আবু হানিফা কি মুরজিয়া ছিলেন?

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেন,
نعمان بن ثابت أبو حنيفة ..... كان مرجئا سكتوا عنه وعن رايه وعن حديثه  

অর্থাৎ নুমান ইবনে সাবিত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ....তিনি মুরজিয়া ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ তার থেকে, তার মতামত থেকে এবং তার হাদীস থেকে নীরব ছিলেন। (তারীখুল কাবীর,৮/৮১, রাবী নং ২২৫৩)
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্য এক স্থানে ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আলোচনায় বলেন,
يعقوب بن ابراهيم أبو يوسف القاضي وصاحبه ابو حنيفة تركوه    
অর্থাৎ ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম আবু ইউসুফ কাযী তার সাথী আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে মুহাদ্দিসগণ পরিত্যাগ করেছেন। ( তারিখুল কাবীর,৮/৩৯৭)
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মুহাদ্দিসগণ আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সম্পর্কে নীরব ছিলেন এবং তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন,আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি “মুরজিয়া” ছিলেন। এতে সহজেই অনুমেয় হয় যে তিনি আবু হানিফার একটিই মাত্র ক্রুটি পেয়েছেন।



মুরজিয়া হওয়ার কারণে কোন মুহাদ্দিস দুর্বল হন না।


মুরজিয়া হওয়ার কারণে কোনো মুহাদ্দিস দুর্বল বা পরিত্যাক্ত হন না।মুহাদ্দিসগণের গ্রহণযোগ্যতার মূল ভিত্তি হলো, নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত সততা ও বর্ণিত হাদীসের নির্ভুলতা প্রমাণ করা।
তাছাড়া ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ গ্রন্থে অনেত মুরজিয়া কাদরেয়অ ও খারেজী মুহাদ্দীসগণের হাদীসও সংকলণ করেছেন। যেমন,
এক. باب الاستنجاء بالماء এর অধিনে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সূত্রসহকারে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন-

حدثنا ابوالوليد هشام بن عبد الملك قال حدثنا شعبة عن ابي معاذ واسمه عطاء بن ابي  ميمونة قال سمعت انس بن مالك يقول كان النبي صلي الله عليه وسلم اذا خرج لحاجته اجئ انا وغلام ومعنا اداوة من ماء يعني يستنجي به. (بخاري-১/২৭)
এ হাদীসে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার নাম আতা ইবনে আবু মাইমুনা। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “ কিতাবুয যুআফাউস সগীর”রে উল্লেখ করেছেন-
عطاء بن ابي ميمونة ابو معاذ مولي انس وقال يزيد بن هارون مولي عمران بن حسين كان يري القدر
অর্থাৎ আবু মুয়ায আতা ইবনে আবু মাইমুনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর গোলাম। ইয়াযিদ ইবনে হারুন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তিনি ইমরান ইবনে হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর গোলাম। তিনি কাদরিয়া ফিরকার আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর-২৭১)
এজন্য হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী  তার সম্পর্কে বলেন,
وقال البخاري وغير واحد كان يري القدر

অর্থাৎ ইমাম বুখারী  ও অন্যন্যরা বলেছেন,তিনি কাদরিয়া ফিরকার আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন। (হাদউস সারী মুকাদ্দিমায় ফাতহুল বারী-৪২৫,তাহযিবুত তাহযিব,৭/২১৬)
দুই. এমনিভাবে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহিহ বুখারীর “কিতাবুল মাগাযী”তে 
باب بعث ابي موسي ومعاذ رض الي اليمن
এর অধিনে একটি হাদিস সূত্রসহকারে উল্লেখ করেছেন-
حدثني عباس بن الوليد قال حدثنا عبد الواحد عن عائذ قال حدثنا قيس بن مسلم قال سمعت بن طارق بن شهاب يقول حدثني ابو موس الاشعري قال بعثثني رسول الله صلي الله عليه وسلم. (بخاري- ২/৬৬৩)
এ হাদীসে একজন বর্ণনাকারী হলেন, আইউব ইবনে আইয। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “কিতাবুয যুআফাউস সগীর’’ এ বলেন,
ايوب بن عائذ الطائ كان يري الارجاء
অর্থাৎ আবু আইউব মুরজিয়া স¤প্রদায়ের লোক ছিলেন।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর,২৫৩)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وقال  البخاري كان يري الارجاء
অর্থাৎ ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুরযিয়া স¤প্রদায়ের আকিদা পোষণ করতেন।(তাহযিবুত তাহযিব,৪০৭)
আল্লামা ইবনুল মোবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
كان صاحب عبادة ولكنه مرجئا
অর্থাৎ তিনি ইবাদতগুযার লোক ছিলেন তবে তিনি মুরযিয়া স¤প্রদায়ের লোক ছিলেন।(তাহযিবুত তাহযিব,৪০৭)
হাফেয যাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উপর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,
وكان من المرجئة قال له البخاري واورده في الضعفاء لارجائه والعجب من البخاري يغمزه وقد احتج به
অর্থাৎ আবু আইউব মুরযিয়া স¤প্রদায়ের লোক ছিলেন। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুরযিয়া হওয়ার কারণে তাকে দূর্বলদের অন্তভ‚ক্ত করেছেন। ইমাম বুখারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উপর বিস্ময় হয় যে, তিনি তার বিরুদ্ধে সমালোচনাও করেছেন আবার এবং তার হাদীস দ্বারা প্রমাণও পেশ করেছেন। অর্থাৎ তার রেওয়ায়েত গ্রহণ করেন।
তিন. এমনিভাবে আরেক বর্ননাকারী হলেন, ইসমাঈল ইবনে আবান আলওররাক আল কূফী। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “কিতাবুয যুআফাউস সগীর” এ লেখেছেন,
اسماعيل بن ابان عن هشام بن عروة متروك الحديث كنيته ابو اسحاق
অর্থাৎ ইসমাঈল ইবনে আবান যিনি হিশাম ইবনে উরওয়া থেকে বর্ণনা করেন।তার হাদীস পরিত্যাজ্য তার উপনাম আবু ইসহাক।(কিতাবুয যুআফাউস সগীর,২৫২)
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার হাদীস পরিত্যাজ্য বলে উল্লেখ করেন অথচ এই পরিত্যাক্ত ব্যক্তি থেকে একটি নয় অনেক হাদীস গ্রহণ করেছেন। এই জন্য হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “হাদইয়ুস সারী”তে লিখেছেন
اسماعيل بن الوراق الكوفي احد شيوخ البخاري ولم يكثر عنه
অর্থাৎ ইসমাঈল ইবনে আবান আলওররাক আল কূফী ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একজন উস্তাদ ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে অনেক হাদীস গ্রহণ করেননি।(হাদইয়ুস সারী,৩৯০)

উপরোক্ত রাবীগণ ছাড়া আপনি ইমাম বুখারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “কিতাবুয যুআফা” অধ্যায়ন করলে  দেখতে পাবেন যে,নিম্নোক্ত বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সমালোচনা করেছেন তথা স্বয়ং তিনি সেসব রাবীকে অভিযুক্ত এবং দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। অতপর সহীহ বুখারীতে তাদের রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন।
এক. যুবাইর ইবনে মুহাম্মাদ তাইমি। দুই.সাইদ ইবনে আবু আরুবা। তিন. আব্দুল­াহ ইবনে লাবীদ। চার. আব্দুল মালিক ইবনে আমীন। পাচ. আব্দুল ওয়ারিস ইবনে সাইদ। ছয়. কাহমাস ইবনে মিনহাল। সাত. আতা ইবনে ইয়াযিদ। শুধু তাই নয় ইমরান ইবনে হিত্তানের ন্যায় খারেজী বরং খারেজী নেতা থেকেও একটি রেওয়ায়াত “কিতাবুল লিবাস” এ এনেছেন। এই ইমরান সে যে, হযরত আলী   এর ঘাতক আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের ন্যায় বদবখতের শোকগাথা লিখেছেন,
ايك تقي ني كيسي اجهي ضرب لكائ جس سي اس كي نيت خدا كي رضا حاصل كرني تهي.
অর্থাৎ “একজন পরহেযগার ব্যক্তি কতই সুন্দর আঘাত এনেছে । যার ফলে তার নিয়ত ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।”
এরুপভাবে যে বদবখত ইমরান অন্য বদবখত (ইলমের শহর হযরত আলী  এর ঘাতক ) কে মুত্তাকি সাব্যস্ত করেছে। রহমত ও সন্তুষ্টির যোগ্য সাব্যস্ত  করেছে। তাজ্জবের বিষয় ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার রেওয়ায়াত সহীহ বুখারীতে স্থান দিয়েছেন।
মারওয়ন ইবনে হাকামের ন্যায় প্রশিদ্ধ কবি থেকেও কিতাবুল মানাকিবে দুটি রেওয়ায়েত নিয়েছেন।(বুখারী ৫২৭)
এই সেই মারওয়ান যার ষড়যন্ত্রে ও কূটচালের কারণে হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর শাহাদাত বরণ করেছেন। যে হযরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ন্যায় আশারায় মুবাশশারার একজন সদস্যকে তীর নিক্ষেপ করে আহত করে। যার যখমের কারণে তিনি শহীদ হন।
বুখারীর কিতাবুত তাফসীরে সূরা আনফালের অধিনে একটি সনদে ইবনে আবু নাজীহ নামক একজন রাবী এসেছে,
তিনি হলেন,আব্দুল­াহ। ইবনে আবু নাজীহ এর নাম হলো, ইয়াসার সাকাফী । ইয়াহইয়া আল কাত্তান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
هو عبد الله واسم ابن ابي نجيح يسار الثقفي قال يحيي القطان كان قدريا
(نصر الباري – كتاب التفسير ২৩৭)


READ MORE আবু হানিফা কে কি কুফরী হতে তাওবা করানো হয়েছিল?
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন