নামাযে খুশু খুযু



একাগ্রতা বা খুশু’ খুজু’র সাথে নামাজ পড়ার ব্যাপারে কোরআনে কারীমে ও হাদীস শরীফে অনেক জোর তাকীদ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ . الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
অর্থাৎ, মুমিনগণ সফল। যারা নিজেদের নামাজে একাগ্র।
(সূরা মুমিনূন: ১ ও ২)
সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য উচিৎ একাগ্রতা ও খুশু’ খুজু’র সাথে নামাজ আদায় করা। তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করা উচিৎ নয়।

জনৈক সাহাবি হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সবিনয় আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, আমি নামাজে দাঁড়ালে দিল এদিক সেদিক চলে যায়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কী অবস্থা? তিনি জবাবে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক অবস্থানে থাকে। সেগুলো আমি ঠিক রাখি।
নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ অবস্থায় কি তুমি নামাজ ছেড়ে দাও? তিনি বললেন, জি না। তখন নবীজী বললেন— তুমি অত্যন্ত মজবুত ইমানের অধিকারী কারণ শয়তান তোমার নামাজ পড়াকে সহ্য করতে পারে না, সে তোমার অন্তরে বিভিন্ন ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণার সৃষ্টি করে। তুমি শয়তানের সঙ্গে জিহাদ করে নামাজেই অটল থাক। এভাবে কিছুদিন নামাজ পড়লে শয়তান বুঝবে যে এর পেছনে মেহনত করে লাভ নেই। তাই সে তোমাকে বাদ দিয়ে অন্যত্র চেষ্টা করবে!

আমাদের আকাবির ও পূর্বসুরী আল্লাহ ওয়ালা ও বুযূর্গানে দ্বীন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, ‘যদি কেউ নিয়মিত সাতটি আমল করে তাহলে তার নামাজে খুশু’ খুজু’ ও একাগ্রতা পয়দা হবে। আমল সাতটি হল-
1. নতুন ওযু করে নামাজ পড়া। অর্থাৎ, এক ওযু দ্বারা কোন আমল করার পর ঐ ওযু থাকা সত্বেও অন্য ওয়াক্তের নামাজ আদায় করার জন্য পুনরায় ওযু করা। তবে মনে রাখতে হবে, আগের ওযু দ্বারা নামাজ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। তারপরও আবার ওযু করে নেয়া উত্তম।
2. নামাজের দাড়ানোর পূর্বে নামাজের গুরুত্ব ও আল্লাহ তা’আলার সামনে দন্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি নিজের দিলে স্থাপন করা বা ধ্যান করা। রাসূল স. বলেছেন,
ان تعبد الله كانك تراه فانك ان لا تراه فانه يراك.
অর্থাৎ তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও,তাহলে এ ধারণা করবে যে,তিনি তোমাকে দেখছেন! ( ইবনে মাযা, হাদীস নং 63)
3. নামাজের প্রত্যেকটি আমল সুন্নত তরীকায় আদায় করা।

4. নজরকে ঠিক রাখা। অর্থাৎ-
 ক. দাড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় নজর রাখা। রাসুল সা. নামাজের সময় মস্তক অবনত রাখতেন এবং দৃষ্টি রাখতেন মাটির দিকে। [বায়হাক্বী, হাকেম; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৬৯]
খ. রুকু অবস্থায় পায়ের পাতার দিকে নজর রাখা।
গ. সিজদারত অবস্থায় নাকের ডগা বা অগ্রভাগের দিকে নজর রাখা।
ঘ. বসা অবস্থায় কোল বা রানের দিকে নজর রাখা।
রাসুল সা. যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, শাহাদত আঙ্গুলের মাধ্যমে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।
[ইবনে হিববান হা/১৯৪৭; ইবনে খুযায়মা হা/৭১৯, সনদ ছহীহ]

5.নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করা
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তুমি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ যে ব্যক্তি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করবে, তার নামাজ যথার্থ সুন্দর হবে। আর তুমি সেই ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় কর, যে জীবনে শেষবারের মত নামাজ আদায় করে নিচ্ছে’। [দায়লামী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪২১]

6.পঠিত আয়াত ও দো‘আ সমূহ গভীরভাবে অনুধাবন করা!
নামাজে পঠিত প্রতিটি আয়াত ও দো‘আ গভীর মনোযোগে অর্থ বুঝে পড়তে হবে এবং শুনতে হবে। বিশেষত পঠিত দো‘আ সমূহের অর্থ একান্তভাবেই জানা আবশ্যক। কুরআনের আয়াত সমূহ শ্রবণে যেসব বান্দা প্রভাবিত হয়, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধদের মত পড়ে থাকে না’ [ফুরকান ২৫/৭৩]

7. প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের পর ওয়াকফ করা!
এ পদ্ধতি একদিকে যেমন পঠিত আয়াত সম্পর্কে চিন্তা ও উপলব্ধি করতে সহায়ক হয়, অন্যদিকে তেমনি তা একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। রাসুল সা.-এর কুরআন তেলাওয়াতের ধরন ছিল এরূপ। তিনি প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করতেন। [আবুদাঊদ হা/৪০০১, সনদ ছহীহ]
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন!!!









সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন