শুধু বাংলা কিতাব পড়ে যারা নিজেদের কে আল্লামা মনে করো!



পাঠকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন করি, কোনো নবী রাসূল কি শুধু কিতাব পড়ে উম্মতকে হেদায়েত করেছেন? কোনো সাহাবী কি শুধু কোরআন পড়ে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বুঝতেন?  কোনো তাবেয়ী কি উস্তাদ ছাড়া ঘরের চার দেয়ালের ভিতর বসে বসে কিতাব পড়তেন?  কোনো ফকিহ মুজতাহিদ ইমাম কি শিক্ষক ছাড়া শুধু কিতাব মুতালায়া করে "মাযহাব"  প্রতিষ্ঠা করেছেন?
আপনার যদি এ বিষয়ে কিঞ্চিত জ্ঞান থাকে তাহলে 'না' উত্তর দিবেন | আর যদি জ্ঞান থাকা সত্বেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হন তাহলে উত্তর দিবেন  ' হ্যা'|

আপনার উত্তর যাই হোক না কেন? সঠিক উত্তর কিন্তু ' না' | কারণ আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিব হেদাতের কান্ডারী যার উপর কোরআন অবতীর্ণ করেছেন | তাকে সম্বোধন করে বলেছেন-
                                        (ثم ان علينا بيانه( القيامه 19
অর্থাৎ এরপর বিশদ বর্ণনা আমার দায়িত্বে |
অর্থাৎ আপনি এ চিন্তাও করবেন না যে,অবতীর্ণ আয়াত সমূহের সঠিক মর্ম ও উদ্দেশ্য কী? এটা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমার | আমি কোরানের প্রতিটি শব্দ ও তার উদ্দেশ্য আপনার কাছে ফুটিয়ে তুলবো |
 ( তাফসীরে মারেফুল কোরআন,  1424, অনুবাদ মাও. মুহিউদ্দিন খান রহ.)
এ আয়াত ও তাফসীর দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট বুঝা যায় ,আল্লাহ তায়ালাও তার রাসূলের উপর শুধু কিতাব নাযিল করে ছেড়ে দেননি বরং বুঝানোর দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহণ করেছেন | অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ হলেন শিক্ষক আর রাসূল স. হলেন ছাত্র |

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ.বলেন-
قال ابن عباس و عطية العوفي( ثم ان علينا بيانه) تبيين حلاله و حرامه.  و كذا قال قتادة
অর্থাৎ হালাল ও হারাম স্পষ্ট করা আমার দায়িত্ব | ( ইবনে কাসীর)

কিন্তু বড়ই পরিতাপ আর আফসোসের বিষয় যে, বর্তমান একধরনের বুদ্ধিজীবি(?) জ্ঞান পাপি বাংলা বুখারী আর কিছু চটি কিতাব পড়ে নিজেকে বড় পন্ডিত বলে জাহির করে | আসলে তাদের জ্ঞান লোপ পেয়েছে |

ইমাম আবু যুরয়া রহ. বলেন- لا يفتي الناس صحفي ولا يقرأهم  مصحفي
অর্থাৎ শুধু বই পড়ে কেউ ফতোয়া দিবে না | শুধু কোরআন পড়ে কেউ ক্বারী হবে না | (
 আল ফকীহ ওয়াল মুতাফাক্বীহ-194)
আর বর্তমান বাস্তবতা কী? কারো নিকট ফতোয়া বা মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করতে দেরী হয় কিন্তু উত্তর দিতে বিলম্ব হয় না | অনেকে তো আবার ইফতা না পড়ে মুফতি টাইটেল লাগায় |

বর্তামানে নতুন এক দলের আবির্ভাব ঘটেছে যারা কোন শিক্ষক ছাড়া শুধু বাংলা বুখারী পড়ে বড় আলেম হয়ে যাচ্ছে | কথায় কথায় বুখারী বুখারী বুলি আওড়ায় | ( বুখারী নিয়ে একদিন লেখার চেষ্টা করবো)
তাদের আবদুল্লাহ ইবনে ওহাব রহ. এ কথা  মনে রাখা দরকার - "কোন মুজতাহিদ ফকীহর অনুসরণ ব্যতীত শুধু হাদিস অধ্যায়ন করা গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা "|
তিনি আরো বলেন- الحديث مضلة الا للفقهاء অর্থাৎ ফকীহ ব্যতীত অন্যদেরকে হাদিস পথভ্রষ্টকারী |
আল্লামা ইবনে জামায়া রহ. বলেন- من اعظم البلية تشييخ الصحيفة
অর্থাৎ বড় বড় মুছিবতের অন্যতম কারণ হলো, কিতাবকে উস্তাদ বানানো | ( তাযকিরাতুস সামে' 87) বড় পরিতাপের বিষয় আজ আমাদের ছাত্ররাও বাংলা নির্ভর হয়ে পড়েছে | যার কারণে আরবিতে থেকে যাচ্ছে অপরিপক্ক |

 ইমাম শাফেয়ী রহ. বলে, من تفقه من الكتب ضيع الاحكام
অর্থাৎ যে ব্যক্তি শধু কিতাব থেকে ফিকহ অর্জন করলো সে যেন ইসলামের বিধিবিধান নষ্ট করলো |

ইমাম সাখাবী রহ.বলেন  من دخل في العلم وحده خرج وحده
অর্থাৎ যে ব্যক্তি একাকী ইলমের পথে প্রবেশ করলো ( ইলম হাছিল করার জন্য)  সে একাকী সেখান থেকে বের হয়ে গেল| অর্থাৎ সে কোন ইলম অর্জন করতে না পেরে সেখান থেকে খালী হাতে বের হয়ে গেল |
( আল জাওয়াহিরু ওয়াদ দুরার 1/58)

মুফতী রেজাউল করিম
রাজৈর, মাদারী পুর
শিক্ষক : সুফফাহ মাদরাসা
জলিল পুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন।

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন