“টয়লেটে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। দেখুন-
قراءة القرآن في الحمام على وجهين إن رفع صوته يكره وإن لم يرفع لا يكره وهو المختار
“টয়লেটে কুরআন তেলাওয়াতে দুই সুরতে হয়ে থাকে। এক হল উচ্চস্বরে যা মাকরুহ, আরেক হল নিরবে যা মাকরুহ নয় বরং এটাই পছন্দনীয়।” (ফতোয়ায়ে আলমগিরী ৫/৩১৬)
এখানে যুগের মুজতাহিদ, মুজাফফার বিন মুহসিনের ভাষায় অসাধারণ মাথার অধিকারী শায়খ রাহুল হাম্মাম এর অনুবাদ করেছেন টয়লেট! এই যে কেল্লা ফতেহ! হানাফি মাজহাবে টয়লেটে কুরআন তেলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে! আর যাই কোথায়? একটি পো্স্ট না দিলে কী পেটের ভাত হজম হয়? মজার কথা কী?
কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম সাহেবের অনুবাদ দেখিয়েছিলাম। তিনি হাম্মাম এর অনুবাদ করেছেন ঘু ঘু পাখি। আলবানি সিলসিলাতুল আহাদিসিস জয়িফার ৭০৯ নং বর্ণনা হলো:
إنما حر جهنم على أمتي كحر الحمام
এটার অনুবাদ আকরামুজ্জামান সাহেবরা করেছেন: "আমার উম্মতের উপর জাহান্নামের আগুনের গরম একটা ঘুঘুর গরমের ন্যায়" (যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ: ২/২১৫)
এখানে আকরামুজ্জামান সাহেবরা হাম্মাম এর অনুবাদ করেছেন ঘুঘু! আবারা রাহুল সাহেব অনুবাদ করেছেন টয়লেট! রাহুলের অনুবাদ ঠিক হলে এখানে আকরামুজ্জামান সাহেবদের বিশুদ্ধ অনুবাদ হবে :‘ "আমার উম্মতের উপর জাহান্নামের আগুনের গরম একটা টয়লেটের গরমের ন্যায়”!!
ফিতনায় পড়ে গেলাম। একদিকে শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালামের মতো মহান শায়খ! । তিনি হাম্মাম এর অনুবাদ করেছেন ঘুঘু! আরেক দিকে শায়খ রাহুলের মতো হাইব্রিড শায়খ! তিনি অনুবাদ করেছেন টয়লেট? আমরা কার কথা মানব?
আসুন, প্রত্যেক তালিবুল ইলমের হাতের কাছে থাকা কয়েকটি অভিধান ঘুরে আসি। প্রথমে যাব আরবি ভাষার প্রসিদ্ধ অভিধান ‘আল মু’যামুল ওয়াসিত’ এ। সেখানে বলা হয়েছে:
الحمام: ما يغسل فيه (ج) حمامات
অর্থাৎ হাম্মাম অর্থ হলো: যেখানে গোসল করা হয়। বহুবচন হলো: হাম্মামাত। (আল মু’যামুল ওয়াসিত: ২০৭)
এবার একটু ‘মিসবাহুল লুগাত” ঘুরে আসি। সেখানে বলা হয়েছে:
” الحمام“
বহুবচন হলো حمامات ।
অর্থ হলো গোসলখানা।” (মিসবাহুল লুগাত: ২৬৪)
অনেক জেনারেল শিক্ষিত মানুষও ড. ফজলুর রহমানের লেখা ‘আল মুযামুল ওয়াফী’ অভিধান মাঝে মাঝে খুলেন। সেখানে বলা হয়েছে:
” الحمام“
ج حمامات । গোসলখানা, সুইমিংপুল। গোসল”
(আল মু’যামুল ওয়াফী: ৪১৮)
আসলে হাম্মাম অর্থ ঘুঘুও না, টয়লেটও না। আকরামুজ্জামান সাহেব হরকত না থাকার কারণে হাম্মামকে হামাম বানিয়ে অনুবাদ করেছেন ঘুঘু। আর রাহুল ভাইয়ের ব্যাপারে আগেই বলেছি যে, এ শাস্ত্রে তার অবস্থান মিসকিনের চেয়েও আরও নিচে। এজন্য বাচ্চাদের মতো না বুঝে দুষ্টামি করে হাম্মাম এর অনুবাদ টয়লেট করে ফেলেছেন!
মূলত ফতোয়ায় আলমগীরীতে গোসলখানায় কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কিনা? সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। গোসলখানায় উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা মাকরুহ। তবে আস্তে পড়া যাবে!
রাহুল সাহেবের শাস্ত্রীয় জ্ঞান যে একেবারেই নেই, সেটা আগে বারবার বলেছি। একটি বইয়ের অনুবাদ করতে হলে আগে পরিভাষা বুঝতে হয়। পরিভাষা না বুঝার কারণে তিনি দেখেন وهو المختار এর অনুবাদ করেছেন বরং এটাই পছন্দনীয়! অথচ এটার বিশুদ্ধ অনুবাদ হলো: এটাই গ্রহণযোগ্য মত।
রাহুল ভাইয়ের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাকে সহিহ বুঝ দান করুন। কিছুদিন পড়াশুনা করার তাওফিক দান করুন। সবকিছু বাদ দিয়ে অন্তত নামাজ সহিহ হয় পরিমাণ তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করার তাওফিক দান করুন।