সুন্নাত ও বিদআত৷ দুটি দুই মেরুর বিষয়৷ সুন্নত যদি হয় উত্তর মেরুর তাহলে বিদআত হবে দক্ষিণ মেরুর৷ সুন্নত যেমন সর্বব্যাপী গ্রহণীয়৷ বিদআত তার বিপরীতে বর্জনীয়৷ সুন্নত যে সোসাইটি থেকে উঠে যাবে বিদআত সে সমাজে স্থান করে নিবে৷
আমাদের সোসাইটিতে একজন মানুষের মৃত্যু থেকে নিয়ে কবরে রাখা পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য বিদআত ও কুসংস্কার৷ যার নেই কোনো ভিত্তি৷ যেগুলো কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়৷ যা পরিত্যাজ্য ও বর্জনীয়৷
আজকে আলোচনা করবো তেমনই একটি বিদআত নিয়ে৷ এক ভাই প্রশ্ন করেছেন- লাশ বহনের সময় সশব্দে কালিমা পাঠ করা জায়েয আছে কি না? অথবা লাশ বহনের দোআ কি?
লাশ বহনের দোয়া বলতে কুরআন সুন্নাহয় কোনো দোআ বর্ণিত নেই৷ নেই লাশ বহনের সময় সশব্দে কালিমা পাঠ করার কোনো প্রমাণ৷ তবে বর্ণিত আছে এ ক্ষেত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল ৷ সাহাবায়ে কেরামের কর্মপন্থা৷
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম জানাযা বহনের সময় চুপ ও সাইলেন্ট থাকতেন। আখেরাতের বিষয়ে ধ্যান ও চিন্তামগ্ন থাকতেন। ইবনু জুরাইজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا تَبِعَ الْجِنَازَةَ أَكْثَرَ السّكُاتَ، وَأَكْثَرَ حَدِيثَ نَفْسِهِ
অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার পিছনে চলতেন তখন অধিক চুপ থাকতেন এবং চিন্তা মগ্ন থাকতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫)
হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
لَا تُتْبَعُ الْجَنَازَةُ بِصَوْتٍ، وَلَا نَارٍ
অর্থাৎ জানাযার পিছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৬৩)
এ সকল হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আছারের আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, জানাযার খাটিয়ার পিছনে চলার সময় মূল কাজ হল, আখেরাতের চিন্তা ও ফিকিরে থাকা। যিকির বা দোয়া করতে চাইলে তা হবে অনুচ্চ স্বরে। এক্ষেত্রে যিকির করতে গিয়ে আওয়াজ উঁচু করা মাকরূহ।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় আবিষ্কার করবে, যা তার অন্তর্গত নয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং আমাদের অবশ্য করণীয় হলো, এ বিদআত কাজ পরিত্যাগ করা৷ এবং এ স্থানে চুপ থাকা ও আখেরাতের চিন্তায় নিমগ্ন থাকার সুন্নতের প্রচলন করা৷ আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন৷ আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন৷
লেখক: মুফতি রেজাউল করিম ( মুহাদ্দীস সুফফাহ মাদরাসা, মহেশপুর, ঝিনাইদহ )