তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কি একই নামাজ

ইউটিউবে একটি বিষয় সার্চ দিলাম ৷ হঠাৎ করে সামনে চলে আসল আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব ৷ সে কি বয়ান! বয়ানে বলেই ফেললেন, তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ একই নামায ৷ মাথার ওপর আসমান ভেঙ্গে পড়ল ৷ তার না, আমার ৷ এত বড় একজন আলেম এ কথা বলে কীভাবে যে, তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ একই নামায ৷ 





প্রিয় পাঠক! তারাবীহ তাহাজ্জুদকে এক নামায বলা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। তারাবী ও তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণই ভিন্ন দু’টি নামায। আমি পরিস্কার কিছু পার্থক্য তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ বিষয়ে নিম্নে উপস্থাপন করছি।

[১] দু’টির শরয়ী উৎস আলাদা৷

তাহাজ্জুদ নামায কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। যথা পবিত্র কুরআনের আয়াত-

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا 

অনুবাদঃ রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। [আলইসরা-৭৯]

আর তারাবী নামায রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন,

شَهْرٌ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ،

অনুবাদঃ এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮]  সুতরাং দু’টি এক নামায হয় কি করে?

[২]মাশরূ তথা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত হবার স্থানও আলাদা ৷

তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয়, আর তারাবী মাশরূ হয় মদীনায়। তাহলে এক কিভাবে হল?

[৩] সময়কালও আলাদা ৷ 

তাহাজ্জুদ মাশরূ হয় হিজরতের আগে। আর তারাবী হয় হিজরতের পর।

[৪] রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট ৷ 

তাহাজ্জুদের রাকাত নির্দিষ্ট নয়। যে যতটুকু ইচ্ছে পড়তে পারে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ। কিন্তু তারবীহের রাকাত সংখ্যা উভয় দলের কাছেই নির্দিষ্ট আমাদের কাছে বিশ রাকাত, আর লামাযহাবীদের কাছে আট রাকাত। তাহলে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট আর অনির্দিষ্ট নামায এক হয় কি করে?

[৫] নাম আলাদা ৷

ফরজ নামায, ইশরাক, আওয়াবিন তাহাজ্জুদ ইত্যাদি আলাদা নামই প্রমাণ করে এসবই আলাদা আলাদা নামায। তেমনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামও প্রমাণ করে এ দু’টি নামায এক নামায নয়।

[৬] রমজানের শর্ত ৷ 

রাসূল সাঃ এর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে। তখন فارادوا ان لا يصوموا ولا يقوموا তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল সাঃ হযরত বিলাল রাঃ কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ان يصوموا وان يقوموا তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়। {দারা কুতনী-২/১৫৯}

উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।

[৭] বিতরের জামাত ৷

তারাবীহের পর বিতরের জামাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদের পর বিতরের জামাতের কোন প্রমাণ নেই। তাহলে দুই নামায এক কিভাবে? 

আল্লাহ তায়ালা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফসহ সকল আহলে হাদীসকে বুঝার তাওফিক দান করুন৷ আমীন ৷

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন