HMREZAULISLAM.BLOGSPOT.COM |
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাসের চিকিৎসা সম্পর্কিত দুইটি শব্দও বহুল ব্যবহৃত হতে থাকে— কোয়ারেনটাইন ও আইসোলেশন। এর সঙ্গে সেলফ কোয়ারেনটাইন ও হোম কোয়ারেনটাইনের মতো শব্দগুলোও আলোচনায় উঠে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এই শব্দগুলো আরও বেশি উঠে এসেছে আলোচনায়। কিন্তু এই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এই ধাপগুলোর কোনটি কী, কোন ধাপে কোন ব্যক্তিকে কী অবস্থায় রাখা হয়— এসব বিষয় নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই।
কোয়ারেন্টাইন কী?
quarantine ,অর্থ হলো, সঙ্গরোধ
চিকিৎসা শাস্ত্রে কোনো ধরনের জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন— এমন আশঙ্কায় থাকা কোনো ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখার যে পদ্ধতি, তাকেই বলা হয় কোয়ারেনটাইন।
১৩৪৭ সালে ইউরোপে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে একটি রোগ মহামারি আকার ধারণ করে। ধারণা করা হয়, ১৪শ শতকের ওই রোগে সাড়ে সাত থেকে ২০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই সময় ইতালির ভেনিস শহর কর্তৃপক্ষ আইন জারি করে, বন্দরে ভেড়ার পর জাহাজ ৪০ দিন পর্যন্ত নোঙ্গর করে রাখতে হবে। এরপরই জাহাজ থেকে যাত্রী নামতে পারবেন। অর্থাৎ জাহাজের যাত্রীদের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে রাখা হয়। ওই ৪০ সংখ্যাটিকে ইতালিয়ান ভাষায় বলা হয় ‘কোয়ারান-তিনো’। এই শব্দ থেকেই ‘কোয়ারেনটাইন’ শব্দটির উৎপত্তি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, জীবাণুর সংস্পর্শে আসা সন্দেহে কাউকে যে পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, তাকেই কোয়ারেনটাইন বলা হয়। কোয়ারেনটাইনে থাকা মানেই কোনো ব্যক্তি অসুস্থ, বিষয়টি তেমন না।
সচরাচর যারা আক্রান্ত এলাকায় ছিলেন বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন— এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইনে রাখা হয় পর্যবেক্ষণের জন্য। এই কোয়ারেনটাইনের মেয়াদ একেক ধরনের জীবাণুর জন্য একেক রকম। যেমন— করোনাভাইরাস সংক্রমণের ১৪ দিন পর্যন্ত লক্ষণগুলো সুপ্ত থাকতে পারে বলে ১৪ দিন পর্যন্ত তাদের বিশেষায়িত স্থানে রাখা হয়। আবার ইবোলা ভাইরাসের ক্ষেত্রে কোয়ারেনটাইনের মেয়াদ ২১ দিন পর্যন্ত।
হোম কোয়ারেন্টাইন
কোনো ব্যক্তি যখন বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনের সকল নিয়ম মেনে, বাইরের লোকজনের সাথে ওঠাবসা বন্ধ করে আলাদা থাকেন, তখন সেটিকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলা হয়। কোনো ব্যক্তি যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরেন তাকে হোম কোয়রান্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এক্ষেত্রেও কমপক্ষে ১৪ দিন তিনি কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলবেন।
আইসোলেশন কী?
isolation অর্থ হলো, বিচ্ছিন্নতা
কেউ যদি কোনো জীবাণুতে সংক্রমিত হন কিংবা জীবাণুতে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ তার মধ্যে থাকে, তাহলে তাকে সবার থেকে আলাদা রেখে যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেটাকেই চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিভাষায় আইসোলেশন বলা হয়।
লকডাউন কী?
এর শাব্দিক অর্থ তালাবদ্ধ করে দেয়া। শব্দটির ব্যাখ্যায় ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গা থেকে বের হতে না দেয়া কিংবা ওই জায়গায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়াই হলো ‘লকডাউন।’ এছাড়া অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে কোনো নিদিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করাই ‘লকডাউন।’ তবে ‘লকডাউন’ শব্দটির সরল বাংলা ‘অবরুদ্ধ’ কিংবা ‘প্রিজনে রাখা’ বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুনতাসির হাসান। এই মতটিকেই সমর্থন করে ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, “এই শব্দটি নতুন আসায় এর বাংলা প্রতিশব্দ এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে এর অর্থ ‘অবরুদ্ধতা’ হতে পারে।”