তাওবার গুরুত্ব!!
ইসলামী টিউন
রাসূল স.বলেন-
كل بنى آدم خطاء وخير الخطائين التوابون.
'সকল আদম সন্তান ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা তারাই, যারা তওবাকারী '। ( তিরমিযী)
এত গুনাহ করার পরও আল্লাহ আমাদেরকে ভুলে যান না!
আল্লাহ তায়ালা কুরান মাজীদে বলেনঃ
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم-ُ
বলুন! হে আমার বান্দারা! যারা গুনাহ করে নিজের জীবনের উপর জুলুম করেছ তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হইওনা। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমারঃ৫৩)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গুনাহ মচন করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন!
তিনি তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন,
وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون.
'হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। তাহ'লে তোমরা সফলকাম হবে !
(নূর ২4/31)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ.
৮) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত।
(সূরা তাহরীম- 8)
বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল,
(ক) ان يقلع عن المعصية
যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে।
(খ) ان يندم عليها
এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
(গ)
ان يعزم عزما جازما ان لا يعود الي مثلها ابدا.
আগামীতে এই গুনাহ ‘আর করব না’ বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
(ঘ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।
একজন খুনীর তওবা ও জান্নাত লাভ!
বনী ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খৃষ্টান পাদ্রীর কথা বলা হ’লে সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরানব্বইজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল, নেই। ফলে লোকটি পাদ্রীকেও হত্যা করল। এভাবে তাকে হত্যা করে সে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করায় তাকে একজন আলেমের কথা বলা হ’ল। সে তাঁর নিকট গিয়ে বলল যে, সে একশ’জনকে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তওবার মাঝে কিসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহ্র ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে ইবাদত কর। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল।
অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হ’ল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তওবার মাধ্যমে আল্লাহ্র দিকে ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতা বলল, লোকটিতো কখনও কোন ভাল কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের নিকট আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের শালিস নিযুক্ত করল। তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে’। আল্লাহ তা‘আলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পিছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকেরই এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হ’ল এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবয করল।
(আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হ’তে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৭০, মুসলিম হা/২৭৬৬)
ميان عاشق و معشوق جه رمزيست كراما كاتبين را هم خبر نيست.
রাসূল স. এর তাওবা!
রাসূল স. মাসুম হওয়া সত্বেও দৈনিক সত্তর বারেরও বেশী তাওবা করতেন!হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূল স. থেকে শুনেছি,
ُ وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً.
আবূ হুরাইরাহ বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তাওবাহ করে থাকি। (বুখারী,হাদীস নং-৬৩০৭)
গুনাহ হয়ে গেলেই তাওবা! যদিও একই গুনাহ দৈনিক সত্তর বারও হয়! রাসূল স. বলেন,
ما اصر من اسغفر وان عاد في اليوم سبعين مرة.
তাই, সুপ্রিয় মুসলিম ভাই! আসুন আমরা যারা গুনাহ করে ফেলেছি তারা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে নিজেদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে নতুন করে জীবন গড়ি।
হাদিসে এসেছে-
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَن
ْ لاَ ذَنْبَ لَهُ.
যে গুনাহ থেকে তাওবা করল সে এমন হয়ে গেল যেন সে কোন গুনাহই করেনি।(বায়হাকী, জামেউল আহাদিস, ইবনে মাজাহ)