পবিত্র কুরআনুল কারিমে এমন কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো তেলাওয়াত করলে তেলাওয়াতকারীর ওপর একটি সিজদা ওয়াজিব হয়। সে আয়াতগুলোকে সিজদার আয়াত বলে।
সিজদার আয়াত পবিত্র কুরআনে মোট চৌদ্দটি। সবকটি সূরার আয়াত, নম্বর দেয়া হলো।
১৷ সূরা আরাফ, আয়াত নং ২০৬২৷ সূরা রাদ, আয়াত নং ১৫
৩৷ সূরা নাহল, আয়াত নং ৫০
৪৷ সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং ১০৭-১০৯
৫৷ সূরা মারইয়াম, আয়াত নং ৫৮
৬৷ সূরা হজ, আয়াত নং ১৮
৭৷ সূরা ফুরকান, আয়াত নং ৬০
৮৷ সূরা নামল, আয়াত নং ২৫-২৬
৯৷ সূরা সিজদা, আয়াত নং ১৫
১০৷ সূরা সোয়াদ, আয়াত নং ২৪-২৫
১১৷ সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াত নং ৩৭-৩৮
১২৷ সূরা নাজম, আয়াত নং ৬২
১৩৷ সূরা ইনশিকাক আয়াত নং ২১
১৪৷ সূরা আলাক, আয়াত নং ১৯
এই চৌদ্দটি আয়াত যখন তেলাওয়াত করা হবে তখন সিজদা করতে হবে।
আরো পড়ুন →স্ত্রীর মুখের লালা গলায় চলে গেলে রোযার হুকুম কী?
মোবাইল, রেকর্ডার,সিডি,টেলিভিশন ইত্যাদি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। কেননা তিলাওয়াতের সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য বুঝমান, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি থেকে সরাসরি সিজদার আয়াত শ্রবণ করা শর্ত ।
অনেক সময় বুঝা যায় না যে, প্রচার সরাসরি হচ্ছে নাকি রেকর্ড থেকে। তাহলে এক্ষেত্রে সতর্কতা হচ্ছে, সেজদা আদায় করা।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রেডিওর ব্যাপারে সতর্কতা হচ্ছে, সেজদার আয়াত শুনলে সেজদা আদায় করা। এবং এর সালামের জবাবও দিতে হবে। শর্ত হচ্ছে, আসল আওয়াজ শোনা যেতে হবে, কোনো রেকর্ড হতে পারবে না।
[আরো দেখুন, শরহুল মুনইয়াহ ৫০০, আলবাহরুর রায়েক ২/১২০, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪, রদ্দুল মুহতার ২/১০৮, জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/৪৫৬]
আরো পড়ুন→যৌন উত্তেজনায় স্ত্রীকে চুমু দিলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
তিলাওয়াতের সেজদা কখন আদায় করতে হবে?
সিজদার আয়াত শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে সিজদা দেয়া উত্তম। তবে আবশ্যক নয়। সিজদা আদায় করতে দেরি করা মাকরুহে তানযিহী। পরবর্তীতে আদায় করার দ্বারা সেটা আদায় হিসেবেই গণ্য হবে। দেরি করার কারণে কোনো গুনাহ হবে না।ফতোয়ার উল্যেখযোগ্য কিতাব " আলবাহরুর রায়েক" য়ে এসেছে,
إذا قرأها في الصلاة فتأخيرها مكروه ، وإن قرأها خارج الصلاة لا يكره تأخيرها وذكر الطحاوي أن تأخيرها مكروه مطلقا ، وهو الأصح ا هـ
وهي كراهة تنزيهية في غير الصلاتية ; لأنها لو كانت تحريمية لكان وجوبها على الفور وليس كذلك
অর্থাৎ যদি সিজদার আয়াত নামাযে পাঠ করে তাহলে বিলম্ব করে সিজদা করা মাকরুহ ৷ তবে ইমাম তহাবী রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন " নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে হোক সর্বাবস্থায় বিলম্ব করে সিজদা আদায় করা মাকরুহ ৷ এটাই সঠিক অভিমত ৷নামাযের বাইরে বিলম্বে সিজদা করা মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরুহে তানযিহি ৷ যদি মাকরুহে তাহরিমি হতো তাহলে সিজদা করাটাও তাৎক্ষণিক হতো ৷ অথচ বিষয়টি এমন নয় ৷
[আলবাহরুর রায়েক,২/১২৯]
আরো পড়ুন →রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে ও কানে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
তেলাওয়াতে সিজদা আদায়ের পদ্ধতি কী?
তেলাওয়াতে সিজদার পদ্ধতি হলো, হাত না উঠিয়ে দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সোজা সিজদায় চলে যেতে হবে এবং সুবহানা রাব্বিয়াল আলা তিনবার পড়ে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়াতে হবে। সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই। এ সেজদার জন্য হাত উঠাতে বা হাত বাঁধতে হবে না এবং দুটি সেজদাও করতে হবে না। যদি না দাঁড়িয়ে বসে বসে সেজদা করে অথবা সেজদা করে বসে থাকে তাও জায়েজ আছে। পুরুষদের জন্য আল্লাহু আকবর জোরে বলা উত্তম।
[আলবাহরুর রায়েক,২/১৩৭]
আরো পড়ুন→ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ স্পর্শ করা ও পড়া যাবে কি?
উত্তর প্রদানে
মুফতি রেজাউল করিম
মুহাদ্দিস, সুফফাহ মাদরারা জলিলপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ
[প্রিয় পাঠক! আপনিও এ ব্লগে লিখতে পারেন ৷ লেখার বিষয় হতে পারে, ইসলামি আর্টিকেল, জীবনাচার, গল্পগুচ্ছ, মাসয়ালা, ইত্যাদি ৷ আপনার লেখা ছবিসহ আপনার নামে ছাপা হবে ৷ লেখা পাঠাতে হবে এই মেইলে
rezua1995@gmail.com ]