেই হবে। কেউ যদি মনে করেন যে, ওয়াজিব কোরবানি বাদ দিয়ে সেই টাকাটা অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করবেন সেটা মোটেও সঠিক হবে না ৷ বরং এটি ইসলামি হুকুম পরিপন্থী হবে।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করবে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে,
من وجد سعة لان يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا
অর্থাৎ যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯)
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
فصل لربك وانحر
অর্থাৎ অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি আদায় করুন।
যদি কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং তিনি সেই ওয়াজিব আদায় না করে টাকা অভাবগ্রস্তদের দান করেন বা গরিবদের দিয়ে দেন, তবে সেই দানের দ্বারা কুরবানি করার দায়িত্ব পালিত হবে না। সে ইবাদত তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।