হামাস কি ষড়যন্ত্রের শিকার?

হামাসের স্মরণকালের সেরা হামলার পর মোসাদের নির্বুদ্ধিতা বা অসতর্কতা আলোচনায় এসেছে, যা অনেকেই মানতে রাজি নন। সীমান্তে ইজরাইল যে-ধরণের নিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছে, তাতে মোসাদ এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারবে না, বিষয়টা মেনে নেয়া কষ্টের। এজন্য এ ঘটনাকে সন্দেহের নজরে দেখছেন অনেকে।


কাছাকাছি সময়ে জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্যগুলো লক্ষ করলে দেখা যায়, সে ইজরাইলের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন নীতিনকশা পেশ করে থাকে। সেখানে কখনোই গাজা বা ফিলিস্তিনের নাম নেয় না। অর্থাত সে ফিলিস্তিনের অস্তিত্বই স্বীকার করতে রাজি নয়। তার এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, সে খুব দ্রুতই গাজাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই এবারের মরণকামড়ের যাবতীয় আয়োজন নয় তো?

মিশর ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের ইন্টিলিজেন্স থেকে হামলার আগেও নাকি ইজরাইলকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে যে, হামাস আক্রমণ করতে পারে, আভাস মিলছে। তারপরও তেলআবিব সতর্কতা গ্রহণ না করার কী কারণ থাকতে পারে?

প্রথম দিন যে মিউজিক ফেস্টিভালে আক্রমণ হয়েছে, সীমান্ত থেকে তার অবস্থান বেশ দূরত্বে। হামাসের যোদ্ধারা এতদূর পর্যন্ত ঢুকে গেল, ইজরাইল কিছুই বুঝতে পারল না? যেভাবে তারা বোমা মেরে, প্যারাসুটের মাধ্যমে ফায়ারিং করে ভেতরে গেছে, তাতে মোসাদ ঘুমিয়ে ছিল, ব্যাপারটা একদমই ধোঁয়াশাপূর্ণ।

ইজরাইল তাদের গাজা সীমান্তে কয়েক স্তরের মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে। মিলিয়ন ডলার খরচ করে তারা গ্লাস ফেঞ্চ তৈরি করেছে। বর্ডারের সাধারণ কাঁটাতারই তাদের শেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নয়। তারা কয়েক হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড দেয়াল দিয়েছে। তারপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসংযুক্ত ডিটেকশন টাওয়ার স্থাপন করেছে। সবগুলো বাধা এড়িয়ে কেউ ঢুকে পড়লেও এই টাওয়ারে সংকেত যাওয়ার কথা। তারপরও মোসাদ কিছু বুঝতে পারেনি, কথাটা কি বিশ্বাস করা যায়?

যে মিউজিক ফেস্টিভালে আক্রমণ হলো, বলা হচ্ছে ২৫০ প্লাস লোক সেখানে মারা গেছে। কথাটা অতিরঞ্জিত মনে হয় না? কারণ আমরা না তাদের লাশ দেখেছি, না ধ্বংসস্তূপের কোনো ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে। হতেও তো পারে, ইজরাইল এটাকে ফাঁপিয়ে প্রচার করে তাদের অমানবিক আক্রমণের বৈধতা নিতে চেয়েছে। 

হামাস কি এই আক্রমণের পরিণতি জানত না? ইজরাইলের সামরিক শক্তি সম্পর্কে তাদের তো স্পষ্ট জানাশোনা থাকার কথা। কিছু হলেই যে তাদের পেছনে আমেরিকা হাজির হবে, আর আরব দেশগুলো হামাসের পক্ষে পইপই করলেও ময়দানে কেউ যোগ দেবে না, সেটাও কি তারা ভাবেনি? গাজার সাধারণ মানুষরা মারা পড়ছে, আগেও পড়েছে, বারবার পড়েছে। এটুকু শহরে হামাসের যুদ্ধসরঞ্জাম আর কতই হবে? আরব রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা ছাড়া তারা যে আমেরিকা-ইজরাইলের সম্মিলিত আক্রমণ ঠেকাতে পারবে না, সেটাও তো স্পষ্ট ছিল। তবুও তারা এই আক্রমণ কেন করল?

আমিও চাই এই সংশয়টা মিথ্যায় পরিণত হোক। হামাস জিতুক, ফিলিস্তিন অস্তিত্ব ফিরে পাক এবং বাস্তুহারা মা-বোনেরা ঘরে ফিরে আসুক। কিন্তু হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু যেভাবে আমেরিকান ব্লকের সহযোগিতায় গাজায় পোড়ানীতি যুদ্ধ চালাচ্ছে, সেটা তাদেরই ষড়যন্ত্রের সফল বাস্তবায়ন নয় তো? হামাস তাদের পাতা ফাঁদে পা দিলো কি না? আমরা পুরো মুসলিম বিশ্ব নিজেদের আবেগের মাধ্যমে উল্টো ইজরাইলের পক্ষে বৈধতা তৈরি করছি না তো? আল্লাহ আমার সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণ করুন!

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন