মহামারিতে মুমিনের করণীয়


মহামারিতে মুমিনের করণীয়
ইবনে হাজার আসক্বালানী:


করোনা ভাইরাস বীরদর্পে মাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে ৷   উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের দেশেও ৷ এ পর্যন্ত এই মারণ ভাইরাস করোনা বিশ্বের এক লক্ষের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৷ আক্রান্ত হয়েছে ১২ লক্ষের বেশি মানুষ ৷ বাংলাদেশে এ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত আক্রান্তের সরকারী সংখ্যা ৮০৩ জন ৷ এ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যু বরণ করেছেন ৩৯ জন ৷


এ ত্রাস সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষা করণার্থে বিভিন্ন সাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা [world  health organization] ৷
পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞ ইসলামিক স্কলারগণ ৷ বাংলাদেশে কুরআন সুন্নাহয় অভিজ্ঞ ও পারদর্শী আলেমগণও দিয়ে যাচ্ছেন ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নানান পরামর্শ ৷
 কেউ দিচ্ছেন লাইভের মাধ্যমে আবার কেউ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় লিখনির মাধ্যমে ৷
এ মহামারি নতুন কোন বিষয় নয় ৷  অতিতেও ছিলো ৷ যখনই এ মহামারির আবির্ভাব হত তখনই তৎকালীন বিজ্ঞ আলেমগণ মহামারি  থেকে বাঁচার জন্য ধর্মীয় কিছু আমল করণীয় মানুষকে বলে দিতেন ৷
এমনকি মহামারিতে কী করণীয়? আর কী বর্জনীয়? এ বিষয়ে অনেক কিতাবও তখন রচিত হয়েছে ৷
তম্মধ্যে একটি কিতাবের নাম হলো,
          بذل الماعون في فضل الطاعون
[আরবি: ابن حجر العسقلاني‎‎] নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ৷ একজন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ৷ শাফেয়ী মাযহাবের ফকীহ এবং মুসলিম ব্যক্তিত্ব। তার রচিত ফতহুল বারী বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধতম ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর অন্যতম।
এ মহা মনীষী জম্মেছিলেন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৩৭২ খ্রিষ্টাব্দে ৷  ১০ ই শাবান ৭৭৩ হিজরী ৷
ইন্তকাল করেছেন ৮ ই জিলহজ্জ  ৮৫২ হিজরীতে ৷

তিনি স্বীয় রচিত " বাযলুল মাউন ফি ফাযলিত তাঊন"  কিতাবে মহামরিতে করণীয় সম্পর্কে চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন ৷ সামান্য পরিবর্তনসহ তা নিম্নে তুলে ধরা হলো৷ তিনি শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে,
ذكرالاداب المتعلقة بمن اصابه الطاعون وغيره من الاسقام
[প্লেগ এবং অন্যান্য অসুস্থতায় করণীয় ]

আদব নং ১: আল্লাহ তায়ালার নিকট সুস্থতা ও সমস্থ দূরারোগ্য ব্যাধি থেক আশ্রয় প্রার্থণা করা ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 "ادعوا ربكم تضرعا وخفية"
অর্থাৎ "তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে বিনয়ের সঙ্গে এবং গোপনে আহবান কর ৷
[সূরা আরাফ - ১৫৫]
[সুতরাং এ করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের দোয়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন ৷ বিশেষ করে হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো এ মহামারীতে পড়তে থাকা ৷]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা কে বলেছেন,
"يا عباس اكثر من الدعاء بالعافية"
অর্থাৎ "হে আব্বাস তুমি বেশি বেশি সুস্থতার জন্য দোয়া কর ৷"
[তিরমিযি ৩৫০৯]
হযরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

"ما سئل الله شيئا احب اليه من العافية"
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার কাছে যেসব দোয়া চাওয়া হয় তম্মধ্যে তার কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় দোয়া হলো, নিরাপত্তা ও সাস্থ্যের জন্য দোয়া করা৷
[জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ৩৫৪৮]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

"ما من دعوة يدعو بها العبد افضل من : اللهم اني اسألك المعافاة في الدنيا والاخرة"
অর্থাৎ বান্দা যেসব দোয়া করে তম্মধ্যে সর্বশ্রষ্ঠ দোয়া হলো, " হে আল্লাহ আমি আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা ও সুসাস্থ্য কামনা করছি ৷
[সুনানে ইবনে মাযা,৩৮৫১]

[অন্য হাদীসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
"এমন দুটি নেয়ামত রয়েছে, যার সুফল লাভে অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থ হয় ৷ তা হলো, সুস্থতা ও অবসর।
[বুখারী, হাদীস নং ৬৪১২] এ জন্য আমরা বেশি বেশি সুস্থতার জন আল্লাহর নিকট কায়মনাবাক্যে দোয়া করবো ৷]

আদব নং ২: আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের উপর সবর ও ধৈর্যধারন করা ৷ আল্লাহ যা নির্ধারন করেছেন তা সন্তুষ্টিচিত্তে মেনে নেওয়া ৷
হযরত সুহাইব রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

