গোসল করলে কি অযু করতে হয়?

তাই গোসল সম্পন্ন করার পর নতুন করে অযু  না করে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। এতে কোনো  সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ১. আচ্ছা ভাই একটা প্রশ্ন করি, প্রশ্নটা হলো, গোসল করার পূর্বে অযু করে গোসল শুরু করে, এমতাবস্থায় যদি অযু ছুটে যায় তারপর সে বাকি গোসল শেষ করে তাহলে কি সে পবিত্র নাকি আবার পুনরায় অযু করতে হবে?

২.আরেকটা হলো গোসল এর ফরয আদায় করে গোসল করলে এরপর নামাজ বা কোরআন পরতে কি আবার অযুর প্রয়োজন আছে কি না?


                                                  উত্তর

 بسم الله الرحمن الرحيم
অযু সহীহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য  চারটি কাজ হল ফরয। যথা-

১. পূর্ণ মুখ ধৌত করা।
২. উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করা।
৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

অর্থাৎ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথাকে মাসাহ কর। আর পদযুগল গিটসহ ধৌত ৷ [সূরা মায়িদা-৬]

গোসলের সকল নিয়ম মেনে গোসল করলে যেহেতু গোসলে  উক্ত চারটি কাজই ভালভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই গোসল করার পর আলাদাভাবে অযু করার প্রয়োজন নেই। গোসল করার দ্বারাই অযু হয়ে যায়। তাই গোসল সম্পন্ন করার পর নতুন করে অযু  না করে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। এতে কোনো  সমস্যা নেই।


হাদীস শরীফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، – رضى الله عنها – قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لاَ يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ

অর্থাৎ আয়েশা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ গোসলের পর অযু করতেন না।
[সূনানে  নাসাঈ: ২৫৩]

" আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল" কিতাবে এক প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, 'গোসলের দ্বারা অযুও হয়ে যায় পরে অযু করার প্রয়োজন নেই ৷
[আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ,২/ ৭]

অনূরুপ উত্তর দেওয়া হয়েছে ' কেফায়াতুল মুফতি'তে উল্লেখ করা হয়েছে, গোসলের দ্বারা অযুও হয়ে যায়
[কেফায়াতুল মুফতি,২/ ৩১২]

ফরয গোসলে আগে অযু করা সুন্নত
 তবে মনে রাখতে হবে, ফরয গোসলের আগে অযু করা সুন্নাহ। ফরয নয়। তাই অযু না করলেও গোসল হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, নাকে ও গলার ভিতরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। নাক ও গলার ভেতরসহ সারা শরীরের কোন এক স্থানেও যদি পানি না পৌঁছে, তাহলে ফরয গোসল আদায় হবে না।
তাই সতর্কতা স্বরূপ আগে অযু করে নেয়া উত্তম। তবে জরুরী নয়।


ফরয গোসলের নিয়ম

প্রথমত নিয়ত করা ৷ অর্থাৎ মনে মনে এই চিন্তা করা  যে, নাপাকি দূর করার জন্য গোসল করছি। তারপর প্রথমে লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলা । তারপর সাবান বা এজাতীয় কিছু দিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া । তারপর নামাজের অযুর ন্যায় পূর্ণাঙ্গ অযু করা । এরপর পানি দিয়ে মাথা ভিজিয়ে নেওয়া । তারপর প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালা । তারপর সারা দেহে পানি ঢালা ।

হাদীসে শরীফে এসেছে,

মায়মুনা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন,

ْ وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غُسْلاً يَغْتَسِلُ بِهِ مِنَ الْجَنَابَةِفَأَكْفَأَ الإِنَاءَ عَلَى يَدِهِ الْيُمْنَى فَغَسَلَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ صَبَّ عَلَى فَرْجِهِ فَغَسَلَ فَرْجَهُ بِشِمَالِهِ ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدِهِ الأَرْضَ فَغَسَلَهَا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ ثُمَّ صَبَّ عَلَى رَأْسِهِ وَجَسَدِهِ ثُمَّ تَنَحَّى نَاحِيَةً فَغَسَلَ رِجْلَيْهِ

অর্থাৎ আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি অপবিত্রতার গোসল করেন। নবী ﷺ  বদনা নিজের ডান হাতের উপর কাৎ করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্হানের উপর পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির উপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন। অতপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। অতপর তিনি স্বীয় মাথা ও সর্বাংগে পানি ঢালেন। পরে তিনি উক্ত স্থান হতে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন।
[আবু দাউদ ২৪৫]

উত্তর লিখনে
মুফতি রেজাউল করিম
মুহাদ্দিস, সুফফাহ মাদরাসা, জলিলপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ




[প্রিয় পাঠক! আপনিও এ ব্লগে লিখতে পারেন ৷ লেখার বিষয় হতে পারে, ইসলামি আর্টিকেল, জীবনাচার, গল্পগুচ্ছ, মাসয়ালা, ইত্যাদি ৷ আপনার লেখা ছবিসহ আপনার নামে ছাপা হবে ৷ লেখা পাঠাতে হবে এই মেইলে
 rezua1995@gmail.com ]

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন