|
মুফতি রেজাউল করিম।।
|
ইনহেলার ( যাকে পাফার, পাম্প বা অ্যালার্জি স্প্রে নামেও পরিচিত) একটি চিকিৎসা ডিভাইস যা কোনও ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
শীতকালে হাঁপানি , ব্রংকাইটিস ও বক্ষব্যাধি রোগীদের জন্য এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোগীদের প্রায় প্রতিদিনই ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়।
ইনহেলার
মুখের ভেতরে ওষুধটি এমনভাবে স্প্রে করতে হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে খাদ্যনালী হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। এতে যে যায়গায় শ্বাসরুদ্ধ হয় ঐ জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস চলাচলে আর কোন কষ্ট থাকে না। ঔষধটি যে শিশিতে যে পরিমাণে থাকে ঐ শিশির মুখ একবার টিপলে শিশির আকার ভেদে ঐ পরিমাণের একশত কিংবা দুইশত ভাগের একভাগ বেরিয়ে আসে।
অতি স্বল্প পরিমাণে গ্যাসের ন্যায় বের হওয়ার কারণে কেউ ঔষধটিকে বাতাস জাতীয় মনে করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমন নয় বরং ঔষধটি দেহ বিশিষ্ট। কাঠ ইত্যাদি কোন বস্তুতে স্প্রে করলে দেখা যায় যে, ঐ বস্তুটি ভিজে গেছে। ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
সালবিউটামল(Salbutamol)
এই ঔষধটি হাঁপানি সম্পর্কিত উপসর্গগুলির জন্য ব্যবহৃত হয় ৷ তবে এটি ডেলিভারি বিলম্বিত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে । ব্যায়াম এবং অন্যান্য অবস্থার কারণে এটি হাঁপানির লক্ষণগুলি প্রতিরোধ করার জন্য খুব দরকারী।
[[করোনা ভাইরাস: মহামারীর উপকারিতা
পড়তে এখানে ক্লিক করুন]]
সালবিউটামল (Salbutamol)
সাধারণত নিউব্লাইজার বা ইনহেলারের সাথে ব্যবহৃত হয় তবে এটি একটি অন্তরঙ্গ সমাধান এবং একটি পিল হিসাবেও পাওয়া যায় । ডোজ আপনার বয়স, লিঙ্গ, থেরাপি প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসার শর্ত, এবং নির্দিষ্ট মিথস্ক্রিয়া ঔষধ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ।
এই ওষুধের পরামর্শ কোন সময় দেওয়া হয়?
গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়া [Severe Allergic Reaction]
এলার্জি ব্যাধি [Allergic Disorders]
অ্যাজমা [Asthma]
চামড়া সম্বন্ধীয় রোগ [Skin Disorders]
চোখের ব্যাধি [Eye Disorder]
রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করার নিয়ম
অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেছেন যে, মারাত্মক জটিল ও কঠিন রোগী ছাড়া অন্য সকলেরই সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর পরবর্তী ডোজ ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ ও অবকাশ রয়েছে ।
সুতরাং এ ধরনের রোগীদের কর্তব্য ও উচিৎ হলো, বিষয়টি তার চিকিৎসক থেকে বুঝে নেওয়া এবং সম্ভব হলে রোযা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা।
অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এত জটিল ও খারাপ হয় যে, ডাক্তার অবশ্যই তাকে দিনেও ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই রোগীর এ সময়ে ইনহেলার ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোযা কাযা করে নিবে।
ইনহেলার এর ব্যাপারে ভুল ধারনা
অনেক মানুষকে বলতে শুনা যায় যে, 'ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তাই রোযা ভঙ্গ হবে না।' কথাটি একেবারেই হাস্যকর ও অজ্ঞতাপ্রসূত । কেননা কেউ যদি ক্ষুধায় তাড়নায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে অতি প্রয়োজনে কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে কি অতি প্রয়োজনে খাওয়ার কারণে তার রোযা ভঙ্গ হবে না?
উত্তর, অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে। অতি প্রয়োজনে় রোযা ভাঙ্গলে পরবর্তিতে কাযা করা ও এতে গুনাহ না হওয়া ভিন্ন কথা। আর রোযা ভঙ্গ না হওয়া ভিন্ন কথা।
তবে হ্যাঁ, মুখে যদি ইনহেলার স্প্রে করার পর না গিলে থুথু দিয়ে তা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এভাবে কাজ চললে তো বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যাবে। এতে শ্বাস কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি রোযাও ভঙ্গ হলো না।
[[মহামারিতে মুমিনের করণীয় কী? পড়তে এখানে ক্লিক করুন]]
এন্ডোসকপিকি?
পাকস্থলীর বিভিন্ন প্রকার রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা করার জন্য চিকন লম্বা একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়। যার মাথায় একটি বাল্ব থাকে।
এই পাইপের সঙ্গে কম্পিউটারের মনিটরের সংযোগ থাকে। এর সাহায্যে চিকিৎসকরা রোগীর পেটের অবস্থা ও রোগ নির্ণয় করে থাকেন। মেডিকেল সাইন্স এর পরিভাষায় এটাকে এন্ডোসকপি বলা হয়। এন্ডোসকপির পাইপের সঙ্গে কোনো প্রকার মেডিসিন বা ঔষধ লাগানো থাকে না, তাই স্বাভাবিক অবস্থায় এর কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না।
কেননা, রোযা ভঙ্গ হওয়ার মূলনীতিতে বলা হয়েছে- বাইর থেকে বস্তু অতিক্রমস্থল দিয়ে প্রবেশ করে পেট বা মস্তিষ্কে স্থির হতে হবে। কিন্তু এন্ডোসকপি করার সময় পাকস্থলীতে বাইর থেকে বস্তু প্রবেশ করে বটে, কিন্তু সেখানে স্থির থাকে না। তাই রোযা নষ্ট হবে না।
ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যদি কেউ কোনো গোশতের টুকরা সুতা দ্বারা বেঁধে গিলে ফেলে অতঃপর টান দিয়ে বের করে নিয়ে আসে তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।’ -ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ২/২০৪
তবে এন্ডোস্কপি করার সময় রক্ত বা ময়লার কারণে পাইপের বাল্ব অনেক সময় ঘোলাটে ভাব হয়ে যায়। যার কারণে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে ওই বাল্ব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়। এমন হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই যে ডাক্তার পরীক্ষা করাবেন তার থেকে জেনে নিতে হবে যে, পাইপের সাথে কোনো অষুধ দেয়া হয়েছে কি না বা ভেতরে পানি দেয়ার প্রয়োজন হয়েছে কি না।
[[করোনা পরিস্থিতিতে জামাতের নামাজে এক মুসল্লি অপর মুসল্লি থেকে দূরত্বে দাঁড়াতে পারবে কিনা?
পড়তে এখানে ক্লিক করুন]]
উল্লেখ্য, রমযান মাসে এন্ডোস্কপি করার প্রয়োজন হলে একান্ত নিরুপায় না হলে ইফতারের পর করবেন। [আল-মুহীতুল বুরহানী- ৩/৩৪৮]।
রমজানের রোযাসহ ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে জানতে আপনিও প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন- rezua1995@gmail.com