 "عجبا لامر المؤمن ان امره له كله خير ان اصابته سراء شكر وكان خيرا له وان اصابته ضراء صبر وكان خيرا له"
অর্থাৎ "মুমিনের বিষয়টি আশ্চর্যের! তার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। যদি তারা (মুমিন বান্দা) সুখে থাকে তবে শুকরিয়া আদায় করে, যার ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর সে বিপদে পড়লে ধৈর্য ধরে, তাও তার জন্য মঙ্গলজনক হয়।"
[সহীহ মুসলিম,২৯৯৯]

হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من يرد الله به خيرا يصب منه
অর্থাৎ " আল্লাহ তায়ালা যার কল্যান চান তাকে মুসিবতে নিপতিত করেন ৷
[বুখারী]
হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من اصيب بمصيبة بماله او في نفسه فكتمها ولم يشكها الناس كان حقا علي الله ان يغفر الله له
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন মুসিবতে নিপতিত হলো, সম্পদ নষ্টের হোক অথবা প্রাণের কোন বিপদ ৷ অতপর সে মানুষের কাছে অভিযোগ না করে গোপন রাখলো ৷ তাকে ক্ষমা করে দেয়া আল্লাহর উপর আবশ্যক হয়ে যায় ৷ [ তাবারানী]
[সুতরাং করোনা ভাইরাস সহ যে কোন মুসিবতে পতিত হলে আমাদের দ্বিতীয় কাজ হবে হায় হুতাশ না করা৷ মানুষের কাছে আল্লাহর উপর অভিযোগ না করা ৷ বরং ধৈর্য ধারণ করা যেন আল্লাহ আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করে দেন ৷]
আদব নং ৩: আল্লাহ তায়ালার উপর সুধারণা পোষণ করা ৷ ভালো মনোভাব রাখা ৷ খারাপ ধারণা পোষণ না করা ৷ বদগুমানী না করা ৷ বিশেষ করে যিনি এ করোনা ভাইরাস সহ যে কোন মহামারীতে নিপতিত হবেন৷ তিনি সর্বদা মনে করবেন এ মহামারী করোনা ভাইরাস, প্লেগ ইত্যাদি আল্লাহ তায়ালার তুচ্ছ একটি মাখলুক, সৃষ্টি ৷ আল্লাহ তায়ালার রহমত ও করুণা সুবিশাল ৷ আল্লাহ তায়ালা এ মহামারীর মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেয়ার মুখাপেক্ষি নয় ৷

আক্রান্ত ব্যক্তি তার পাপাচারের কথা স্বীকার করবে ৷ সে জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে ৷ রবের কাছে পানাহ চাবে ৷ তার সকল অক্ষমতা প্রকাশ করবে ৷ সে কুরানের " আয়াতুর রজা" আশার আয়াত ও হাদীস সর্বদা স্বরণে রাখবে ৷ সে সর্বদা আল্লাহর নিকট এ কামনা করবে যে আল্লাহ তাকে " খাতেমা বিল খাইর"ও "তাওহীদে"র সাথে মৃত্যু দান করেন ৷

আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আমল হলো "সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার৷" পাঠ করা ৷
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকালে   সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পড়বে সে যদি ওই দিনে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যদি সন্ধ্যায় পড়ে এবং রাতে মৃত্যুবরন করে তাহলেও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে ৷ সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার হলো,

"اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي؛ فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ"
উচ্চারণ : "আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।"
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।"
[সহিহ বোখারি: ৬৩০৬]

যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, জাহান্নামের আগুন তাকে ভক্ষণ করবে না ৷ [তিরমিযি]

" لااله الا الله والله اكبر لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد  لا اله الا الله ولا قوة الا بالله"
আদব নং ৪: হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

"من عاد مريضا ناده مناد من السماءطبت وطاب ممشاك وتبؤت من الجنة منزلا"
অর্থাৎ "যে ব্যক্তি কোনো রোগীর সেবা করতে যায়, আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে লক্ষ করে বলেন, তুমি মুবারক হও! এবং মুবারক হোক তোমার এই পদচারণা! তুমি জান্নাতে নিজ আবাস তৈরি করে নিলে।"
[তিরমিযি, হাদীস নং,২০০৮]

হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শোনেছি,
"ما من مسلم يعود مسلما غدوة الا صلي عليه سبعون الف ملك حتي يمسي وان عاده عشيةالا صلي عليه سبعون الف ملك حتي يصبح وكان له خريف في الجنة"
অর্থাৎ "যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে। এবং জান্নাতে তার জন্য একটি বাগিচা বানানো হয়৷"
[সুনানে তিরমিজি: ৯৬৭]

হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"من عاد مريضا لم يحضر اجله فقال عنده سبع مرات:  "اَسْاَلُ اللّٰهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَنْ يَشْفِيَك"َ الا عافه الله من ذلك المرض"
অর্থাৎ "কোন রোগীর কাছে যেয়ে সাতবার নিম্নের দোয়া পড়লে তার আরোগ্য লাভ হবে। যদি তার মৃত্যু না আসে।
اَسْاَلُ اللّٰهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَنْ يَشْفِيَكَ
[আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-২৭০০]

[তাই আসুন কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে আমরা তাকে দূরে ঠেলে না দেই ৷ তার সেবা করি ৷ তার যত্ন নেই ৷ তাকে আশারবাণী শোনাই ৷ তার কাছে দোয়া চাই ৷ আল্লাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন!! আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন!!]


সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন।

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন