মসজিদের কিছু আদব: মুফতি রেজাউল করিম
ইসলামী টিউন!
ইসলামের ভাবনায় মসজিদের বিশেষ ও অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এই গুরুত্ব নানা কারণ ও পেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল —
এক.মসজিদ আল্লাহর ঘর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ...مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ .
‘‘যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমুহের মধ্যে কোন এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর গ্রন্থ (কুরআন)পাঠ করে, তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে অধ্যয়ন করে, তাহলে তাদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং তাদেরকে তাঁর রহমত ঢেকে নেয়, আর ফেরেশতাবর্গ তাদেরকে ঘিরে ফেলেন। আল্লাহ স্বীয়ং তাঁর নিকট ফেরেশতামণ্ডলীর কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।’’ (মুসলিম ২৬৯৯)
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন,
وأن المساجد لله فلا تدعوا مع الله أحداً. (الجن:18)
এবং মসজিদ মূলত আল্লাহর।
সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেক না। [জ্বিন : ১৮]
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে মসজিদের সম্মান ও পবিত্রতাকে শীর্ষাবস্থান দেয়ার উদ্দেশেই সম্মানসূচক ভাষায় মসজিদকে আল্লাহর ঘর বলে ডাকা হয়েছে।
মসজিদ পৃথিবীতে সর্বোত্তম জায়গা এবং আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় স্থান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أحب البلاد إلى الله مساجدها وأبغض البلاد إلى الله أسواقها .
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ, আর সবনিকৃষ্ট জায়গা হল, বাজার! [ মুসলিম: হাদীস নং ১০৭৬]
1. মসজিদে প্রবেশ করতে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। বের হবে বাম পা দিয়ে। আনাস রা. বলেন : সুন্নত হল যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন বের হবে বাম পা দিয়ে বের হবে।
প্রবেশের এবং বের হবার দোয়া পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
إذا دخل أحدكم المسجد فليقل اللهم افتح لي أبواب رحمتك وإذا خرج فليقل اللهم إني أسألك من فضلك.
(رواه مسلم : 1165.)
2. মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় ব্যতীত বসবে না। আবু কাতাদাহ আনসারী রা. বলেন,
إذا دخل أحدكم المسجد فليركع ركعتين قبل أن يجلس.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, দুই রাকাত সালাত আদায় না করে সে-যেন না বসে। [মুসলিম: হাদীস নং ১০৯৭]
3. মসজিদে আগে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের প্রতি আগ্রহী থাকা- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন:
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا.
অনুবাদ: যদি মানুষ জানতে পারত, আযান এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের মধ্যে কি ফজিলত, আর তা লটারি ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব না হত, তবে তার জন্য লোকেরা অবশ্যই লটারি করত! [বুখারী : হাদীস নং ৬১৫]
4. মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা, সালাতরত ব্যক্তি বা কুরআন পাঠককে বিরক্ত করা মাকরূহ। চাই তা সাধারণ কথা বলার কারণে হোক বা উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করার কারণে হোক। পার্শ্ববর্তীজনকে বরং কষ্ট দেয়াই অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم خرج على الناس وهم يصلون وقد علت أصواتهم بالقراءة، فقال: "إن المصلي يناجي ربه فلينظر بما يناجيه به ولا يجهر بعضكم على بعض بالقرآن.
অনুবাদ: সালাত আদাকারী তার প্রভুর সাথে গোপনে কথা বলে। তাই, সে কী বলছে তার প্রতি খেয়াল রাখা উচিত । তোমরা কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের উপর উচ্চ শব্দ করোনা। ( আবু দাউদ)
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফু‘ হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سيكون في آخر الزمان قوم يجلسون في المساجد حلقاً حلقاً، إمامهم الدنيا، فلا تُجالسوهم؛ فإنه ليس لله فيهم حاجة.
অনুবাদ: শেষ জামানায় এমন সম্প্রদায়ের লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মসজিদে হালকাবন্দী হয়ে বসবে, তাদের লক্ষ্য হবে দুনিয়া। তোমরা তাদের সাথে বসবে না। কারণ, তাদের মধ্যে আল্লাহর জন্য কোন প্রয়োজন নাই।
আল্লামা শফি (রহ.) আদাবুল মাসাজিদ নামক গ্রন্থে লিখেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলা শুরু করে তখন ফেরেশতারা তাকে প্রথমে বলে হে আল্লাহর বন্ধু চুপ থাক। তারপর যদি চুপ না হয় তাহলে বলে হে আল্লাহর শত্র“ চুপ থাক, তারপরও যদি কথা বলে তাহলে বলে হে আল্লাহর অভিশপ্ত ব্যক্তি চুপ থাক।
5. জুমু‘আর দিন খুতবা শ্রবণ করার জন্য চুপ করে থাকবে।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت.
“যখন তুমি তোমার সাথীকে জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় বলবে, তুমি চুপ কর, তাহলে অন্যায় করলে”। (বুখারী ও মুসলিম)
একেবারে ছোট ও অবুঝ শিশু, যারা মসজিদের সম্মান ও নামাজের গুরুত্বের জ্ঞান রাখে না, তাদের মসজিদে আনার অনুমতি নেই। কেননা এতে সাধারণত মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্ন ঘটে।
এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত ওয়াসিলা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রূপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চস্বর, দণ্ডদান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৫০)
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুরা না বুঝে মসজিদের আদববহির্ভূত কিছু কাজ করে ফেলে। উচ্চৈঃস্বরে কথাবার্তা ও হৈ-হুল্লোড় করে থাকে, যা মসজিদের আদবপরিপন্থী কাজ। একটি হাদিসে মসজিদে উচ্চ আওয়াজ ও চেঁচামেচিকে কিয়ামতের নিদর্শন হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। এমনকি কিছু বাচ্চা মসজিদে এসে প্রস্রাব-পায়খানাও করে দিতে দেখা যায়। এতে শিশুদের গুনাহ না হলেও বড়রা শিশুদের এ সুযোগ করে দেওয়ায় তাদের গুনাহ হবে।