যৌন উত্তেজনায় স্ত্রীকে চুমু দিলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?


ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রাখলে কি রোযা রাখতে হবে?

মুফতি রেজাউল করিম।।

যদি রোযা অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাস ব্যতীত চুমো দেয় বা আলিঙ্গন করে অথবা স্পর্শ করে  বা এক সাথে নিদ্রা যায় তবে তা জায়েয। এতে রোযার কোন সমস্যা হবে না। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালম রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করতেন, আলিঙ্গন করতেন। আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. রোযা অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু দিতেন এবং আলিঙ্গন করতেন।
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان النبي ﷺ يقبل وهو صائم ويباشر وهو صائم وكان أملككم لإربه
অর্থাৎ  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু আপন জৈবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সবচে’ বেশি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধিকারী।

[বুখারী ১৮৪১ মুসলিম ১১২১]

এতে যদি সহবাসে লিপ্ত হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে তবে তা মাকরূহ হবে।
আবু দাউদ শরীফের এক হাদীসে এসেছে,
أن النبي ﷺ استأذنه إنسان في التقبيل فأذن له، واستأذنه آخر فلم يأذن له، فإذا الذي أذن له شيخ كبير،
والذي لم يؤذن له شاب
অর্থাৎ এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালমের কাছে চুমুর ব্যাপারে অনুমতি চাইলেন ৷ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালম তাকে অনুমতি দিলেন ৷ পূণরায় আর এক ব্যক্তি অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দিলেন না ৷ যাকে চুমুর অনুমতি দিলেন তিনি ছিলেন বৃদ্ধ আর যাকে অনুমতি দিলেন না, সে ছিলো যুবক ৷

যুবককে অনুমতি না দেওয়ার কারণ হলো, তার ব্যপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালম আশঙ্কা করেছেন যে, সে চুমুতে ক্ষ্যান্ত হবে না সহবাসে লিপ্ত হয়ে পড়বে ৷ এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় সহবাসে লিপ্ত হয়ে পরার আশঙ্কা থাকলে চুমু দেওয়া মাকরূহ হবে।


যৌন উত্তেজনায় চুমুতে যদি বীর্য বের হয়

রোযা অবস্থায় উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে চুমু দিলে যদি বীর্য নির্গত হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ সারাদিন রোযাদারের মত থাকতে হবে এবং পরে ওই রোযা কাযা করতে হবে ৷
ফতোয়ার প্রশিদ্ধ কিতাব রদ্দুল মুহতারে এসেছে, " যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে চুমু দেয় অথবা স্পর্শ করে অতপর বীর্য নির্গত হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে অন্যথায় নয় ৷

উল্লেখ্য, বীর্য বলা হয় এক প্রকার জৈবিক তরল যা যৌনসঙ্গমের শেষ পর্যায়ে চরম সুখানুভূতি সৃষ্টির সঙ্গে পুরুষাঙ্গ হতে নি:সৃত হয়।


[ রদ্দুল মুহতার,৩/ ৩৭৮]

অনুরুপভাবে "হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ" কিতাবে এসেছে, " যদি চুমু অথবা স্পর্শ করার কারণে বীর্য নির্গত হয় তাহলে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না ৷ তবে ওই রোযা কাযা করা আবশ্যক ৷

[হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ,৬৭৬]

অনূরুপভাবে " ফতোয়ায় রহীমিয়া"য় এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, " স্বামী স্ত্রীর যার বীর্য বের হবে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ যদি উভয়ের বীর্য বের হয় তাহলে উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷ এতে শুধু কাযা আবশ্যক হবে কাফফারা দিতে হবে না ৷

[ফতোয়ায় রহীমিয়া,৭/ ২৬১]



চুমুতে কামরস বের হলে রোযা

চুমো বা আলিঙ্গনের কারণে যদি মজী বা কামরস বের হয় তবে এতে রোযার কোন ক্ষতি করে না ৷

মযী বা কামরস বলা হয়, সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।


ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রাখলে কি রোযা রাখতে হবে?

প্রতি মাসে মহিলাদের মাসিক হওয়াটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। এটা আল্লাহ তাআলার নিয়ম বা নেজাম। রমযানে এটাকে বন্ধ করে রাখাটা উচিত হবে না। এতে শারিরীকভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এই ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।

১. ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড সময় এগিয়ে আনলে বা পেছালে ঋতুস্রাবের চক্রে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। অনেকে ওষুধ সেবন করে স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের চক্রে পরিবর্তন আনছেন। আর কিছু নারী আবার এই ওষুধগুলোকে জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ ভেবে সেবনের কারণে গর্ভবতীও হয়ে যান।

২. ঋতুস্রাব বিলম্ব করার জন্য ওষুধ খাওয়ার পর কয়েকমাস ঋতুস্রাবে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রক্তপাত হতে পারে।

৩. ঋতুস্রাব বিলম্বিত করার ওষুধ ও জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি দীর্ঘসময় ধরে খাওয়া উচত নয়। এর ফলে হতে পারে মারাত্মক রোগ। ‘ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস’ বা রক্ত জমাট বেঁধে ধমনি আটকে যাওয়া, ‘পালমোনারি এমবোলিজমসহ সবিভিন্ন রোগ হতে পারে।

৪. এসব ওষুধ শোষিত হয় যকৃতে। ফলে তা অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া নিষ্ক্রিয়ও করে দিতে পারে।

৫. এসব ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতা, ডায়রিয়া, যোনীপথে অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ, ব্যথা, পেশিতে টানসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।



এর পরেও যদি কোন মহিলা রমযান আসার আগেই এবং মাসিক শুরু হওয়ার আগে ওষুধ খেয়ে তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার জন্য রোযা রাখতে হবে। কারণ, এতে করে তার উপর রোযা না রাখার কোন কারণ বিদ্যমান থাকছে না। তাই তার জন্য রোযা রাখা আবশ্যক হবে।



সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন