হে নারী তোমাকেই বলছি!

              

নারী সে তো মুক্তার মত! নারী তুমি তো হিরের মত! নারী সে তো আবদ্ধ সিন্ধুকে রাখা দামী মূল্যবান গহনার মত! নারী তুমি তো ঝিনুকের পেটের ভিতরে পরম যত্নে থাকা মুক্তার মত! নারী তুমি অনেক দামী তোমার কিমত অনেক! তুমি সস্তা কোন পণ্য নও! নও তুমি ভোগ বিলাসের কোন নর্তকী! যে তোমার মূল্য দেয় না, তোমার মূল্য বোঝে না সে কমবখত | সে নাদান | সে জ্ঞানহীন | সে মূর্খ | সে অজ্ঞ | দেখ কবি নজরুল কী বলেছে তোমার ব্যাপারে -
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

 হে নারী! তোমাকেই বলছি! আমার আল্লাহ দিয়েছে তোমাকে মান ইজ্জত | বসিয়েছে তোমাকে মায়ের সম্মানিত আসনে! নবীজীর পবিত্র যবানে উচ্চারিত হয়েছে - তোমার পদতলে সন্তানের বেহেশত! এ সম্মানেের আসন আর কার আছে? এ আসনে আল্লাহ যে আর কাউকে আসীন করেননি|
তুমি কখনো মা! কখনো আদরের বোন! কখনো প্রিয় স্ত্রী!

আল্লাহ তায়ালার সিমাহীন ও অসীম দয়া ও ইহসান যে,  তিনি তোমাকে এই সুন্দর শ্যামল ছায়া ঘেরা বসুন্ধরার আলো বাতাশ গ্রহণ করার তাওফিক দান করেছেেন! তিনি যদি তোমাকে সৃষ্টি না করতেন তাহলে কিছুতেই তুমি এ নেয়ামত উপভোগ করতে পারতে না!
এ দুনিয়া তোমার স্থায়ী বাসস্থান ও আবাস স্থল  নয়! এখানে তুমি একজন  মুসাফির মাত্র!  সামান্য অল্প কয়েকদিন  তোমাকে এখানে থাকতে হবে! এখান থেকে তোমাকে প্রস্তুতি নিতে হবে চিরস্থায়ী ঠিকানা চির সুখের নীড় জান্নাতের!
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম নর নারী উভয়ের জন্য প্রস্তুক করে রেখেছেন সুসজ্জিত করে রেখেছেন জান্নাত নামীয় বালা খানা| এবং তা অর্জনের জন্য কুরআন সুন্নায় বলে দিয়েছেন পথ ও পদ্ধতি | কিছু আমল যা করলে তুমি সহজে যেতে পারবে তোমার পরম ঠিকানা ও সফলতার শ্রেষ্ঠ চূড়ায়|

দুটি জিনিষের হেফাযত জান্নাতের যামানত!
(1) মুখ ও যবান |
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হুজুর স. বলেন,
 من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহবা) ও দুই রানের মাঝখানের বস্তু ( লজ্জাস্থান) এর হেফাযত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি| ( বুখারী শরীফ, খন্ড-10  পৃষ্ঠা -62  )
যবান বা  মুখ আল্লাহ তায়ালার এক বড় নেয়ামত | মানুষ আর চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে পার্থক্যগুলোর অন্যতম একটি হল কথা বলার ক্ষমতা ও শক্তি | মানুষ কথা বলতে পারে আর জীব জানোয়ার কথা বলতে পারে না | যবান হেফাযতের অর্থ হল, মুখের মাধ্যমে কাউকে কষ্ট না দেয়া | অশ্লিল কথা না বলা | বেহুদা ও অনর্থক কথা না বলা |
আবু শুরাইহ আল খুযায়ী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল স. বলেছেন,
من كان يؤمن بالله واليوم الاخر فليقل خيرا او ليسكت.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি ইমান রাখে সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে| ( বুখারী শরীফ,  খন্ড- 10 পৃষ্ঠা- 62)
আমাদের প্রতিটি কথা ও বক্তব্য  সংরক্ষণ করা হয় | এ জন্য রয়েছে সদা প্রস্তুত প্রহরী | আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
 ما يلفظ من قول إلا لديه رقيب عتيد .
অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য কৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে | ( সুরা ক্বাফ, আয়াত - 18)
শুধু তাই নয় মুখের উচ্চারিত কথাও আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দিবে | ইরশাদ হচ্ছে,
 يوم تشهد عليهم السنتهم وايديهم وارجلهم بما كانوا يعملون.
অর্থাৎ যে দিন সাক্ষ দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা যা তারা করত | ( সূরা নুর  আয়াত, 24)
আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও মডেল হুজুর স. হাসতেন খুবই কম | আর তিনি দীর্ঘ সময় চুপ থাকতেন |
হাদীসে এসেছে,
كان طويل الصمت قليل الضحك.
অর্থাৎ তিনি দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকতেন আর খুব অল্প হাসতেন!
শুধু তাই নয় নবী স. জবান ও মুখের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন |
বর্ণিত হয়েছে,
 الهم اني اعوذبك من شر سمعي ومن شر بصري ومن شر لساني ومن شر قلبي ومن شر منيي.
(2)  লজ্জাস্থান হেফাযত করা!
তুমি যেমন দামী মূল্যবান তোমার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তেমন মূল্যবান | এ জন্যই তো বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দশ দিরহাম তোমার লজ্জাস্থানের সম্মান স্বরুপ দিতে হয়! তা নাহলে তোমাকে ছোঁয়া স্পর্শ করাও যে নিষেদ | দেখ পিয়ারা রাসূল তোমার ব্যাপারে কী বলেন,
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হুযুর স. বলেন,
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযানের রোযা পালন করে, স্বীয় লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, স্বামীর আনুগত্য করে | কেয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর | ( সহীহ ইবনে হিব্বান,খন্ড-1 পৃষ্ঠা-673)

তোমার ব্যাপারে যেন কেউ কু- বাসনা করতে না পারে | খবীস মানুষের অন্তরে যেন কু - মতলব না জাগে | তাই আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দিয়েছেন গাইড লাইন পরামর্শ| তোমাকে নিষেদ করেছেন পর পুরুষের সাথে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে |
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا.

অর্থাৎ নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পর-পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে সেই ব্যক্তি যার অন্তরে ব্যাধি আছে কু-বাসনা করে বসবে,এবং তোমরা সংগত কথা বলবে।[সূরা আহযাব আয়াত- 32]
 আগেই বলেছি তুমি মুক্তার মত দামী| আর মুক্তা সবসময় লুকায়িত থাকে! তাই আল্লাহ তোমাকে ঘরে থাকতে বলেছেন| ঘর কিন্তু তোমার বন্দিশালা নয় বরং ঘর তোমার কর্মক্ষেত্র| প্রয়োজনে তুমি বাইরে বের হবে| তবে সাবধান কেউ যেন তোমাকে দেখে না ফেলে| শরয়ী বোরকা পরিধান করে|
আল্লাহ বলেন,
وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولي.
অর্থাৎ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।[সূরা আহযাব আয়াত,33]
রাস্তায় বের হবে দৃষ্টি রাখবে অবনত | এদিক ওদিক পরপুরুষের দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে না| সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না | ওড়নাটা ভালো করে বক্ষের উপর ফেলে রাখবে |এটা যে তোমার অন্তর্যামীর নির্দেশ!
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ.
 অর্থাৎ এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।আর সাধারণত: যা প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ-দেশে ফেলে রাখে।( সূরা নূর আয়াত, 31)




সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন