আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের সময় তোপের মুখে পড়েছে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। তাদেরই একজনকে প্যান্ট খুলে, তিনি হিন্দু না মুসলিম সেই পরিচয় নিশ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এক সাংবাদিক। মারধর করা হয় আরো দুই সংবাদকর্মীকে সোমবার খবর সংগ্রহ করতে গেলে এক সাংবাদিকের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চান উগ্র হিন্দুরা। তারা ওই সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে বলেন।
হিন্দুস্তান টাইমস এমন খবর দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন জে কে ২৪X৭ নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আকাশ। তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। ওই এলাকাতেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন, যা পড়লে শিউরে উঠতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলা মুখে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক।
অনিন্দ্য লিখেছেন, সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি মৌজপুর মেট্রো রেল স্টেশনে পৌঁছতেই এক হিন্দু সংগঠনের সদস্য তাঁর কপালে তিলক এঁকে দিতে তৎপর হন। আপত্তি করলে তাকে শুনতে হয়, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তাহলে অসুবিধা কীসের?’
এর ১৫ মিনিট পরেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয় এবং ‘মোদি’ ‘মোদি’ স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়। জানা যায়, স্থানীয় একটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে দিকে এগোতে গেলে একটি শিব মন্দিরের কাছে অনিন্দ্যকে বাধা দেন একদল। অগ্নিকাণ্ডের ছবি তুলতে যাচ্ছেন জানতে পেরে তারা সাংবাদিককে বলেন, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তাহলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? আজ হিন্দুরা জেগে উঠেছে।’
বাধা পেয়ে ঘুরপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল। তারা সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন তার সহকর্মী সাক্ষী চাঁদ। রুখে দাঁড়াতেই সেখান থেকে চম্পট দেয় সশস্ত্র দলটি।
তবে একটু পরেই অনিন্দ্য বুঝতে পারেন, তার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে তাকে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’ তারা সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পরে কিছু হুমকি দেওয়ার পরে রেহাই দেওয়া হয় চিত্র সাংবাদিককে।
নিজের দফতরের অপেক্ষমান গাড়ি খুঁজে না পেয়ে একটি অটোরিকশা ধরে তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চারজন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের উপক্রম করে দুষ্কৃতীরা। নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এবং অটোচালক যে নির্দোষ, সে কথা জানিয়ে অনেক অনুনয়ের পরে ছাড়া পান অনিন্দ্য ও তার সঙ্গী চালক।