মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। শুধু সেরা সৃষ্টিই নয় বরং সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি হলো মানুষ। আল্লাহ মানবজাতিকে অনেক ভালোবেসে তার দাসত্ব বা গোলামী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আবার মানুষ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
‘সময়ের কসম! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। ওই সব লোক ব্যতিত যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং নেক আমল করেছে।’ (সুরা আছর : আয়াত ১-২)
মানুষের ক্ষতির মধ্যে থাকার মানে-ই হচ্ছে তাঁর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকা।
মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। প্রতিনিয়ত তার কোনো না কোনো গোনাহ হয়ে থাকে। মানুষের পাহাড়সম গোনাহ হয়ে গেলেও ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তার দোষত্রুটি গোপন রেখে তাকে করেন নিরাপদ।
আরো পড়ুন>>>
আবু হানিফা কি মুরজিয়া ছিলেন?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
সে সত্ত্বার শপথ! যার হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা গোনাহ না কর; তবে আল্লাহ তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন এবং এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন, যারা গোনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে। অতপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। (মুসলিম)
তাওবাকারীর মর্যাদা ও সম্মান
(1) আল্লাহ তাওবাকারী কে ভালোবাসেন ও মহব্বত করেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকে ভালবাসেন৷
(সূরা: বাকারা-২২২)
আরো পড়ুন>>>
আবু হানিফা কে কি কুফরী হতে তাওবা করানো হয়ে ছিলো?
(2) তাওবাকারী কে আল্লাহ উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ وَإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
অর্থাৎ আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি৷ ( সূরা হুদ আয়াত - 3)
আরো পড়ুন>>>
বুখারী শরীফও ত্রুটি মুক্ত নয়৷
(3) তাওবাকারী দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম হবে৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থাৎ মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
( সূরা নূর আয়াত, 31)
(4) তাওবাকারীর জন্য ফেরেস্তাগণ দুয়া করেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
অর্থাৎ যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। ( সূরা গাফের আয়াত,7)
আরো পড়ুন>>>
মহিলাদের কবর যিয়ারত ও জুনুবী ব্যক্তির ভুলক্রমে আদায়কৃত নামাযের হুকুম কি?
(5) তাওবাকারীর উপর আসমান থেকে বরকত অবতীর্ন হয় ও সর্বপ্রকার শক্তি বৃদ্ধি পায়৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِين
অর্থাৎ আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না। (সূরা হুদ আয়াত, 52)
(6) সর্বপ্রকার কল্যাণের মাধ্যম হলো তাওবা ও ইস্তেগফার৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُم
অর্থাৎ অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর৷ ( সূরা তাওবা আয়াত, 3)
তাওবা কবুলের শর্তসমূহ
গোনাহ যদি আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যকার বিষয় হয় এবং কোনো বান্দার সম্পৃক্ততা না থাকে, তবে তাওবা কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পালন করা আবশ্যক। যা তুলে ধরা হলো-
প্রথম শর্ত- الإقلاع عن المعصية অর্থাৎ বান্দাকে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত- أن يندم على فعلها
অর্থাৎ বান্দাকে কৃত গোনাহের জন্যে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হতে হবে।তৃতীয় শর্ত- أن يعزم أن لا يعود إليها أبدًا
অর্থাৎ পুনরায় গোনাহ না করার ব্যাপারে বান্দাকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। এই তিনটি শর্তের মধ্যে যদি একটি শর্তও লংঘন হয় তাহলে তাওবা কখনো শুদ্ধ হবে না।পক্ষান্তরে গোনাহের কাজটি যদি বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত তিনটি শর্তের সঙ্গে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে।চতুর্থ শর্ত-وأن يبرأ من حق صاحبها
অর্থাৎ অপরাধী ব্যক্তি হকদার ব্যক্তির হক আদায় করতে হবে।যেমন- কেউ যদি অন্যায়ভাবে ধন-মাল বা বিষয়-সম্পত্তি জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে দখল করে নেয়, তবে তা ফেরত দিতে হবে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলে অপরাধীকে নির্দিষ্ট হদ বা শাস্তি ভোগ করতে হবে, নতুবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এমনকি কারো অনুপস্থিতিতে গীবত-শেকায়াত করলে সে ব্যাপারেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
আরো পড়ুন>>>
যদি বিয়ের পূর্বে স্ত্রীর মহর নির্ধারণ না করা হয়ে থাকে ; তাহলে তার মহর আদায় করার পদ্ধতি কী?
সুতরাং আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে তাওবার পূর্বে উপরোল্লিখিত চারটি শর্ত পালনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ তাওবা করে আল্লাহ পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন।