খেযাবের প্রকার সমূহ
১৷মিশমিশে কালো
২৷ সাধারণ কালো
৩৷ লাল
৪৷ হলুদ
৫৷ সবুজসহ যে কোনো রঙ হতে পারে
মাথার চুল এবং দাড়িতে কালো রং করা ইসলামে জায়েয আছে কি?
মাথার চুল এবং দাড়িতে কালো রং করা ইসলামে জায়েয আছে কি? এমন প্রশ্নও একাধিকবার এসেছে ৷ তাই এ বিষয়টিও ক্লিয়ার হওয়া আবশ্যক ৷ কালো রং করা বলি আর কালো কলপ করা বলি বিষয় একই ৷ এ ক্ষেত্রে শরয়ী মাসআলা হলো,
বার্ধক্যজনিত কারণে চুল বা দাড়ি পেকে শুভ্র হয়ে গেলে তাতে কালো খেযাব বা কালো কলপ ব্যবহার করা জায়েয নেই৷ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ফাতহে মক্কা তথা মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সম্মানিত পিতা আবু কুহাফা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর দাড়ি এবং চুল পাকা দেখে বলেছিলেন,
غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ
অর্থাৎ এই চুল ও দাড়িকে কোনো কিছু লাগিয়ে পরিবর্তন কর। তবে কালো রঙ করা থেকে বেঁচে থাক। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৫৪৬৬)
আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يكون قوم يخضبون في اخر الزمان بالسواد كحواصل الحمام لا يريحون رائحة الجنة
অর্থাৎ শেষ যুগে কিছু মানুষ কবুতরের ঝুঁটির মতো কালো খেযাব ব্যবহার করবে৷ তারা কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ৪২০৯)
আরো পড়ুন→বিতর নামায ১ রাকাত নাকি তিন রাকাত?
যুবক বয়সে কালো খেযাব ব্যবহার করা কি জায়েয?
কোনো যুবকের অসুস্থতার কারণে বা অন্য কোনো সমস্যায় বা রোগে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছনোর আগেই যদি চুল দাড়ি-শুভ্র হয়ে যায় তবে সে কালো খেযাব বা কালো কলপ ব্যবহার করতে পারবে।
১৷ আহমাদ আলী সাহারানপুরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীস শরীফে কালো খেযাব বা কালো কলপ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ হলো, অন্যদের সম্মুখে নিজের আসল বয়স গোপন করা ও লুকানো এবং অন্যকে ধোঁকা দেওয়া। নিজে ধোকাবাজি করা৷ (হাশিয়া সহীহ বুখারী ১/৫৩০)
যুবকের ক্ষেত্রে ধোঁকার এই বিষয়টি পাওয়া যায় না৷ তাই কোনো কোনো ফকীহ ইমাম যুবকদের জন্য কালো খেযাব বা কলপ ব্যাবহার জায়েয হওয়ার মতামত ব্যাক্ত করেছেন৷ (ফায়যুল কাদীর ১/৩৩৬ )
২৷ বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবনে শিহাব যুহরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
كنّا نختضب بالسّواد إذ كان الوجه جديدا اي شبابا فلمّا نفض الوجه والأسنان اي كبرنا تركناه
অর্থাৎ আমাদের চেহারা যখন সতেজ ও ভালো ছিল ৷ তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। আর যখন আমাদের চেহারা মলিন হয়ে গেল ভেঙ্গে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল তখন আমরা কালো খেযাব ছেড়ে দিয়েছি। (ফাতহুল বারী ১০/৩৬৭)
তবে "তুহফাতুল আহওয়াযী" তে উল্লখ করা হয়েছে যে, হাদীস শরীফে যেহেতু কালো খেযাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে৷ তাই যুবকদের জন্যও একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেযাব ব্যবহার করাই উচিত হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/১৫৪)
কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করা কি বৈধ?
বার্ধক্যজনিত কারণে চুল পেকে গেলে কালো খেযাব ব্যতিত অন্য খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব। যেমন পূর্বে উল্লিখিত হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু কুহাফা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কে কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হলুদ রং ব্যবহার করতে দেখেছি তাই আমিও হলুদ রং ব্যবহার করতে পছন্দ করি ও ভালোবাসি।
<< ১১, ৯৯৯ টাকায় এই মোবাইলটি ক্রয় করতে মোবাইলের ওপর ক্লিক করুন৷ >>
মুজাহীদদের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা বৈধ
আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামী সৈনিকের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা বৈধ৷ এতে সত্রুদের মনে ত্রাস সৃষ্টি হবে৷ তারা ভীতসন্ত্রস্ত হবে৷ এ ব্যাপারে সকল ইসলামী স্কলারগণ একমত৷ যখিরা কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
أما الخضاب بالسواد للغزو ـ ليكون أهيب في عين العدو ـ فهو محمود بالاتفاق
অর্থাৎ যুদ্ধে ইসলামী সৈনিকের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা, যেন শত্রু পক্ষের চোখে ভয়ের সঞ্চার হয়৷ এটা সকলের ঐক্যমতে প্রশংসনীয়৷
স্ত্রীর মনোরঞ্জের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা
দাম্পত্য লাইফের মনের মিলন, সুখ-শান্তি একজন মানুষের অন্যতম চাহিদা, প্রয়োজন ও আবশ্যকীয় বিষয়। এটিকে হাল্কা করে দেখার অবকাশ ও সুযোগ নেই। তাই, কোন স্বামী যদি নিজ স্ত্রীর সন্তোষ ও সন্তুষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে বা বিশেষ বিবেচনায় কালো খেযাব ব্যবহার করে, সেটিকে অবৈধ বলা হবে না।
ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন,
كما يعجبني أن تتزين لي يعجبها أن أتزين لها
অর্থাৎ স্ত্রীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য যেমন আমার কাছে পছন্দনীয়৷ তেমনি তার জন্য আমার সুসজ্জিত থাকা তার কাছে পছন্দনীয়৷
চুলে কলপ দিলে কি নামায হয়?
চুলে কালো খেযাব বা কালো কলপ লাগানো মাকরূহে তানজীহী। কালো খেযাব লাগানো বা কলপ ব্যবহারকারীর নামায শুদ্ধ হবে৷ তিনি যদি ইমামতি করেন তাহলে তার ইমামতীও কারাহাত ছাড়াই জায়েজ হবে।
মাবসূতে সারাখসীতে এসেছে,
واما من اختضب لأجل التزئين للنساء، والجوارى، فقد منع من ذلك بعض العلماء رحمهم الله تعالى، والاصح أنه لا بأس به، وهو مروى عن أبى يوسف رح، قال: كما يعجبنى أن تتزين لى يعجبها أن اتزين لها
অর্থাৎ স্ত্রীকে খুশি করতে বা তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে যে ব্যক্তি কালো খেযাব ব্যবহার করে কোনো কোনো উলামায়ে কেরাম তা করতে নিষেধ করেছেন। তবে বিশুদ্ধ মত হলো, এতে কোন সমস্যা নেই, জায়েয আছে। এটি ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "যেমনিভাবে আমি চাই স্ত্রী আমার জন্য সজ্জিত থাকুক, তেমনি স্ত্রীও চায় তার জন্য স্বামী পরিপাটি থাকুক।"
[মাবসূত-১০/১৯৯]
ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ ব্যাপারে ইজমা নকল করেছেন যে, উল্লিখিত রেওয়ায়েত দ্বারা বর্ণনা সর্বসম্মত মতানুসারে ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয় না। আর নিষেধ করা দ্বারাও সর্বসম্মত মতানুসারে মাকরূহে তাহরীমী প্রমাণিত হয় না।
সুতরাং শুধু মাকরূহে তানজীহী এর হুকুম সাব্যস্ত হয়।
আর মাকরূহে তানজীহী কাজ করলে উক্ত ব্যক্তি ফাসিক হয় না। তার ইমামতী করাতে কোন সমস্যা নেই। আর তার নামাযও বিশুদ্ধ হবে৷
<< এই ল্যাপটপটি ক্রয় করতে ল্যাপটপের উপর ক্লিক করুন >>
মেয়েদের চুলে কালার করা কি হারাম?
অনেকেই জানতে চায় যে, মেয়েদের চুলে কালার করা কি জায়েয? মেয়েদের চুলে কালার করা কি হারাম? এর উত্তরে বলবো শরীয়ত স্পষ্ট ভাবে বলে যে, নারীদের চুলে কালো কলপ ব্যবহার করা বা কালো কোনো রঙ করা জায়েয নেই। চাই বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত৷ চুলে কালো কলপ করা থেকে বেঁচে থাকা পুরুষ মহিলা সকলের জন্য জরুরী ও আবশ্যক৷ এছাড়া স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে তার মনোযোক নিজের দিকে ফেরানো এবং পরপুরুষকে দেখানো উদ্দেশ্য না হলে নারীরা চুল বাদামী কালার,সোনালী,লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যদি কলপ বা রঙ দিয়ে রাঙাতে পারে।
(রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৬)
তবে মনে রাখতে হবে, কোনো নায়িকা বা গায়িকা, ব্যভিচারী মহিলা ও কাফের নারীর অনুসরন ও অনুকরণ কিংবা সাদৃস্যধারণের মন- মানসিকতা কাজ না করে। হাদিসে বলা হয়েছে,
من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে জাতির বা সম্প্রদায়ের অনুকরণ অনুকরণ করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত দলভূক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং, ৫১১৪)
পায়ে মেহেদি লাগানো যাবে?
নারীরা তাদের হাতে, পায়ে, চুলে ও মাথায় মেহেদি দিতে পারবে৷ এটা তাদের জন্য জায়েয৷ মেহেদি শুধু সৌন্দর্যের বিষয়। অতিরিক্ত আর কিছুই না। এটাই হানাফী ও মালেকী মাযহাবের ফতোয়া৷ ইমাম ইবনে বায ও ইবনে উসাইমিন রহিমাহুমাল্লাহ ও এমনটি বলেছেন৷
আরো পড়ুন→এবার ড. জাকির নায়েক মাযহাবের পক্ষে চলে আসলেন
ছেলেদের হাতে মেহেদি দেওয়া কি জায়েয
ছেলেদের জন্য বিয়ের সময় হোক বা অন্য সময় হাতে বা পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নেই। কারণ, এটা এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা হারাম। হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
طيب الرجال ما ظهر ريحه وخفي لونه وطيب النساء ما ظهر لونه وخفي ريحه
অর্থাৎ পুরুষের বা ছেলেদের সুগন্ধি এমন যার সুগন্ধ ঘ্রাণ প্রকাশ পায় কিন্তু রঙ গোপন থাকে এবং নারীর সুগন্ধি এমন হবে যার রঙ প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধ গোপন থাকে। ( তিরমিযী হাদীস নং ২৭৮৭)
তবে হ্যাঁ, চুল ও দাঁড়িতে ইউজ করতে পারবে। আর চিকিৎসার প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে মেহেদী ব্যবহার করতে পারবে৷ তা জায়েজ আছে। (তিরমিযী হাদীস নং ২৩৪১ রদ্দুল মুহতার ৬/৪২২)
পরিশেষে পাঠকের কাছে নিবেদন, চুলে রং করা কি হারাম? আলহামদুলিল্লাহ এর সঠিক উত্তর আপনি জানতে পারলেন৷ সুতরাং এখন থেকে চুলে রং করা থেকে বিরত থাকুন৷ আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন৷ আমীন৷