ব্যাংকের সুদ গ্রহণ ও সুদ খোরের পরিণতি

 

ব্যাংকের সুদ গ্রহণ ও সুদ খোরের পরিণতি

রিবা বা সুদের আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি ৷

ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে।

রিবা প্রধানত দুই প্রকার : ১. রিবা নাসিআহ; একে রিবাল করয ও রিবাল কুরআনও বলা হয় ২. রিবাল ফদল; একে রিবাল বাইও রিবাল হাদিসও বলা হয়।

রিবান নাসিআহ : আরবি ‘নাসিআহ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মেয়াদ, সময় নেয়া, বিলম্ব বা প্রতীক্ষা করা। ইমাম আবু বকর আল জাস্সাস তার বিখ্যাত তাফসির ‘আহকামুল কুরআনে’ রিবার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে: ‘রিবান নাসিআহ হচ্ছে ঋণের ওপর সময়ের অনুপাতে ধার্যকৃত অতিরিক্ত অংশ।’
যেমন কেউ যদি কাউকে ১০০ টাকা ঋণ দেয় এ শর্তে, তাকে মেয়াদান্তে ১১০ টাকা দিতে হবে। এখানে অতিরিক্ত ১০ টাকাকে রিবান নাসিআহ বলা হবে। (আহকামুল কোরআন ১/৫৫৭)

রিবাল ফদল: আরবি ‘ফদল’ শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত। একই জাতীয় জিনিস লেনদেনে কমবেশি করে আদায় করার নাম রিবাল ফদল। অর্থাৎ, একই জাতীয় দ্রব্য বা মুদ্রার লেনদেনকালে একপক্ষ আরেক পক্ষের নিকট থেকে চুক্তি মোতাবেক শরিয়ত সম্মত বিনিময় ব্যতিত যে অতিরিক্ত মাল গ্রহণ করে তাকে রিবাল ফদল বলে। যেমন, এক কেজি উন্নতমানের খেজুরের সাথে দেড় কেজি নিম্নমানের খেজুর বিনিময় করা। রিবাল ফদলকে মালের সুদও বলা হয়।


              ইসলামে সুদের বিধান


ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদ সমাজের এক চরম ব্যাধি। সুদের ভয়াল থাবায় দরিদ্র মানুষ আরও দারিদ্র্যের চরমসীমায় নেমে যায়। সমাজে চলে আসে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওয়ালায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী-জাহান্নামি।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)।

         সুদখোরের ভয়াবহ পরিণতি


১৷ সুদের অর্থে কোনো বরকত নেই : সুদের মাধ্যমে যত অর্থই উপার্জন করুক, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাতে কোনো বরকত নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

২৷ সুদখোর আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত : সুদখোর স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না করো (সুদের বকেয়া না ছাড়ো, সুদের কারবার অব্যাহত রাখো) তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)

৩৷ সুদখোর কিয়ামতের দিন যে অবস্থায় উঠবে : কিয়ামতের দিন সুদখোর পাগলের মতো উঠবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে। এটা এ জন্য যে তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

৪৷ সুদ খাওয়া কুফরি কাজ :  ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও……।(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)

মহান আল্লাহ সবাইকে সুদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন