হাদীস অস্বীকার কারীদের দু'টি প্রশ্ন ও তার উত্তর

হাদীস অস্বীকার কারীদের দু'টি প্রশ্ন ও তার উত্তর
প্রিয় ভিজিটর, আজ আলোচনা করবো হাদীস অস্বীকার কারীদের দু'টি প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে ৷

১৷ হযরত আবু বকর রাঃ এর হাদিস পোড়ানোর কাহিনী

প্রচলিত একটি বর্ণনার সূত্র ধরে বলা হয়ে থাকে যে আবু বকর রা. তাঁর সংরক্ষিত ৫০০ হাদিস পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এই কথা শুনে শ্রোতার মনে এমন একটা ধারণা আসতেই পারে যে হাদিস সংরক্ষণ যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতো, আবু বকর রা. তো তাহলে এমনটা কিছুতেই করতেন না। বরং হাদিস লিপিবদ্ধকরণই যেন একটি অপরাধ ছিল যার প্রায়শ্চিত্ত তিনি করেছেন সেগুলো পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে।

প্রথমেই আমরা বর্ণনাটি দেখে নিই। আয়িশা রা. বলেন, আমার পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসসমূহ সংগ্রহ করেছিলেন এবং তা ছিল পাঁচশত হাদীস। এক রাতে, তিনি খুব অস্বস্তিতে পড়েছিলেন, এপাশ ওপাশ  করছিলেন এবং খুব বেশি পার্শ্ব পরিবর্তন করছিলেন। আমিও এ কারণে অস্বস্তিবোধ করছিলাম, তাই আমি বললাম, ‘আপনি কোনও অসুস্থতার কারণে ঘুরছেন, নাকি এমন খবর শুনেছেন যা আপনাকে বিচলিত করেছে?’ সকালে তিনি বললেন, ‘হে কন্যা, তোমার কাছে যে হাদিসসমূহ রয়েছে তা নিয়ে এসো।’ আমি সেগুলো নিয়ে এলাম এবং তিনি আগুন চাইলেন ও সেগুলো পুড়িয়ে ফেললেন। আমি বললাম, ‘আপনি এগুলো জ্বালিয়ে ফেললেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি আশংকা করছি যে এগুলো সাথে থাকা অবস্থায় আমি মারা যাব যাতে এমন বর্ণনাও রয়েছে যা আমি এমন কোন ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছিলাম যাকে  আমি বিশ্বাস করেছিলাম এবং যার বিবরণগুলিকে আমি সত্য বলে মনে করেছি যদিও বাস্তবে তা নয়; তবে তো আমি তার থেকে ভুল বর্ণনা উদ্ধৃত করতাম ।


এই হাদিসের সনদে আলী ইবনে সালিহ নামে একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী থাকায় ইবনে কাছির র. এই বর্ণনাটির প্রতি আপত্তি প্রকাশ করেছেন বলে কানযুল উম্মালে উল্লেখ রয়েছে। যাহাবি র. তার তাযকিরাতুল হুফফাযে এই বর্ণনাটি সহিহ নয় বলে মন্তব্য করেছেন। [তাযকিরাতুল হুফফায, ১/ ৫, কানযুল উম্মাল, হাদিস নং ২৯৪৬০] প্রথম কথা হচ্ছে বর্ণনাটি সঠিক নয়।


দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যদি সাময়িকভাবে ধরেও নিই বর্ণনাটি সঠিক, তবু তা কিন্তু হাদিস লিপিবদ্ধকরণের বিপক্ষে কোন প্রমাণ হচ্ছে না। কেননা, একদিকে, ৫০০ হাদিস লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা লিপিবদ্ধকরণের চর্চাকেই প্রমাণ করছে।



অন্যদিকে, হাদিস লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধ বা হাদিস সংরক্ষণ ঠিক নয়, তাই তিনি হাদিস পুড়িয়ে ফেলেছিলেন- বিষয়টা কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। বরং এই সংকলনে এমন কিছু হাদিস থাকা সম্ভব বলে তিনি আশংকা করেছিলেন যেটা তিনি অন্য কারো নিকট হতে শুনেছিলেন যিনি বিশ্বস্ত নাও হতে পারেন। অর্থাৎ হাদিসের সংরক্ষণের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতেই তিনি হাদিস পুড়িয়েছিলেন, হাদিস ধ্বংস করার জন্য নয়।


হাদীস অস্বীকার কারীরা বলেন, কুরআন বুঝতে তাফসির, হাদীস ও ফিকহের কোন প্রয়োজন নেই ৷ তারা দলীল পেশ করেন নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা-

ولقد يسرنا القران للذكر فهل من مدكر


এবার আমরা জানব কুরআন সহজ হওয়ার অর্থ কি?


১৷ কুরআনের বিষয়বস্ত্তসমূহ দুই প্রকার : প্রথম প্রকার : কিছু আয়াত এমন রয়েছে যেগুলোতে আল্লাহপাক মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন যে, আল্লাহ এক, আখিরাত সম্পর্কে বলেছেন যে, একদিন তোমাদের সকলকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এ উপদেশ একজন সাধারণ মানুষ শুধু অনুবাদ পড়ে গ্রহণ করতে পারবে। এ কারণেই তো কুরআন স্পষ্ট বলেছে, উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহজ।


দ্বিতীয় প্রকার : দ্বিতীয় প্রকারের বিষয়বস্ত্ত, যেগুলোতে আল্লাহ পাক আহকাম ও আমছাল বা উপমা পেশ করেছেন। এসব হুকুমের ব্যাপারে আল্লাহ নিজে বলেন- وتلك الامثال نضربها للناس وما يعقلها الا العالمون ‘আমি এসব উপমা মানুষের উপকারার্থে প্রদান করে থাকি তবে তা কেবল ইলমওয়ালারাই বুঝবে।’ আর ইলম তা-ই যা সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছিলেন। যদি চৌদ্দশ বছর পর এখন কেউ বলে, আমি নিজে গবেষণা করে কুরআনের ব্যাখ্যা বলব, এ পর্যন্ত যা তাফসীর করা হয়েছে তা আমার বুঝে আসছে না, এগুলো আমি মানি না, বরং আমি আমার বুদ্ধি দিয়েই বুঝব, তাহলে ওই ব্যক্তি পদে পদে ভুল করবে? 


১৷ শুধু তেলাওয়াতে কোন সওয়াব নেই ?

১৷ হজরত উসমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে, আর প্রতিটি নেকি দশ গুণ করে বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)

২৷ একটি সরল বোঝার বিষয় হলো যে কোরআন শরিফের কিছু শব্দ রয়েছে, যেগুলোর অর্থ কোনো মুসলমানই জানে না। সেগুলোকে ‘হরুফে মুকাত্তাআত’ বলা হয়। এসব শব্দের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা সাধারণত বলে থাকেন, ‘এগুলোর অর্থ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।’ যারা এসব শব্দের অর্থ বোঝার পেছনে লেগে পড়ে, কোরআনের একটি আয়াতে তাদের ব্যাপারে তিরস্কারও করা হয়েছে। 

এখন যারা বলেন, না বুঝে পড়লে কোনো ফায়দা নেই, তারা কি ‘হরুফে মুকাত্তায়াত’ও বুঝে পড়েন, নাকি না বুঝে পড়েন? এগুলোর অর্থ তো দুনিয়ায় কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাহলে কি ‘হরুফে মুকাত্তায়াত’ পাঠ করার দ্বারা কোনো লাভ নেই? রাসুল (সা.) তো বলেছেন, এগুলো পাঠ করলেও প্রতি হরফে দশ নেকি। বরং তিরমিজি শরিফের হাদিসে তো কোরআনের সর্বপ্রথম ‘হরুফে মুকাত্তায়াত’ আলিফ-লাম-মিম দিয়ে প্রতি হরফে দশ নেকি পাওয়ার উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)

৪৷ তিন. রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের শব্দের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন। তিনি শব্দের প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে ওহি অবতরণকালে জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গে দ্রুত আবৃত্তি করতেন। অথচ তাঁর স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। এ থেকে তাঁর শব্দের প্রতি অসাধারণ আগ্রহ অনুধাবন করা যায়।

এ ছাড়া রাসুল (সা.)-এর শব্দের প্রতি এত ব্যাকুল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো, তিনি নিজে তিলাওয়াতের পাশাপাশি অন্যের তিলাওয়াতও শুনতেন। একবার ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললেন, আমাকে কোরআন শোনাও। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি আপনাকে শোনাব! অথচ আপনার ওপরই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে? নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি অন্যের কাছ থেকে কোরআন শুনতে ভালোবাসি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৪৯)

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন