রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি

রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে সমহিমায় উপস্থিত হয় রমজানুল মুবারক। লাইলাতুন নিসফা মিন শাবান অতিবাহিত হয়েছে। শাবান মাস ২৯/৩০ দিন পূর্ণ হলেই শুরু হবে এ বরকতময় রমজান মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই মাস আগে থেকে রোজার প্রস্তুতি শুরু করতেন।


রজব মাস আসলেই প্রিয় নবি রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রোজা রাখতেন, নামাজ পড়তেন, বেশি বেশি এ দোয়া করতেন-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন। রমজানের পূর্ণ রহমত, বরকত ও ক্ষমা পাওয়ার জন্যে আমরা নিম্নে বর্ণিত প্রস্তুতিগুলি নিতে পারি ৷


এক. একনিষ্ঠভাবে তওবা ও ইস্তেগফার করা

মুমিন ব্যক্তি যেহেতু এক মহান মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অনতিবিলম্বে নিজের মাঝে ও স্বীয় রবের মাঝে যে গুনাহগুলো রয়েছে এবং নিজের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে অধিকার ক্ষুণ্ণের যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো থেকে দ্রুত তওবা করে নেয়া উচিত। যাতে করে সে পূত, পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এ মুবারক মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল ও লিপ্ত হতে পারে। 


আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার।”[আন-নূর : ৩১] 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা করি।”[মুসলিম, ২৭০২]


দুই. কোন ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া


আবু সালামাহ্‌ হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

كان يكون علي الصوم من رمضان فما أستطيع أن أقضي إلا في شعبان.

অর্থঃ “আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শা‘বান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।” [বুখারী,১৮৪৯ ]

হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন:“আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।”[ফাতহুল বারী,৪/১৯১] 


তিন. রমজানের রোজার প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।”

[বুখারী,১৮৬৮) ও মুসলিম,১১৫৬]


চার. স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে বসে রমজানের ফযিলত, বরকত ও মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করা এবং ছোটদেরকেও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।


পাঁচ. যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।


ছয়. বেশি বেশি দোআ করা: কিছু কিছু সলফে সালেহীন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাঁদের আমলগুলো কবুল করে নেন।

তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে, উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন। 


ইফতারের সঠিক দোয়া ও মতিউর রহমান মাদানীর মিথ্যাচার দেখতে এই মার্ক করা লিঙ্কে ক্লিক করুন→ ইফতারের সঠিক দোয়া ও মতিউর রহমান মাদানীর মিথ্যাচার


সাত. রমযান মাসের আমলের রুটিন করা


মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সবার আয়ু নির্ধারিত। দুনিয়ার ছোট্ট জীবন শেষে রয়েছে পরকালের সীমাহীন জীবন। এ দুনিয়ায় কেউ চিরকাল থাকবে না। সবাই মৃত্যুবরণ করবে। মানুষ এক একটি দিন অতিবাহিত করেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই জীবনের মূল্যবান সময়কে শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনে করতে হবে। তা হিসাব করে ব্যয় করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা সময়ের রুটিন করে নিতে হবে। বিশেষ করে রমজানুল মুবারকে ৷ রমজান মাসজুড়ে যে যেই কাজেই থাকুক না কেন, পুরো সময়টি কোন কোন কাজে কীভাবে ব্যয় হবে তার একটি সম্ভাব্য রুটিন তৈরি করে নেয়া। আগাম রুটিন থাকলে রমজানে চরম ব্যস্ততার মাঝেও নেক আমলসহ অন্যান্য কাজগুলোও ইবাদতের মধ্যেই কেটে যাবে। এক কথায় সব কাজের তালিকা করে নেয়া।


আট. প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে চাঁদের হিসাব রাখতে দিন গণনা করতেন। আর রমজানের নতুন চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করতেন।


হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চাঁদের হিসাব যেভাবে রাখতেন অন্য কোনো মাসের হিসাব সেভাবে রাখতেন না। পরে চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।’ (মুসনাদে আহমদ)



হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-


اللهم أهله علينا باليمن والإيمان والسلام والإسلام ربي وربك الله

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্‌তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (সুনানে দারেমী, হাদীস নং,1697)

লেখকঃ মুফতি রেজাউল করিম, মুহাদ্দীস, সুফফাহ মাদরাসা, মহেশপুর, ঝিনাইদহ

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন