বুখারী শরীফও ত্রুটিমুক্ত নয়

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও নিজের সমস্ত জ্ঞানগত ও শাস্ত্রগত পূর্ণাঙ্গতা থাকা সত্বেও একজন মানুষ ছিলেন জন্য সহীহ বুখারী সংকলনে তার থেকে ভুল বিস্মৃতি পদস্খলন ক্রটি বিচ্যুতি ঘটা অসম্ভব নয় যারা মনে করেন, বুখারী শরীফের প্রতিটি হাদীসই সহীহ এবং সূত্র ও মূলপাঠের বিবরণে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে ভুল হয়নি। তাদের এ ধারনা যথার্থ নয়। যথার্থ হলো, সহীহ বুখারীতেও ক্রটি বিচ্যুতি হয়েছে। বুখারী শরীফও ত্রুটিমুক্ত নয়। সহীহ বুখারীতেও এমন অনেক বর্ণনাকারী আছেন যারা কাদরিয়া, জাহমিয়া, শিয়া, নাসেবী ধর্মবিশ্বাসের অধিকারী। তাছাড়া বুখারী শরীফে এমন অনেক রাবীও আছেন যারা মুনকারুল হাদীস এবং ওয়াহমী (ভুলের শিকার। এসবের বিস্তারিত বিবরণ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদইয়ুস সারী মুকাদ্দিমায় ফাতহুল বারী”তে দিয়েছেন।(পৃ:384-456)




ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উপর যে সব প্রশ্ন সমালোচনা হয়েছে সেগুলো প্রতিহত করতে গিয়ে স্বীয় পূর্ণ ফিকহী ইলমী মেধা খরচ করে বলতে হল

لكل جواد كبوة


অর্থাৎ “প্রতিটি নিপূন তেজী ঘোড়াও হোচট খায়।”
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আমীরুল মুমিনিনা ফিল হাদীস হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহি  এর এ নিম্নোক্ত মূল্যবান বাণীটির উদ্বৃতি দেন,

 وقال ابن معين لست اعجب ممن يحدث فيخطئ انما اعجب ممن يحدث فيصيب
অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, কেউ হাদীস বর্ণনায় ভুল বিচ্যুতির শিকার হলে এতে আমি আশ্চার্য হইনা আমার তো বিস্ময় হয় , ভুল না করলে।(লিসানুল মিযান,1/17)
কিন্তু বুখারীর সমালোচিত রাবীদের সম্পর্কে বলা হয় যে, এসব রাবীর ব্যাপারে অন্যরা সমালোচনা করেছেন। ইমাম বুখারীর নিকট সে সমালোচনা প্রমাণিত নয় । এ জন্য ইমাম বুখারী সেসব বর্ণনাকারীর হাদীস স্বীয় সহীহ বুখারীতে নিয়েছেন।
কিন্তু এর উত্তর কি যে, সহীহ বুখারীতে এরুপ বর্ণনাকরীর সংখাও অনেক যাদেরকে স্বয়ং ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় গ্রন্থাবলীতে সমালোচনা করেছেন
যেমন,
এক. باب الاستنجاء بالماء এর অধিনে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সূত্রসহকারে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন-
حدثنا ابوالوليد هشام بن عبد الملك قال حدثنا شعبة عن ابي معاذ واسمه عطاء بن ابي ميمونة قال سمعت انس بن مالك يقول كان النبي صلي الله عليه وسلم اذا خرج لحاجته اجئ انا وغلام ومعنا اداوة من ماء يعني يستنجي به. (بخاري-1/27)
এ হাদীসে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার নাম আতা ইবনে আবু মাইমুনা। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “ কিতাবুয যুআফাউস সগীর”রে উল্লেখ করেছেন-
عطاء بن ابي ميمونة ابو معاذ مولي انس وقال يزيد بن هارون مولي عمران بن حسين كان يري القدر
অর্থাৎ আবু মুয়ায আতা ইবনে আবু মাইমুনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর গোলাম।ইয়াযিদ ইবনে হারুন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তিনি ইমরান ইবনে হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি  এর গোলাম। তিনি কাদরিয়া ফিরকার আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর-271)
এজন্য হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী  তার সম্পর্কে বলেন,
وقال البخاري وغير واحد كان يري القدر
অর্থাৎ ইমাম বুখারী  ও অন্যন্যরা বলেছেন,তিনি কাদরিয়া ফিরকার আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন।(হাদউস সারী মুকাদ্দিমায় ফাতহুল বারী-425,তাহযিবুত তাহযিব,7/216)
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা: কোরআন হাদীসের নির্দেশ জানতে ক্লিক করুন এখানে
দুই. এমনিভাবে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহিহ বুখারীর “কিতাবুল মাগাযী”তে  
باب بعث ابي موسي ومعاذ رض الي اليمن
এর অধিনে একটি হাদিস সূত্রসহকারে উল্লেখ করেছেন-
حدثني عباس بن الوليد قال حدثنا عبد الواحد عن عائذ قال حدثنا قيس بن مسلم قال سمعت بن طارق بن شهاب يقول حدثني ابو موس الاشعري قال بعثثني رسول الله صلي الله عليه وسلم. (بخاري- 2/663)
এ হাদীসে একজন বর্ণনাকারী হলেন, আইউব ইবনে আইয। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “কিতাবুয যুআফাউস সগীর’’ এ বলেন,
ايوب بن عائذ الطائ كان يري الارجاء
অর্থাৎ আবু আইউব মুরজিয়া সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর,253)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী  বলেন,
وقال  البخاري كان يري الارجاء
অর্থাৎ ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুরযিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা পোষণ করতেন(তাহযিবুত তাহযিব,407)
আল্লামা ইবনুল মোবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

كان صاحب عبادة ولكنه مرجئا
অর্থাৎ তিনি ইবাদতগুযার লোক ছিলেন তবে তিনি মুরযিয়া সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন।(তাহযিবুত তাহযিব,407)
হাফেয যাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উপর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,
وكان من المرجئة قال له البخاري واورده في الضعفاء لارجائه والعجب من البخاري يغمزه وقد احتج به
অর্থাৎ আবু আইউব মুরযিয়া সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুরযিয়া হওয়ার কারণে তাকে দূর্বলদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইমাম বুখারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উপর বিস্ময় হয় যে, তিনি তার বিরুদ্ধে সমালোচনাও করেছেন আবার এবং তার হাদীস দ্বারা প্রমাণও পেশ করেছেন। অর্থাৎ তার রেওয়ায়েত গ্রহণ করেন।
তিন. এমনিভাবে আরেক বর্ননাকারী হলেন, ইসমাঈল ইবনে আবান আলওররাক আল কূফী। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “কিতাবুয যুআফাউস সগীর” এ লেখেছেন,
اسماعيل بن ابان عن هشام بن عروة متروك الحديث كنيته ابو اسحاق.
অর্থাৎ ইসমাঈল ইবনে আবান যিনি হিশাম ইবনে উরওয়া থেকে বর্ণনা করেন।তার হাদীস পরিত্যাজ্য তার উপনাম আবু ইসহাক।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর,252)
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার হাদীস পরিত্যাজ্য বলে উল্লেখ করেন অথচ এই পরিত্যাক্ত ব্যক্তি থেকে একটি নয় অনেক হাদীস গ্রহণ করেছেন। এই জন্য হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “হাদইয়ুস
সারী”তে লিখেছেন


اسماعيل بن الوراق الكوفي احد شيوخ البخاري ولم يكثر عنه.
অর্থাৎ ইসমাঈল ইবনে আবান আলওররাক আল কূফী ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একজন উস্তাদ ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে অনেক হাদীস গ্রহণ করেননি।(হাদইয়ুস সারী,390)
উপরোক্ত রাবীগণ ছাড়া আপনি ইমাম বুখারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “কিতাবুয যুআফা” অধ্যায়ন করলে দেখতে পাবেন যে,নিম্নোক্ত বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সমালোচনা করেছেন তথা স্বয়ং তিনি সেসব রাবীকে অভিযুক্ত এবং দুর্বল সাব্যস্ত করেছেনঅতপর সহীহ বুখারীতে তাদের রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন।
এক. যুবাইর ইবনে মুহাম্মাদ তাইমি। দুই.সাইদ ইবনে আবু আরুবা। তিন. আব্দুল্লাহ ইবনে লাবীদ। চার. আব্দুল মালিক ইবনে আমীন। পাচ. আব্দুল ওয়ারিস ইবনে সাইদ। ছয়. কাহমাস ইবনে মিনহাল। সাত. আতা ইবনে ইয়াযিদ। শুধু তাই নয় ইমরান ইবনে হিত্তানের ন্যায় খারেজী বরং খারেজী নেতা থেকেও একটি রেওয়ায়াত কিতাবুল লিবাসএ এনেছেন এই ইমরান সে যে, হযরত আলী   এর ঘাতক আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের ন্যায় বদবখতের শোকগাথা লিখেছেন,

ايك تقي ني كيسي اجهي ضرب لكائ جس سي اس كي نيت خدا كي رضا حاصل كرني تهي.
অর্থাৎ “একজন পরহেযগার ব্যক্তি কতই সুন্দর আঘাত এনেছে । যার ফলে তার নিয়ত ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।”
এরুপভাবে যে বদবখত ইমরান অন্য বদবখত (ইলমের শহর হযরত আলী  এর ঘাতক ) কে মুত্তাকি সাব্যস্ত করেছে। রহমত ও সন্তুষ্টির যোগ্য সাব্যস্ত  করেছে। তাজ্জবের বিষয় ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার রেওয়ায়াত সহীহ বুখারীতে স্থান দিয়েছেন।
মারওয়ন ইবনে হাকামের ন্যায় প্রশিদ্ধ কবি থেকেও কিতাবুল মানাকিবে দুটি রেওয়ায়েত নিয়েছেন।(বুখারী 527)
এই সেই মারওয়ান যার ষড়যন্ত্রে ও কূটচালের কারণে হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর শাহাদাত বরণ করেছেন। যে হযরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ন্যায় আশারায় মুবাশশারার একজন সদস্যকে তীর নিক্ষেপ করে আহত করে যার যখমের কারণে তিনি শহীদ হন।
বুখারীর কিতাবুত তাফসীরে সূরা আনফালের অধিনে একটি সনদে ইবনে আবু নাজীহ নামক একজন রাবী এসেছে,
তিনি হলেন,আব্দুল্লাহ ইবনে আবু নাজীহ এর নাম হলো, ইয়াসার সাকাফী । ইয়াহইয়া আল কাত্তান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, 


هو عبد الله واسم ابن ابي نجيح يسار الثقفي قال يحيي القطان كان قدريا
(نصر الباري – كتاب التفسير 237)

প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের কণ্ঠে গাওয়া গজল গায়রে মাহরামদের শ্রবণ করার হুকুম কী? জানতে এখানে ক্লিক করুন।
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন