তিরমিযি শরীফ ও তার বৈশিষ্ট্যাবলি


তিরমিযি শরীফ ও তার বৈশিষ্ট্যাবলি

ইমাম তিরমিযি রহ. এর জামে তিরমিযি প্রশিদ্ধ একটি কিতাব। গোটা উম্মত এ কিতাবকে ‘‘কুতুবে সিত্তাহ’’র অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এ সম্পর্কে  ইমাম তিরমিযি রহ.  নিজেই বলেন,

 صنفت هذا المسند الصحيح وعرضته على علماء الحجاز قرضوا به وعرضه على علماء خراسان فرضوا به

অর্থাৎ ‘আমি এ সনদযুক্ত হাদীছ গ্রন্থখানি প্রণয়ন করে একে হিজাযের হাদীছবিদদের সমীপে পেশ করলাম। তারা এটা দেখে খুবই পসন্দ করলেন ও সন্তোষ প্রকাশ করলেন। এরপর আমি এ গ্রন্থকে খুরাসানের মুহাদ্দিছগণের খেদমতে পেশ করলাম। তারাও একে অত্যন্ত পসন্দ করেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন'।

ইমাম তিরমিযি রহ. আরোও বলেন,

من كان عنده هذا الكتاب الجامع ، فكأنما في بيته نبي يتكلم

অর্থাৎএই সার্বজনীন গ্রন্থটি যার কাছে থাকবে তার কাছে যেন নবী কথা বলছেন। (আল বিদায়া, ইবনে কাসীর ১১/৬৭)।

ইসলামকে সহজভাবে জানার ক্ষেত্রে তিরমিজী শরীফ সাধারণ পাঠকদের জন্য একখানি সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য হাদীস গ্রন্থ। শায়খুল ইসলাম হাফিয ইমাম আবু ইসমাঈল আবদুল্লাহ আনছারী তিরমিযী সম্পর্কে বলেন, 

كتابه عندى أنفع من كتاب البخاری و مسلم لأن كتابي البخاري ومسلم يقف على الفائدة منهما الا البحر العالم كتاب أبي عيسى يصل إلي قاندنه كل أخذ من الناس 

অর্থাৎ ‘আমার দৃষ্টিতে জামে তিরমিযী বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয় অপেক্ষা অধিক ব্যবহার উপযােগী। কেননা বুখারী ও মুসলিম এমন হাদীছগ্রন্থ যা হ'তে কেবল বিশেষ পারদর্শী আলেম ব্যতীত অপর কেউ ফায়দা লাভ করতে সমর্থ হয়। কিন্তু ইমাম আবু ঈসার গ্রন্থ হ’তে যেকোন লােক উপকারিতা হাছিল করতে পারে। 

এই কিতাবে এমন কিছু বৈশিষ্ট পাওয়া যায় যা অন্যান্য কিতাবে নেই।

1। এই কিতাবটি একই সাথে জামে ও সুনানও। কারণ, এটি ফিকহি তারতিবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

2। এই কিতাবে হাদীসের তাকরার বা পুনরাবৃত্তি নেই।

3। এই কিতাবে ইমাম তিরমিযি সমস্ত ফুকাহার মৌলিক প্রমাণাদি সংকলন করেছেন; এবং প্রত্যেতকর জন্য আলাদা অধ্যায় কায়েম করেছেন। 

4। প্রতিটি অধ্যায়ে ইমাম তিরমিযি ফুকাহায়েকেরামের মাযহাব বাধ্যতামূলকভাবে বর্ণনা করেছেন।

5। ইমাম তিরমিযি প্রতিটি হাদীসের সনদের স্তরও উল্লেখ করেছেন।

6। প্রতিটি অধ্যায়ে এক অথবা দু তিনটি হাদীস উল্লেখ করেন এবং সেসব হাদীস মনোনীত করেন যেগুলো অন্যান্য ইমাম বর্ণনা করেননি। কিন্তু সাথে সাথে وفي الباب عن فلان وفلان বলে সেসব হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করেন যেগুলো এ অধ্যায়ে আসতে পারে।

7। যদি হাদীস দীর্ঘ হয় তাহলে ইমাম তিরমিযি সাধারণত উল্লেখ করেন সে অংশটুকু যার সেই বাবের সাথে মিল রয়েছে।

8। কোন হাদীসের সনতদ যদি ত্রুটি ও ইযতেরাব থাকে তাহলে ইমা তিরমিযি তার বিস্তারিত আলোচনা করেন।

9।জামে তিরমিযির তারতিব খুবই সহজ। এর শিরোনামগুলো অনেক সহজ। তিরমিযি থেকে হাদীস তালাশ করাও সহজ।

10। তিনি মাজহুল রাবীদের পরিচয়ও করিয়ে দেন। বিশেষভাবে যে রাবী নামে পরিচিত তার উপনাম। এবং যিনি উপনামে পরিচিত তার নাম বলে দেন।

11। এ কিতাবের সমস্ত হাদীস কেন না কোন ফকীহর কাছে আমলযোগ্য । শুধু দুটি হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযি বলেছেন যে, এগুলোর ওেপর কারো মতে আমল হয় না। একটি হলো, বিনা ওযরে দুই নামায একত্রিত করণ। দ্বিতীয়টি হলো, মদ্যপায়ীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হানাফীরা এ দুটি হাদীসের ওপর আমল করেন।প্রথম হাদসিটি বাহ্যত প্রয়োগ করেন একত্রে আদায়ের ক্ষেত্রে। আর দ্বিতীয়টি শাসনের ক্ষেত্রে। সংক্ষিপ্তভাবে এ হলো, তিরমিযি শরীফ ও তার বৈশিষ্ট্যাবলি।

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন