মুফতি রেজাউল করিম |
হোম কোয়ারেন্টাইন যেভাবে উপভোগ করবেন ৷ এ শিরোনামে অনেকেই সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন ৷ তম্মধ্যে একটি পরামর্শ হলো, কুরআন পড়ুন ও কুরআনের অনুবাদ পড়ুন ৷ বিশেষ করে ছোট ছোট সূরাগুলোর অনুবাদ ৷ যেগুলো নামাযে তেলাওয়াত করা হয় ৷ অনুবাদ জানা থাকলে নামাযে আপনি অন্যরকম মজা স্বাধ পাবেন৷ কুরআন তেলাওয়াত ও তার অনুবাদ পড়ার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে ৷ সেগুলো গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে এ অবসর সময়ে পড়তে পারেন৷
মূলত প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে এখান থেকেই যে,"ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ স্পর্শ করা ও পড়া যাবে কি?"
একই বাক্যে দুটি প্রশ্ন ৷
১৷ ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ স্পর্শ করা বৈধ কি না?
২৷ ওযু ছাড়া কুরআনের আয়াত স্পর্শ করা ব্যতীত তেলাওয়াত করা জায়েয কি না?
ওযু ছাড়া কুরআন অ্যাপ বা অ্যাপের ভিতর থাকা কুরআনের আয়াত স্পর্শ করা বৈধ কি না?
উত্তরটি ভালোভাবে বুঝতে হলে মনে রাখতে হবে, যে বস্তুতে কোরআন মাজিদ স্থায়ীভাবে লেখা থাকে তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নয়। যেমন কাগজে লেখা কোরআন মাজিদ। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআন মাজিদ স্থায়ী নয়। কিছু আলোকরশ্মির মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়। সুতরাং তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে। সমকালীন বিখ্যাত ফকীহ শাইখ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের, শাইখ সালেহ ফাওযান প্রমুখ এমনই ফতোয়া দিয়েছেন। এছাড়া এর ওপরে গ্লাসের আবরণও থাকে। এ কারণেও কেউ কেউ বলেন তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যায়।
সুতরাং বলা যায়, দুই কারণে মোবাইলে বা অ্যাপের কুরআন ওযু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েয ৷
১৷ মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআন মাজিদ স্থায়ী নয়। কিছু আলোকরশ্মির মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়।
২৷ মেবাইলের ওপরে গ্লাসের আবরণও থাকে।
তবে কিছু কিছু গবেষক আলেম বলেন, "কোরআন মাজিদের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার্থে মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান অংশও বিনা ওজুতে স্পর্শ করা যাবে না।"
সতরাং কোরআন সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাই এর পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে স্পর্শ করার জন্য ওযুর শর্তারোপ করা হয়েছে। সে হিসাবে মোবাইলের স্ক্রিনে কুরআনে আয়াত বা কোনো পৃষ্ঠা ওপেন করলে যথাযথ মর্যাদা বজায় রাখতে হবে এবং লিখিত অংশ অযুতে ব্যতীত স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে
কুরআনের আয়াত ধরার জন্য ওজু থাকা আবশ্যক। তেলাওয়াত - পড়ার জন্য বা শোনার জন্য ওজু করা জরুরী নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ
অর্থাৎ "যারা পাক পবিত্র, তারা ব্যতিত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।" [সূরা ওয়াকিয়া-৭৯]উল্লেখযোগ্য ফতোয়ার কিতাব "তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ" তে এসেছে,
ويحرم على المحدث ثلاثة اشياء الصلاة، والطواف ومس المصحف الا بغلاف،
অর্থাৎ ওযুহীন ব্যক্তির জন্য তিনটি বিষয় হারাম ৷
১৷ নামায আদায় করা ৷
২৷ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা ৷
৩৷ গিলাফ ব্যতিত কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা৷
[তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ,১১৭, অাল বাহরুর রায়েক,খন্ড, ১ পৃষ্ঠা, ২০১]