টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা কি জায়েয ?

“যদি দুনিয়ার সমস্ত মানুষ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করে তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে ৷’’


প্রি পাঠক, এ বক্তব্য বা উক্তি আমার নয় ৷ এ বাণী একজন কথিত আহলে হাদীস ও নিজেকে সহীহ আক্বিদায় বিশ্বাসী একজন শায়খের ৷ সর্বমহলে তিনি পরিচিত ৷ নাম তার আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ৷


যাই হোক, প্রিয় রিডার ৷ আমাকে একজন প্রশ্ন করেছেন যে, টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয আছে কি না? উত্তর জানার জন্য ইউটিউবে সার্চ করলাম ৷ প্রথমেই আমার সামনে উপস্থিত আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ৷ তার লেকচার শুনে মনে হলো আমি অন্য কোনো জগতে আছি ৷ প্রত্যেক দেশে ও প্রত্যেক যামানায় যে আমলটি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে সে আমল সম্পর্কে বললেন সকলেই গুনাহগার হবে ৷


প্রিয় পাঠক, আজকের প্রবন্ধের বিষয়, টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েয আছে কি না? এক কথায় উত্তর যদি কেউ টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করে তাহলে তা জায়েয আছে কোন সমস্যা নেই ৷ আমি জানি, আপনি একজন সতর্ক পাঠক ৷ আমার কথা দলীল ছাড়া একসেপ্ট করবেন না ৷ দাড়ান ৷ সামনে কিছু দলীল পেশ করছি ৷

আরও পড়ুন→ইফতারের সহীহ দোয়া ও মতিউর রহমান মাদানীর মিথ্যাচার

দলীল ১ ৷ ইমাম বুখারীর মত হলো, টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েয ৷ ইমাম বুখারীর কথা আগে উল্লেখ করলাম যেহেতু তারা মনে করেন ইমাম বুখারী তাদের লোক ৷ যদিও ইমাম বুখারী আমাদের লোক ৷ এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ তার বুখারীতে কিতাবুয যাকাত অধ্যায়ে 

بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ

নামে একটি বাব কায়েম করেছেন ৷ আল্লামা ইবনু রশিদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, উক্ত অন্য সকল মাসআলায় ইমাম বুখারী ও হানাফীদের মাধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও এ মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী হানাফীদের সাথে সহমত পোষন করেছে । [ফাতহুল বারী, ৩/৩১২]


দলীল ২ ৷ সাহাবায়ে কেরাম খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন ৷ হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন,
أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ
অনুবাদঃ  আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন।[ইবনে আবি শায়বা,২/৩৯৮]

দলীল ৩৷ হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন,
لا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ
অনুবাদঃ টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। [ইবনে আবি শায়বা,২/৩৯৮]


দলীল ৪৷ হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহিমাহুল্লাহ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন ৷
ইবনে শাইবা রহিমাহুল্লাহ বলেন,
أنه كان يعطي في صدقة الفطر ورقًا - دراهم فضية
অনুবাদঃ হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহিমাহুল্লাহ রৌপ্যের দিরহাম দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন ৷ [ইবনে আবি শায়বা,২/৩৯৮]


দলীল ৫ ৷ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয ৷ যার সময়ে ইনসাফ ছিল পূর্ণ মাত্রায় ৷ যাকে পঞ্চম খলীফায় রাশেদ বলে গণ্য করা হয় ৷ যার সময়ে তিন হাজার সাহাবী জীবিত ছিলেন ৷ তিনি পত্র মারফতে বিভিন্ন শহরে লিখে পাঠান,
أن صدقة الفطر نصف صاع على كل إنسان أو القيمة نصف درهم
অনুবাদঃ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর অর্ধ সা' বা তার মূল্য অর্ধ দিরহাম সদকাতুল ফিতর আদায় করবে ৷


দলীল ৬ ৷ ফকীহ আবু জাফর রহিমাহুল্লাহ বলেন,
أداء القيمة أفضل؛ لأنه أقرب إلى منفعة الفقير فإنه يشتري 
به للحال ما يحتاج إليه،
অনুবাদঃ সদকাতুল ফিতর মূল্য দিয়ে আদায় করা উত্তম ৷ কারণ এতে দরিদ্র শ্রেণী বেশি উপকৃত হবে ৷ সে তার প্রয়োজনীয় জিনিষ তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিয়ে ক্রয় করতে পারবে ৷


দলীল ৭ ৷ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাযিআল্লাহু আনহু যিনি হালাল হারাম সম্পর্কে বেশি জানতেন ৷ তিনি ইয়ামান বাসীদেরকে বললেন,
ائتوني بعرض ثياب خميص أو لبيس في الصدقة مكان الشعير والذرة أهون عليكم وخير لأصحاب النبي صلى الله 
عليه وسلم بالمدينة
অনুবাদঃ মু‘আয (ইবনে জাবাল) (রাঃ) ইয়ামনবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এস। ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী (সাঃ) এর সাহাবীগণের জন্যও উত্তম। [হাদিসঃ ১৪৪৮]

এ হাদীস থেকে এ মূলনীতি বের হয় যে, যাকাত ও সদকার ক্ষেত্রে দাতার পক্ষ থেকে যা সহজ এবং গ্রহীতার জন্য যা বেশি উপকারী তা দিয়ে আদায় করাই উত্তম ৷ সুতরাং বর্তমান সময়ে টাকা দিয়ে আদায় করাই উভয়ের জন্য কল্যানকর ৷


প্রিয় পাঠক, আল্লামা আহমাদ গুমারী রহিমাহুল্লাহ এ ব্যাপারে একটি কিতাব রচনা করেছেন ৷ যার নাম,
تحقيق الآمال فى إخراج زكاة الفطر بالمال
এ কিতাবে তিনি বিভিন্ন প্রমাণের আলোকে হানাফী মাযহাবকে প্রাধান্য দিয়েছেন ৷ শুধু তাই নয়, বর্তমানে মুল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা বেশি উপযোগী এ ব্যাপারে তিনি ৩২ টি কারন উল্লেখ করেছেন ৷



সম্মানিত রিডার, আমি একটি ঘটনা উল্লেখপূর্বক প্রবন্ধ শেষ করছি ৷ একবার ইমাম মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ শাফেয়ীদের মত খন্ডন করতে গিয়ে বলেন, আমরা যদি সদকাতুল ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে তোমাদের মত হাদীসকে আবশ্যক করে নেই তাহলে হাদীসে বর্ণিত পাঁচ প্রকার খাদ্য ব্যতীত অন্য খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েয হবে না ৷ তা ছাড়া নববী সা' দ্বারা পরিমাপ করা আবশ্যক হবে ৷ অথচ সবার কাছে নববী সা' নেই ৷ তখন শাফেয়ীগণ উত্তর দিলেন, যাদের কাছে নববী সা' নেই তারা আমাদের থেকে ক্রয় করে নিবে ৷ তখন ইমাম মুহাম্মাদ বললেন, যদি আপনাদের সাথে তাদের যুধ্ব চলতে থাকে তখন কী করবে ? এ কথা শুনে শাফেয়ীগণ লা- জাওয়াব হয়ে গেল ৷



প্রিয় পাঠক, আপনি একটু বিবেক দিয়ে ভাবুন ৷ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েয কি না? আপনার মন বলবে অবশ্যই জায়েয ৷ এবং টাকা দিয়ে আদায় করাই বেশি উপযোগী ৷

লেখকঃ মুফতি রেজাউল করিম, লেখক ও কলামিস্ট
Email: hmrezaulislam1995@ gmail.com

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন