রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের তারিখ
নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখের ব্যাপারে ইতিহাসবিদদের নিকট মতানৈক্য রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম রবিউল আওয়ল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে। সকল ঐতিহাসিক এ ক্ষেত্রে একমত।
জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন বরর্ণনা ও উক্তি পাওয়া যায়। এসব বর্ণনার ও উক্তির মধ্যে দুই আট ও বারো তারিখ গুরুত্বপূর্ণ। যা হাফেয ইবনে কাছির রহিমাহুল্লাহ গুরুত্বেও সাথে উল্লেখ করেছেন। ( আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২)
তাবাকাতুল কুবরা গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনে সাদ রহিমাহুল্লাহ দুই ও দশ তারিখের মতকে গ্রহণ করেছেন। (তাবাকুল কুবরা ১/৮০)
দুই ও দশ তারিকের বর্ণনাটি সঠিক নয়
তাবাকাতুল কুবরায় বর্ণিত দুই ও দশ তারিখের পক্ষে বর্ণনার সনদের মধ্যে ‘ওয়াকেদী’ রয়েছেন। আসমাউর রিজাল শাস্ত্রেও প্রশিদ্ধ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ ‘ওয়াকেদী’ সম্পর্কে বলেন, “ প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও তিনি পরিত্যাজ্য। ( তাকরীবুত তাহযীব ৪৯৮) অতএব দুই ও দশ তারিখের বর্ণনাসূত্রে ‘মাতরুক’ বর্ণনাকারী থাকায় এমতটি গ্রহণ করা সঠিক হবে না।
আট তারিখের মতটিই অগ্রগণ্য
আল্লামা অহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল কসতাল্লানী ৮ তারিখের বর্ণনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বলেন, কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম রবিউল আওয়াল মাসের আট তারিখ। শায়েখ আবু বকর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বলেছেন, এ মতটিই ইবনে আব্বাস এবং জুবাইর বিন মুতইম রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তাই অধিকাংশ আহলে ইলম মুহাদ্দিসগণ এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া ইতিহাস বিষয়ে যার নূন্যতম জ্ঞান আছে সেও এ মতটি গ্রহণ করবে। ( আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যা ১/৮৫)
তাছাড়া মাশহুর ও প্রশিদ্ধ ইতিহাসবিদ হাফেয ইবনে কাছির রাহিমাহুল্লাহ রেওয়ায়েতভঙ্গি দ্বারাও আট তারিখের মতটি অধিক শক্তিশালী ও রাজেহ-অগ্রগণ্য বলে ধারনা হয়। (আল বিদায়া ওয়া নেহায়া ২/২৮২)
বার তারিখের দলীল
হযরত ইবনে আবী শাইবা রাহিমাহুল্লাহ তার মুসান্নাফ গ্রন্থে সাঈদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেন যে, জাবের ও ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহুমা বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হস্তি বাহিনী যে বছর মক্কায় আক্রমন করে সে বছর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি রবিউল আওয়াল মাসে নবুয়ত প্রাপ্ত হন। এ মাসেই তাঁর মেরাজ হয় এবং এ মাসেই তিনি হিজরত করেন। এ মাসেই তিনি ওফাত লাভ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া ২/২৮৩)
আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ ভাইরাল
বারো তারিখের দলীলও গ্রহণযোগ্য নয়
এ হাদীসের সনদে আফফান বিন মুসলিম ও সাঈদ বিন মীনা উভয়ের মাঝে একজন বর্ণনাকারী আছেন যার নাম এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। তাই এ হাদীসটি মুনকাতে। আর হাদীসে মুনকাতে দলীলের উপযুক্ত নয়।
তাছাড়া আল্লামা শিবলী নুমানী ও শাইখ সুলাইমান নদভী কর্তৃক উর্দু ভাষায় রচিত ‘সীরাতুন নবী’ নামক কিতাবে এবং শায়খ সফীউর রহমান কর্র্তৃক আরবি ভাষায় রচিত ‘আর রাহীকুল মাখতুম’ নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯ ই রবিউল আওয়াল সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের তারিখ
নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের তারিখ নিয়েও ইখতেলাফ ও মতভেদ রয়েছে। রাজেহ বা অগ্রগণ্য মতানুসারে নবী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আওয়াল মাসের ১ তারিখে ইন্তেকাল করেন।
নবীজীর ইন্তেকালের ব্যাপাওে নি¤েœর বিয়গুলোতে ইমামগণ একমত-
১। নবী কারীম সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন ১১ হিজরীতে।
২। রবিউল আওয়াল মাসে।
৩। সোমবার
৪। ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ইন্তেকালের তারিখ সম্পর্কে হাদীসের মৌলিক কিতাবে স্পষ্ট কোনো রেওয়ায়েত পাওয়া যায় না। ইতিহাসবিদগণ এ সম্পর্কে তিনটি মত উল্লেখ করেছেন।
১। এক তারিখ। ২। দুই তারিখ। ৩। বার রবিউল আওয়াল
ঈদে মিলাদুন নবী পালন করা বৈধ নয় যে কারণে
১। নবীজী সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা সত্তে¡ওে তারা কখনও মিলাদুন নবীর দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করেননি। ইসলাম যদি ঈদে মিলাদুন নবী পালনে উৎসাহ প্রদান করত তাহলে সাহাবীরা তা কখনও অবহেলা করতেন না।
২। উপরে বলা হয়েছে যে, ১২ ই রবিউল আওয়াল নবীজী জন্মগ্রহণ করেছেন তা সহীহ সনদে প্রমাণিত নয়। বরং এ বিষয়ে পূর্বসূরি ইমামদেও মধ্যে যতেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। এ দিবস যদি বাস্তবেই পালনীয় হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এর কোনো না কোনো বিশুদ্ধ বর্ণনা অবশ্যই পাওয়া যেত। নিশ্চয়ই সাহাবায়ে কেরাম আমাদেও চেয়ে নবীজীকে বেশি ভালোবাসতেন।
৩। কোনো তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী ঈদে মিলাদুন নবী পালন করেননি।
৪। বিশিষ্ট চার ইমামের কোনো ইমামই ঈদে মিলাদুন নবী পালন করেননি।
আরো পড়ুন: আপনি ফ্রান্সের যে পণ্য প্রতিদিন ব্যবহার করছেন
ঈদে মিলাদুন্নবীর সূচনা
সকল আলেমগণ এ ব্যাপাওে একমত যে, নববী যুগে সাহাবীদেও যুগে ও তাবেয়ী- তাবে তাবেয়ীনদেও যুগে এ অনুষ্ঠান পালনের প্রচলন ছিলো না। কিন্তু কোন সময় এর আবির্ভাব ঘটেছে এ নিয়ে উল্লেখযেগ্য দুটি মত পাওয়া যায়।
১। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে মিসওে ফাতেমী স¤্রাজ্যে এ বিদয়াতের আবির্ভাব ঘটে।তারা প্রথমে ছয়জন ব্যক্তির জন্মোৎসব পালন করেন। (১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (২) আলী (৩) ফাতেমা (৪) হাসান (৫) হুসাইন (৬) তৎকালিন ফাতেমী সা¤্রাজ্যেও খলীফা। (আল খিতাত লিল মাকরীজী ১/৪৯০-৪৯৯)
২। হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে বাদশা আল মুযাফফার এর সহযোগিতায় দরবারী আলেম ওমার বিন মহাম্মাদ মল্লা এর পরিচালনায় সর্বপ্রথম নবী আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয়। (হাসনুল মাকসাদ লিস সয়ূতী ৪২, আল বিদায় ওয়ন নেহায়া ১৩/১৪৭)
১২ ই রবিউলের আমল
১২ ই রবিউল আওয়াল সোমবারে যদি বিশেষ কোনো আমল করতে হয় তাহলে রাসূলের অনুসরণে করতে হবে। রাসূল এ দিনে কী আমল করতেন? হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায় যে, নবী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনে রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন এটি কিসের রোযা? নবীজী বললেন, এ দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি।
আপনাদের নিকট কয়েকটি সরল প্রশ্ন
আপনারা যারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন তারা উত্তর দিবেন আশা করি।
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ ই রবিউল আওয়াল জন্ম গ্রহণ করেছেন তার অকাট্য প্রমাণ দিন।
২। ইসলামী সোনালী যুগে কেউ রাসূলের জন্মদিন পালন করেছেন তার প্রমাণ দিন।
৩। কারো কারো মতে রাসূল আলাইহিস সালাম ১২ ই রবিউল আওয়াল ইন্তেকাল করেছেন। তাহলে আপনারা এ দিন শোক পালন না করে আনন্দ মিছিল করেন কেন?
৪। ইসলামে কারো জন্ম দিন পালন করার বিধান কি? সে যেই হোক না কেন?
৫। যে দিন অতিবাহিত হয়ে যায় সে দিন আবার ফিরে আসে কিভাবে? একটু বুঝিয়ে দিন।
৬। রাসূলকে নিয়ে যখণ নাস্তিক মুরতাদরা কটূক্তি করে তখন আপনাদের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখি না কেন?