সাহরী আরবী শব্দ যা ‘সাহর’ শব্দ থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ রাতের শেষাংশ, শেষ তৃতীয়াংশ বা ভোর রাত। পরিভাষায় রোজা পালনার্থে মুমিন বান্দা শেষ রাতে ফজরের পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করে থাকেন, তাকে সাহরী বলা হয়। রোজা রাখার নিমিত্তে এ খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সা. সদা-সর্বদা রোজার উদ্দেশ্যে সাহরী খেয়েছেন এবং তাঁর প্রিয় উম্মতকে তা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
মুফতি রেজাউল করিম যশোরী |
সাহ্রির ফজিলত ও বরকত
হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীতে বরকত রয়েছে।’হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা
করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
تسحَّروا؛ فإن في السُّحورِ بركةً
তোমরা সেহরি খাও। কারণ, সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’(সহিহ আল-বুখারী : ১৯২৩)
সাহরী মুমিন এবং আহলে কিতাবের মধ্যে
পার্থক্যকারী ইবাদতঃ
হজরত আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত অপর এক
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
فصْلُ ما بين صيامِنَا وصيامِ أهْلِ الكتابِ؛ أَكْلةُ السَّحَرِ
আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে
পার্থক্য হলো, সেহরি খাওয়া।’ (মুসলিম : ১০৯৬) অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ সেহরি না খেয়ে রোজা পালন করে অর্থাৎ তারা উপবাস চর্চা করে। তাই রাসূলের উম্মত
হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আহলে কিতাবদের অনুকরণ বর্জন করে রাসূলের সুন্নত
পালন করে সেহরি খেয়ে রোজা রাখা।
সাহরী গ্রহণকারীদের জন্য
রহমত
সাহরীর গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে রাসূল সা. আরও বলেছেন,
إِنَّ اللهَ و
مَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ على المُتَسَحِّرِينَ
নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা সাহরী গ্রহণকারীদের জন্য
রহমত বর্ষণ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১০১)
সাহরী আল্লাহর দান
রাসূল (সা.)
এর কাছে একজন সাহাবি এলেন যখন তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে দেখে বললেন,
إن السحور بركة أعطاكموها الله فلا تدعوها
এ খাবার
বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সেহরি খাওয়া
ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)।
সাহরী খাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সা. আরও বলেন,
السُّحور أَكْلَةٌ بَرَكةٌ فلا تدعُوهُ ولو أَنْ يَجْرَعَ
أحدُكُمْ جرْعةً من ماءٍ
সাহরী খাওয়া বরকতময় কাজ। এটা ত্যাগ করো না, যদি এক ঢুক
পানি দিয়েও হয় তা গ্রহণ করো। (মুসনাদে আহমদ: ১১১০১)
বিলম্বে সেহরি খাওয়া সুন্নত
বিলম্বে সেহরি খাওয়া সুন্নত : বিলম্ব করে
সেহরি খাওয়া সুন্নত। অর্থাৎ রাতের একেবারে শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগমুহূর্তে সেহরি
খাওয়া সুন্নত। তবে দেরি করার অর্থ এতটা বিলম্ব করা নয়, যে সূর্য উঠে যাওয়ার সন্দেহ হয়। হজরত জায়েদ ইবনে
সাবেত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
تسحَّرنا مع رسول الله صلى الله
عليه وسلم، ثم قام إلى الصلاة، قال أنس: قلت لزيد: كم كان بين الأذان
والسَّحور؟ قال: قدر خمسين آية
আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেলাম, অতঃপর নামাজে দাঁড়ালাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সেহরি খাওয়া ও নামাজে দাঁড়ানোর মধ্যে সময়ের কতটুকু
ব্যবধান ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মতো সময়ের ব্যবধান ছিল।(সহিহ
আল-বোখারি : ১৯২১)
অনেকের ধারণা, ফজরের নামাজের আজান পর্যন্ত সেহরি খাওয়া যায়। এ ধারণা
একেবারেই ভুল। কারণ, ফজরের আজান দেওয়া হয় সুবহে
সাদিকের পরে। আর সেহরির শেষ সময় হলো, সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। অতএব, আজানের সময় পর্যন্ত সেহরি খেতে থাকলে, অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পরে সেহরি খেলে রোজা হবে না।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। অনেকে সাহরীকে সেহরী বলে থাকেন, যা অনুচিত। কেননা, আরবীতে যবর, যের বা পেশের কারণে অর্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। সাহরী (যা আরবীতে সীন অক্ষরে যবর
দিয়ে উচ্চারণ করতে হয়) অর্থ শেষ রাতের খাবার। আর সেহরী (যা আরবীতে সীন অক্ষরে যের
দিয়ে পড়া হয়) অর্থ হলো জাদু, তন্ত্র-মন্ত্র পাঠ ইত্যাদি।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে রমজানের সমস্ত সাওয়াবের আমল করার এবং এগুলো থেকে কল্যাণ
অর্জনের তাওফীক দিন। আমীন।