নোবেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

নোবেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
HMREZAULISLAM.BLOGSPOT.COM

নোবেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়



গোটা পৃথিবী আজ নোবেল করোনা ভাইরাস মহামারির সামনে থরথর করে কাঁপছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা৷ ছড়িয়ে পড়ছে অনেক ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য৷ তাই সাধারণ মানুষ নোবেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন৷
তাই এই আর্টিকেলে করোনা প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে৷

আরো পড়ুন
করোনা: মসজিদে নামায বন্ধ রাখার শরয়ী বিধান
আমাদের প্রথম কাজ হলো, আল্লাহর  উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করা৷ ভীত ও আতঙ্কিত না হওয়া৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللّهُ لَنَا هُوَ مَوْلاَنَا وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থাৎ আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। [ সুরা তাওবা ৯:৫১ ]
নিয়মিত ইস্তেগফার ও দোয়া করা৷ সকাল সন্ধ্যার আযকারগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা৷
সুনানে তিরমিযি ও আবু দাউদে এসেছে , আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজতে বের হলাম যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। তাঁর সাথে যখন সাক্ষাৎ হল তিনি বললেন, ‘قل’ বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قل  ’ বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قل’ বল। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! কী বলব? তিনি বললেন

قل هو اللَّه أحد ، والمعوذتين حين تمسي وحين تصبح ، ثلاث مرات تكفيك من كل شيء
অর্থাৎ ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ ও ‘মুয়াওয়াযাতাইন’ সন্ধ্যায় ও সকালে, তিনবার। এ (সূরাগুলো) সব  কিছু থেকে তোমার  হেফাযতের জন্য যথেষ্ট হবে। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১২; সুনানে আবু দাউদ, আদব অধ্যায়; হাদীস ৫০৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস  ৩৫৭৫
এ হাদীসে পাওয়া গেল যে, সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা সকল অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
আরো পড়ুন
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুফতি রেজাউল করিমের পরামর্শ

সকাল সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পড়ুন-


اللهم إني أسألك العفو والعافية في الدنيا والآخرة، اللهم إني أسألك العفو والعافية في ديني ودنياي وأهلي ومالي، اللهم استر عوراتي وآمن روعاتي، اللهم احفظني من بين يدي ومن خلفي وعن يميني وعن شمالي ومن فوقي، وأعوذ بعظمتك أن أغتال من تحتي
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার কাছে (রোগ-বালা, বিপর্যয়-বিপদ, মুসিবত, ক্ষয়-ক্ষতি ইত্যাদি থেকে) নিরাপত্তা চাই।
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দীন ও দুনিয়ার ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাই। আর আমার পরিবার-পরিজন ও সম্পদের জন্য নিরাপত্তা চাই্।
হে আল্লাহ, আমার দোষ-ক্রটি গোপন রাখুন এবং আমার অন্তরে শান্তি প্রদান করুন। হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করুন-আমার ডান দিক হতে, বাম দিক হতে, সামনে হতে, পেছন হতে এবং উপর ও নীচের দিকের ক্ষতি থেকে। তোমার বিশালত্বের ওসীলায় তোমার নিকট জমিনের মধ্যে ধ্বসে যাওয়া (ভূমিধ্বস) থেকে আশ্রয় চাই।
(সুনান আবু দাউদ, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১২০০/৯১৬,)

সকাল-সন্ধায় তিনবার এই দুআটি পড়ুন ,

بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الأرض ولا في السماء وهو السميع العليم

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু  মাআ ইমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই ওয়া হুওয়া সামিউল আলীম ৷
তাহলে সে আকস্মিক বিপদ-আপদ মহামারি থেকে রক্ষা পাবে। (তিরমিযীঃ ৩৩৮৮)।

করোনা যেহতু সংক্রামক ব্যাধি তাই তা থেকে সতর্ক থাকুন৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যেতে নিষেধ করেছেন৷ সহীহ মুসলিমে এসেছে,
বনু সাকীফ গোত্রের এক কুষ্টরোগী রাসূলের কাছে বাইয়াত করতে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাকে মদিনায় প্রবেশ করতে বাধা দেন। রাসূল বরং তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, انا قد بايعنك فارجع
তুমি ফিরে যাও। তোমার বাইয়াত গ্রহণ হয়ে গেছে। ( মুসলিম)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«فِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ»
অর্থাৱ “সিংহের ভয়ে তুমি যেমন পলায়ন কর, জুযাম (কুষ্ঠ) রোগী দেখেও তুমি সেভাবে পলায়ন কর”। ( বুখারী, কিতাবুত তিব)
রাসুল (সা.) বলেছেন আরো বলেছেন,
ولا يورد ممرض علي مصح
অর্থাৎ অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না।
(মুসলিম, হাদিস : ২৮৭৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এ নির্দেশ এ জন্যই দিয়েছেন যে, রোগে আক্রান্ত  উটগুলো থেকে সুস্থ উটগুলোতে রোগ সংক্রামিত না হয়৷
 এ হাদীস গুলো থেকে আরো বুঝা যায় যে, করোনার মত সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যাক্তি সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না৷ যে সকল ভাই বিদেশে অবস্থান করছেন বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত শহরগুলোতে অবস্তান করছেন তারা সেখানেই অবস্থান করুন৷ বাংলাদেশেও যে সকল ভাই করোনা আক্রান্ত গ্রাম বা শহরে অবস্থান করছেন তারাও স্বীয় অবস্থানে অবস্থান করুন৷ পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত আপনারা সবর করুন৷

আরো পড়ুন

সহীহ বুখারীতে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাঁকে জানান,
أنه عذاب يبعثه الله على من يشاء وأن الله جعله رحمة للمؤمنين ليس من أحد يقع الطاعون فيمكث في بلده صابرا محتسبا يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر شهيد "

অর্থাৎ এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :  ৫৭৩৪)

সহীহ বুখারীর অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেন,
إذا سمعتم بالطاعون بأرض فلا تدخلوها وإذا وقع بأرض وأنتم بها فلا تخرجوا منها
অর্থাৎ  তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।
(বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৪)


করোনায় আক্রান্ত লোকেরা যদি কোন এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে সে এলাকার লোকদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে৷ তাই হাদীসের নির্দেশ অনুসারে আমাদের উচিৎ আপন আপন স্থানে অবস্থান করা৷
এতে আল্লাহ আমাদের সওয়াব দান করবেন৷

যারা করোনায় আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাদের উচিৎ ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে হোম কোয়ারেইন্টেনে থাকা৷ যাতে অন্যান্য ভাইয়েরা আক্রান্ত না হয়৷ অন্যথায় আপনারা  শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করার কারণে গুনাহগার হবেন৷
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

أحدث أقدم