স্ত্রীর মুখের লালা গলায় চলে গেলে রোযার হুকুম কী?

স্ত্রীর মুখের লালা গলায় চলে গেলে রোযার হুকুম কী?

মুফতি রেজাউল করিম।।

রোযা অবস্থায়   স্ত্রীর ঠোটে চুমু দেওয়ার  ফলে যদি  একের লালা অন্যের মুখে চলে যায় এবং মুখে যাবার পর যদি তা গিলে ফেলা হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। পরবর্তীতে কাযা ও কাফফারা উভয়ই আবশ্যক হবে।

ফতোয়ার গ্রহণযোগ্য কিতাব "হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ" তে এসেছে,

                         من موجب الكفارة ابتلع بزاق زوجته أو بزاق صديقه لأنه يتلذذبه

অর্থাৎ কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার আর একটি কারণ হলো, স্ত্রীর বা কোনো সাথীর  লালা গিলে ফেলা ৷ কেননা, তা উপভোগ্য ৷
[হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, ৬৬৭]

ফতোয়ায় হিনদিয়ায় এসেছে,

ولو ابتلع بزاق غيره فسد صومه بغير كفارة إلا إذا كان بزاق صديقه فحينئذ تلزمه الكفارة
অর্থাৎ যদি অন্যের লালা গিলে ফেলে কাফফারা ব্যতীত তার রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ তবে যদি কোনো বন্ধুর লালা গিলে ফেলে কাফফারাও আবশ্যক হবে ৷
[হিনদিয়া, ১/ ২০৩]

কেউ যদি রোযা রেখে স্ত্রীর থুথু গিলে ফেলে সে ক্ষেত্রে ইবনে কুদামা  রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

                                أَوْ بَلَعَ رِيقَ غَيْرِهِ , أَفْطَرَ ; لأَنَّهُ ابْتَلَعَهُ مِنْ غَيْرِ فَمِهِ
অর্থাৎ অথবা যদি অন্যের থুথু গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ কেননা সে অন্যের মুখের থুথু গলধ:করণ করেছে ৷

আরো পড়ুন→মহামারিতে মুমিনের করণীয়

                       নিজ মুখের থুথু বা লালা গিলে ফেলার হুকুম


ইসলামের সকল বিধানাবলী সহজতার উপর ভিত্তিশীল ৷ আল্লাহ তায়ালা কোনো বিধানকে বান্দার জন্য কঠিন করেননি ৷ রোযাসংক্রান্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر    

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,


وَقَالَ عَطَاءٌ وَقَتَادَةُ يَبْتَلِعُ رِيقَهُ   
অর্থাৎ আতা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোজাদার তার মুখের থুথু গিলে ফেলতে পারে।[বুখারী, পরিচ্ছদঃ ১২১০]

ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাব " আদদুররুল মুখতার" এ এসেছে,

নিজ মুখের  লালা জমা না করে গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
[আদদুররুল মুখতার ৩/৩৬৭]

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
فإن ابتلاع الريق العادي الذي لم يخرج من الفم لا يفطر  كما ذكر النووي  وغيره، لكن إذا  خرج الريق من الفم ثم أعاده وابتلعه ففي هذه الحالة يفطر

অর্থাৎ থুথু যদি  মুখ  থেকে  বের  না করে গিলে ফেলে   তাহলে  রোযা  ভাঙ্গবে না ৷ তবে যদি  মুখ  থেকে বের  হওয়ার পর  পূণরায়  মুখে নিয়ে গিলে ফেলে তাহলে  রোযা  ভেঙ্গে যাবে ৷

তিনি আরো বলেন,
  ابتلاع الريق لا يفطر بالإجماع إذا كان على العادة لأنه يعسر الاحتراز منه قال أصحابنا: وإنما لا يفطر بثلاثة شروط،

أحدها: أن يتمحض الريق فلو اختلط بغيره وتغير لونه أفطر بابتلاعه...

الشرط الثاني: أن يبتلعه من معدنه فلو خرج عن فيه ثم رده بلسانه وابتلعه أفطر، قال أصحابنا: حتى لو خرج إلى ظاهر الشفة فرده وابتلعه أفطر لأنه مقصر بذلك ولأنه خرج عن محل العفو..... الشرط

 الثالث: أن يبتلعه على العادة فلو جمعه قصداً ثم ابتلعه فهل يفطر، فيه وجهان مشهوران ذكرهما المصنف بدليلهما أصحهما لا يفطر

 অর্থাৎ" সকল ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে স্বাভাবিক থুথু গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না ৷ কেননা তা থেকে বিরত থাকা কষ্টকর ৷ আইম্মায়ে কেরাম বলেছেন, তিনটি শর্তসাপেক্ষে থুথু গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হবে না ৷

আরো পড়ুন→ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ স্পর্শ করা ও পড়া যাবে কি?

১নং শর্ত:  যদি খালেছ থুথু গিলে ফেলে ৷ থুথুর সাথে যদি অন্য কোনো বস্তু মিশ্রিত হয়ে তার রং পরিবর্তন হয়ে যায় এমন থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷

২নং শর্ত: মুখে থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা ৷ থুথু যদি মুখ থেকে বের হয়ে যায় পূণরায় জিহ্বা দিয়ে মুখে নিয়ে গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷

৩নং শর্ত:  স্বাভাবিক  থুথু গিলে ফেলে ৷ থুথু যদি অল্প অল্প করে একত্রিত করে গিলে ফেলে তাহলে অধিক বিশুদ্ধ মত হলো রোযা ভাঙ্গবে না ৷

ইবনে কুদামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

 وَمَا لا يُمْكِنُ التَّحَرُّزُ مِنْهُ , كَابْتِلاعِ الرِّيقِ لا يُفَطِّرُهُ , لأَنَّ اتِّقَاءَ ذَلِكَ يَشُقُّ

অর্থাৎ যা পরিত্যাগ করা সম্ভব নয় ৷ যেমন থুথু গিলে ফেলা ৷ এতে রোযা ভঙ্গ হবে না ৷ কেননা, এর থেকে বাঁচা কষ্টকর ৷
[আল মুগনী, ৩/১৬]


রোযা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে করণীয় কি?

রোযা অবস্থায় রজঃস্রাব হলে ওই দিনের রোযা হবে না ৷  কিন্তু রমযানের সম্মানে সেদিন ইফতার পর্যন্ত তার পানাহার থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। পরদিন থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রোযা রাখতে হবে না।

শাইখ ইবনে উসাইমিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وإذا حاضت وهي صائمة بطل صيامها ولو كان ذلك قبيل الغروب بلحظة ، ووجب عليها قضاء ذلك اليوم إن كان فرضاً
অর্থাৎ যদি রোযা অবস্থায় হায়েয বা মাসিক শুরু হয় তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে   যদি সূর্যাস্তে এক মূহুর্ত পূর্বেও হয় ৷ যদি ফরয রোযা হয়ে থাকে তাহলে ওই দিনের রোযা কাযা করা আবশ্যক ৷
[আদ দিমাউত  তবয়্যিয়্যা  লিন  নিসা,২৮]

"ফতোয়ায় লাজনাতুদ দায়িমা"য়  এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,

إذا كان الحيض أتاها قبل الغروب بطل الصيام وتقضيه ، وإن كان بعد الغروب فالصيام صحيح ولا قضاء عليها

অর্থাৎ সূূর্যাস্তের পূর্বে যদি মাসিক আরম্ভ হয় তাহলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে ৷ পরে তা ক্বাযা করবে ৷ আর যদি সূর্যাস্তের পর মাসিক শুরু হয় তাহলে রোযা সঠিক হবে ৷ ক্বাযা করা লাগবে না ৷
[লাজনাতুদ দায়িমা, ১০/ ১৫৫]

আরো পড়ুন→আবু হানিফা কে কি কুফরী হতে তাওবা করানো হয়ে ছিলো?

[প্রিয় পাঠক! আপনিও এ ব্লগে লিখতে পারেন ৷ লেখার বিষয় হতে পারে, ইসলামি আর্টিকেল, জীবনাচার, গল্পগুচ্ছ, মাসয়ালা, ইত্যাদি ৷ আপনার লেখা ছবিসহ আপনার নামে ছাপা হবে ৷ লেখা পাঠাতে হবে এই মেইলে
 rezua1995@gmail.com ]



সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন