ভাস্কর্য, মূতি ও প্রতিকৃতিকে বোঝানোর জন্য আরবি ভাষায় প্রধানত পৃথক পৃথক চারটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
ক. ছানাম: (الصنم)
কাঠ, মাটি, স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি দ্বারা বানানো কোন কিছুর প্রতিকৃতি বা মূতির্, যা পুজা করা হয়, তাকে ছানাম বলে। বাংলায় মূর্তি ইংরেজিতে Idol । (An idol is an image or other material object representing a deity to which religious worship is addressed or any person or thing regarded with blind admiration, adoration, or devotion) আলকুরআনে কয়েকটি জায়গায় ছানাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- মহান আল্লাহ ইব্রাহীম আলায়হিস সালামের দু‘আর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন-
رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ .
‘যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি (ছানাম) পূজা থেকে দূরে রাখুন। (সূরা ইব্রাহীম: 35)’।
এসব আয়াতে মূলত মূর্তি ও প্রতিমাকে ছানাম বলা হয়েছে তারা পূজা করত। আসলে যা মানুষ বা পশুর আকৃতির অনুকরনে নয় তবে তা মানুষেরই তৈরী এমন প্রতিকৃতি ও মূর্তিকেই ছানাম বলা হয়।
খ. তিমছাল: (التمثال)
মানুষ অথবা পশুর আকৃতির অনুকরণে যা কিছু তৈরী করা হয় তাকে তিমছাল বলে। বাংলায় আবক্ষ মূর্তি ইংরেজীতে Bust । (A bust is a sculpted or cast representation of the upper part of the human figure, depicting a person's head and neck, as well as a variable portion of the chest and shoulders) মহাগ্রন্থ আল কুরআনে তিমছাল শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন-
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ.
“যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ এই মূর্তিগুলো (তিমছাল) কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ। (সূরা আম্বিয়া:52)”
মূলত এখানেও তিমছাল দ্বারা পূজার দেবদেবীকেই বুঝানো হয়েছে। তবে ছানাম ও তিমছালের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, ছানাম কোন কিছুর আকৃতির অনুকরণে তৈরী হয় না আর তিমছাল কোন কিছুর অনুকরণে তৈরী হয়। আমাদের দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মানুষ বা পশুর আকৃতির অনুকরণে যে সব প্রতিমা ও দেবদেবী তৈরী করে পূজা করে সেগুলো তিমছাল আর জাহিলী যুগে লাত নামক যে দেবতাকে তারা পূজা করত, তা ছিল মূলত একটি পাথরখন্ড মাত্র যা কোন প্রাণীর আকৃতিতে তৈরী ছিল না, সেটি ছিল ছানামের অন্তর্ভূক্ত।
গ. ওয়াছান: (الوثن)
কোন কিছুর চেহারা থাকুক বা না থাকুক সকল ইবাদতকৃত জিনিষকে ওয়াছান বলা হয়। বাংলা প্রতিমা ইংরেজীতে Fetish । (A fetish is an object believed to have supernatural powers, or in particular, a man-made object that has power over others.) যেমন মানুষের প্রতিকৃতি, পশুর মূর্তি, কবর, গাছ, পাথর প্রভৃতি। এই আলোকে ছানাম ও তিমছালও ওয়াছানের অন্তর্ভূক্ত। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ওয়াছান শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا.
“তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেবল প্রতিমারই (ওয়াছান)পূজা এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। (সূরা আনকাবুত:১৭)”
এখানে ছানাম ও ওয়াছানের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে যে ওয়াছান মানুষের তৈরী হয় না, আর ছানাম মানুষের তৈরী। সুতরাং যে গাছ, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতিকে কাফির মুশরিকরা পূজা করে, এগুলো ওয়াছান। আর মানুষের বানানো যে প্রতিমাকে তারা পূজা করে সেটি হচ্ছে ছানাম।
ঘ. নাহাত: (النحت)
খোদাইকৃত চিত্র শিল্পকে আরবিতে نحت বলা হয়। যাকে বাংলায় ভাস্কর্য ও ইংরেজীতে একে Sculpture বলা যায়। (A sculpture is an art or practice of shaping figures or designs in the round or in relief, as by chiseling marble, modeling clay, or casting in metal)
পবিত্র কুরআনে পাই –
قَالَ أَتَعْبُدُونَ مَا تَنْحِتُونَ
সে বললঃ তোমরা স্বহস্ত নির্মিত পাথরের পূজা কর কেন? (সূরা সাফফাত:৯৫)
আরও পড়ুন→ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য
আমাদের দেশে ভাস্কর্যের নামে মানুষের আকৃতিতে বা পশুর অকৃতিতে যে সব মূর্তি বানানো হয় এগুলো তিমছাল আর কোন প্রাণীর আকৃতির সাথে মিল না রেখে এমনিতেই যা তৈরী করা হয়েছে সেগুলো ছানাম। যা হোক এই ছানাম, তিমছাল, নাহাত ও ওয়াছান সবগুলোই ইসলামে ঘৃণিত ।