(২) হক আদায় করে রোজা রাখাঃ
রোজা শুধু পানাহার এবং স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই নয় ৷ এমন নয় যে, সাহরির সময় সাহরী খেলাম আর সারাদিন না খেয়ে থেক ইফতার করলাম ৷ যা আমরা একটি হাদীস দ্বারা বুঝতে পারি ৷ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম নয়; সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা এবং পাপ কাজ বর্জন করা। (বায়হাকি,৪/২৭০)।
প্রকৃত অর্থে রোজা হলো, সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সম্ভোগ এবং সব ধরণের গুনাহ ও পাপ কর্ম থেকে বিরত থাকা। যে ব্যক্তি রোযা অবস্থায় মিথ্যা কথা বলা সহ সর্ব প্রকার পাপ কর্ম পরিত্যাগ করতে পারে না আল্লাহ তাআলার তার পানাহার ত্যাগ করাতে কোন প্রয়োজন নেই ৷
হাদীসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে না পারবে তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লহ তায়ালার কোনো প্রয়োজন নেই (বোখারি, ৫/২২৫১)। সুতরাং যদি নিজের জবান কে মিথ্যা কথা, কান কে গীবত শোনা, পেট কে হারাম ভক্ষণ করা থেকে বিরত রাখাসহ যাবতীয় পাপ কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারি তাহলেই হবে হক আদায় করে রোজা রাখা ৷
(১) অধিক পরিমাণে দান করাঃ
নবীজি (সা.) ছিলেন সব চেয়ে বড় দাতা ও দানশীল ৷ তিনি সব সময়ই দান করতেন ৷ তবে রমজান মাস আগমন করলে নবীজি (সা.) এর দান আরো বেড়ে যেত ৷ নবীজি (সা.) এর শিক্ষা অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম এবং পূর্ববর্তী বুজুর্গরা ও রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : ‘মহানবী (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরো বেড়ে যেত।’ (মুসলিম : হাদিস নং- ৩২০৮)।
তা ছাড়া দান সদকা করলে আল্লাহ তাআলার ক্রোধে আগুন নির্বাপিত হয় এ মর্মে হাদীসও রয়েছে ৷ রমজান মাসে কাউকে ইফতার করানোও দানের অন্তর্ভূক্ত ৷ আমরা সামান্য কিছু টাকা গুছিয়ে প্রতিবেশীর ঘরে সামান্য ইফতার পাঠিয়েও একজন রোজাদারের সওয়াব অর্জন করতে পারি ৷ একজন অভাবী মানুষ সারাদিন রোজা রেখে যখন আমাদের দেয়া ইফতার দিয়ে ইফতার করে আনন্দিত হবে তখন সে আনন্দটা শুধু তার ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সে আনন্দ আল্লাহ তায়ালার আরশে পৌঁছে যাবে।
(৩) তাহাজ্জুদ নামায আদায় করাঃ
তাহাজ্জুদ নামায আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের বড় মাধ্যম ৷ যা আদায় করা ছিল পূর্ববর্তীদের আদাত ও অভ্যাস ৷ এর মাধ্যমে অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায় ৷ ভবিষ্যতের গুনাহ থেকে বিরত থাকার ক্ষমতা ও তাওফিক হয় ৷ হাদীস শরীফে রয়েছে, হজরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়। কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দাহর অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী। [সহীহ ইবনু খুযাইমা, হাদীস নং - ১১৩৫] ৷ সুতরাং সবারই উচিত এ বরকত ময় মাসে এ ফযিলত পূর্ণ আমলটি পালন করা ৷ যেন আমাদের কারো থেকে ছুটে না যায় ৷
(৪) বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করাঃ
রমজান মাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট হল, এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে ৷ তাই এ মাসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা ৷ তাছাড়া আল কুরআন তার পাঠকের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে ৷ তার সুপারিশ লাভের জন্য তেলাওয়াত করা উচিৎ ৷ হাদীসে এসেছে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। (সহীহ মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত কুরআন অধ্যয়ন করা। কুরআন অনুযায়ী সমাজ বিনির্মাণ করা। আল-কুরআনের বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।