আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ । আজ আমি আলোচনা করব, কোনো আলেমকে “মাওলানা” বলা কি শিরক? বা আলেমদের মাওলানা বলা কি হারাম? আপনারা সকলেই অবগত আছেন সম্প্রতি মুজাফফর বিন মুহসিন সাহেব দাবি করেছেন যে, কোন আলেমকে মাওলানা বলবেন না। কারণ এটা শিয়াদের পরিভাষা। আসুন জেনে নেই, এ পরিভাষা কি শিয়াদের নাকি হাদীসের কিতাবে ও পাওয়া যায়।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন,
অর্থাৎ তামিল জাফর এবং রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বললেন তুমি আমাদের ভাই এবং মাওলানা।
এ হাদীসে স্পষ্ট রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদকে ”মাওলানা” বলেছেন । এখন প্রশ্ন হলো, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি শিয়াদের পরিভাষা ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের অনুসরণ করে মাওলানা বলেছেন? না প্রশ্ন মুজাফফর বিন মহসিন এর নিকট থাকল।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার পুত্র হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর উস্তাদ আসলে হাসান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বলেছিলেন,
অর্থাৎ তুমি তোমার মাওলার সামনে দাঁড়াও। ( ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী- 5/435)
ইতিহাস তালাশ করলে আমরা দেখতে পাই যে, সর্বশ্রেষ্ঠ সাবেরী হযরত হাসান বসরী কে লোকেরা ‘’মাওলানা’’ বলে ডাকতেন । ( তাহযীবুত তাহযীব-2/263)
মুজাফফর বিন মহসিন সাহেবের কথা অনুযায়ী তাদের অনুসৃত শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী শিয়া বলে প্রমাণিত হয়। একটু খুঁজে দেখা যাক তাঁর কিতাবে ’’মাওলানা’’ পরিভাষা পাওয়া যায় কিনা এক জায়গায় রয়েছে ।
অর্থাৎ আমি এই কিতাব শেষ করেছি যা আমাদের শায়খ আল্লামা ইলমের সাগর, রাসূলের সুন্নাত জীবিতকারী, বেদাআত দূরকারী, সর্বশেষ মুহাক্কিক “মাওলানা” সাইয়েদ নোমান খাইরুদ্দিন আফেন্দীর লেখা ………। ( আল আয়াতুল বাইয়্যিনাত ফি আদামি সিমায়িল আমওয়াত-1/91)
আরো পড়ুন:মুযাফফার বিন মুহসিন এর মিথ্যাচার, বিতর নামাজ আদায়ের সঠিক পদ্ধতি
মুজাফফর বিন মুহসিন সাহেবের কথা অনুযায়ী তাদের অনুসরণীয় অনুকরণীয় ব্যক্তি আলবানী রহিমাহুল্লাহ শিয়া।
তাদের আকিদার ইমাম সাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ এর বইয়ের অসংখ্য জায়গায় ”মাওলানা” শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। আমি তার কিছু জায়গা আপনাদের সামনে উল্লেখ করছি,
অর্থাৎ নায়েবে সুলতানের সাথে তোমরা পরামর্শ করার আগ পর্যন্ত আমি নাম বলছি না………। এক পর্যায়ে তিনি বললেন “হে মাওলানা”। (মাজমাউল ফতুয়া -3/215)
আর এক জায়গায় আছে,
فقالوا يا مولانا من يتكلم فى أمر الملك
অর্থাৎ তারা বলল, “হে মাওলানা” বাদশার ব্যাপারে কে কথা বলবে? ( মাজমাউল ফতোয়া 3/237)
আমাদের কিছু সংখ্যক লা মাযহাবী ভাইয়েরা সঠিক অনুসন্ধান না করে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বলে ফেলেন যে, মাওলানা এটি আল্লাহর সাথে নির্দিষ্ট যেমন কুরআনে এসেছে, আনতা মাওলানা ফানছুরনা। ( সূরা বাকারা-286)
এ আয়াতে মাওলানা বলে আল্লাহকে সম্বোধন করা হয়েছে। বুঝা গেল মাওলানা একটি আল্লাহর বিশেষ্য। সুতরাং কোন মানুষকে মাওলানা বলে সম্বোধন করা বা ডাকা, বিশেষায়িত করা জায়েজ নয়, বরং শিরক।
মাওলানা শব্দটি ’মাওলা’ ও ’না’ দুইটি আরবি শব্দের সমাস। ’না’ মানে আমরা, আমাদের। আর ’মাওলা ’ শব্দের প্রায় 30 টি অর্থ রয়েছে। যেমন, প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনির, দাস, চাচাতো ভাই, অভিভাবক, নেতা, সরদার ইত্যাদি
কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অর্থে মাওলা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। এমনকি সূরা হাদীদ জাহান্নামকেও মাগুরা বলা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে,
অর্থাৎ তোমাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম। এটাই তোমাদের মাওলা । ( সূরা হাদিদ-15)
লা-মাযহাবী ও নামধারী আহলে হাদিস ভাইদের কথা সঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে মাওলানা শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে আলেমদের ক্ষেত্রে সে অর্থে ব্যবহার করা হয়নি । আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে মাওলানা অর্থ হলো, আমাদের প্রভু। আর আলেমদের ক্ষেত্রে তার অর্থ হলো, আমাদের (ধর্মীয়) অভিভাবক।
এখন আমার কথা হল, যদি শব্দগত রূপ মিল থাকাতেই কোন শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ নাজায়েজ হয়ে যায়; তাহলে আমি বলব, আমাদেরকে মুমিন নামে ডাকা বা সম্বোধন করা নাজায়েজ। কারণ আল্লাহ তাআলার 99 নামের একটি নাম হচ্ছে ”মুমিন”। অথচ কুরআন ও হাদিসে অনেক জায়গায় মুসলিমদেরকে মুমিন বলে বিশেষিত করা হয়েছে। তো এখানেও কিন্তু বান্দার ক্ষেত্রে মুমিন শব্দের অর্থ আর আল্লাহর ক্ষেত্রে আরেক অর্থ। একইভাবে মাওলানা শব্দটার বেলায় ব্যাপারটা তাই।
দর্শক এই ছিল আজকের আলোচনা, মাওলানা বলা কি শিরক? অথবা আলেমদেরকে মাওলানা বলা কি হারাম? কিছুতেেই নয়, মাওলানা কুরআনের ভাষা হাদীসের ভাষা। আপনি আলেমদের কে মাওলানা বলতে পারেন। যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে শেয়ার করবেন এবং যেকোনো বিষয়ের জন্য এই ব্লগ সাইটটি ভিজিট করবেন আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেয।
আরো পড়ুন: মুযাফফার বিন মুহসিন এর মিথ্যাচার, বিতর নামাজ কত রাকাত ?