ভালো মন্দের চার সাক্ষী

ভালো মন্দের চার সাক্ষী!! মুফতী রেজাউল করিম! ইসলামী টিউন!!
আল্লাহ তায়ালা জম্মগত ভাবে মানুষকে দুটি স্বভাব দান করেছেন! এক. ইমান ও নেক আমলের স্বভাব! যে স্বভাব অনুযায়ী চললে পরকালে রয়েছে মহা প্রতিদান! আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا. যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।( কাহাফ-107) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।( কাহাফ-1 দুই.গুনাহ ও পাপ কাজ করার স্বভাব! যার বিনিময়ে রয়েছে জাহান্নাম! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وَذَرُواْ ظَاهِرَ الإِثْمِ وَبَاطِنَهُ إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُواْ يَقْتَرِفُونَ. তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে।  ( আনয়াম- 120) কিয়ামতের ময়দানে দল হবে মাত্র দুটি! একদল জান্নাতী অপর দল জাহান্নামী! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ . অনুবাদ: এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অহী করেছি; যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কাবাসীদেরকে এবং ওর আশেপাশের বাসিন্দাকে, আর সতর্ক করতে পার জমায়েত হওয়ার দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই; সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল প্রবেশ করবে জাহান্নামে। ( শূরা- 7) আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কথা, আমাদের উঠা-বসা, চলা-ফেরা সবকিছুর ভালো-মন্দের থাকছে চারটি সাক্ষী। আমরা যেখানেই থাকি; আলোতে বা আঁধারে, জনসমাবেশে বা লোকচক্ষুর অন্তরালে, দিনে কিবা রাতে, সকালে কি সন্ধ্যায়, সব সময়ই আমরা চারটি সাক্ষীর আওতাভুক্ত। কোনো কথা বা কোনো কাজ যত গোপনেই করি না কেন, চারটি সাক্ষী থেকে আমরা তা গোপন করতে পারি না। তারপরও কীভাবে আমরা নাফরমানীর পথে পা বাড়াই! প্রথম সাক্ষী : যমীন প্রথম সাক্ষী হল এই যমীন; আমাদের পায়ের নিচের মাটি, পায়ের নিচের আশ্রয়। প্রতিটি মুহূর্তে আমরা যার উপর অবস্থান করছি, চলা-ফেরা করছি, আহার গ্রহণ করছি, নিদ্রা যাচ্ছি। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের দান করছেন আমাদের রিযিক; হাজার রকমের ফল-ফসল, যা খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করছি। প্রতিটি মুহূর্তে আমরা যার মুখাপেক্ষী। যার গর্ভ হবে আমাদের শেষ ঠিকানা। এই যমীন আল্লাহ তাআলার অনেক বড় একটি নিআমত। কিন্তু...! কিন্তু কখনো আমরা ভুলে যাই এই নিআমতের কথা, এই নিআমতের যিনি মালিক তাঁর কথা। আমরা লিপ্ত হয়ে পড়ি নাফরমানিতে, এই যমীনের পৃষ্ঠে, যমীনের রবের নাফরমানিতে। যমীনের সহ্য হয় না। কিন্তু তার রবের হুকুমে নীরবে সে বহন করে চলে আমার মত পাপীকে। আমাকে সে গিলে ফেলে না। আল্লাহ নাফরমান বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন, أَأَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاء أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ. অনুবাদ: তোমরা কি আসমানওয়ালার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, তিনি তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেবেন না, যখন তা হঠাৎ থরথর কাঁপতে থাকবে? (সূরা মুল্ক ১৬) হাঁ, কোনো মানুষ জানে না আমার পাপের কথা। যমীন গিলে ফেলে না আমাকে। তবে...! তবে সে সাক্ষী হয়ে থাকে আমার নাফরমানির। তার সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে আমি উদাসীন, কিন্তু সে উদাসীন নয়। সে সব বলে দিবে, তার রব যেদিন তাকে বলার অনুমতি দিবেন। হে আমার রব, আমি সাক্ষী। তোমার এই বান্দা তোমার হাজারো নিআমত ভোগ করে, আমার পৃষ্ঠে অবস্থান করে, অমুক পাপ করেছিল, অমুক দিন করেছিল, অমুক সময় করেছিল। আমি তার সাক্ষী হে আল্লাহ!  যমীনের এই সাক্ষী হওয়ার বর্ণনা আলকুরআনুল কারীমে ও হাদীস শরীফে এভাবে এসেছে - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন, " يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا " অনুবাদ: সেদিন যমীন তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে। (সূরা যিলযাল ৪) তারপর বললেন, তোমরা কি জানো, ‘যমীনের সংবাদ’ কী? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।  তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তার সংবাদ’ হল, প্রতিটি বান্দা-বান্দি যমীনে যা করেছে সে তার সাক্ষী দিবে; অমুক বান্দা অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক দিনে করেছে। এটাই হল, ‘তার সংবাদ’। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪২৯ দ্বিতীয়  সাক্ষী : ফিরিশতা (ও তাদের লিপিবদ্ধ আমলনামা) দ্বিতীয় সাক্ষী হল ফিরিশতা। আমাদের অমলনামা লিপিবদ্ধের কাজে নিয়োজিত ফিরিশতা । আমরা যা ভাল কাজ করি তাঁরা তা লিপিবদ্ধ করেন। আমরা যা মন্দ কাজ করি তাঁরা তাও লিপিবদ্ধ করেন। তাঁরা তৈরি করেন এমন এক আমলনামা যা কোনো ছোট আমলও ছাড়ে না, কোনো বড় আমলও বাদ দেয় না। যে আমলনামা কিয়ামতের দিন আমাদের সামনে মেলে ধরা হবে। আমরা সেদিন স্বচক্ষে তা দেখতে পাব। তাঁরা সম্মানিত ফিরিশতা, তাঁরা আমাদের অমলনামা লিপিবদ্ধ করছেন। সকালে সন্ধ্যায়, দিনে রাতে, সদা সর্বদা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ، كِرَامًا كَاتِبِينَ، يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ، إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ، وَإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ. অনুবাদ: অবশ্যই তোমাদের জন্য কিছু তত্বাবধায়ক (ফিরিশতা) নিযুক্ত আছে। সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ। তোমরা যা কর তারা সব জানে। পূণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বচ্ছনেদ্য; এবং পাপাচারীরা তো থাকবে জাহান্নামে। (সূরা ইনফিতার ১০-১৪) আমরা যা প্রকাশ্যে করি যা গোপনে করি, দিনের আলোয় করি বা রাতের অন্ধকারে করি, সব আল্লাহ জানেন। সাথে সাথে তাঁর ফিরিশতাগণও তা লিপিবদ্ধ করছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ অনুবাদ: তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন কথাবার্তা ও তাদের কানাকানি শুনতে পায় না? অবশ্যই শুনতে পাই। তাছাড়া আমার ফিরিশতাগণ তাদের কাছেই রয়েছে। তারা (সবকিছু) লিপিবদ্ধ করছে।’ -(সূরা যুখরুফ: ৮০) এভাবে পাপের বোঝা ভারি হবে বা পুণ্যের। তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমার আমলনামা বের করে দিয়ে দিবেন আমার হতে। ইরশাদ হচ্ছে, وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا. (তরজমা)  ‘‘আর কিয়ামতের দিন আমি (তার আমলনামা) লিপিবদ্ধরূপে তার সামনে বের করে দেব, যা সে উন্মুক্ত পাবে।(সূরা বনী ইসরাঈল- ১৩) বিষয় কি এখানেই শেষ, বরং আল্লাহ আমাকেই পড়তে বলবেন আমার আমলনামা। اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا. অনুবাদ:(বলা হবে) তুমি নিজ আমলনামা পড়। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাব নেয়ার জন্য যথেষ্ট।(সূরা বনী ইসরাঈল -১৪) কারণ সে আমলনামা হবে এক আশ্চর্য আমলনামা। আমলের ছোট বড় কিছুই ছাড়বে না, সব যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে সেখানে। তা দেখে মানুষ সেদিন বলবে,  وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا.  অনুবাদ:   ...এটা কেমন কিতাব (আমলনামা) তা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয় না; বরং সবই পঙ্খানুপুঙ্খু হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি যুলুম করেন না। (সূরা কাহ্ফ ৪৯) সেদিন আমলনামা দেখে কাফের আফসোস করে বলবে- يَوْمَ يَنظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا. অনুবাদ: সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফের বলবে, হায়, আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবা- ৪০) আমলনামা হাতে পেয়ে কেউ থাকবে মহানন্দে, আবার কারো আক্ষেপের সীমা থাকবে না। আলকুরআনুল কারিমে বড় আবেদনময় ভাষায় চিত্রায়িত করা হয়েছে সে সময়ের অবস্থাটির। তারপরও কি আমি সতর্ক হব না?! ইরশাদ হচ্ছে- فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَؤُوا كِتَابِيَهْ.إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلاقٍ حِسَابِيَهْ.فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ.فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ.قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ.كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الأَيَّامِ الْخَالِيَةِ. (তরজমা) ‘অতপর যাকে আমলনামা দেওয়া হবে ডান হাতে, সে বলবে, এই যে আমার আমলনামা, তোমরা পড়ে দেখ। আমি আগেই বিশ্বাস করেছিলাম, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং সে থাকবে সুখময় জীবনে। সেই সুউচ্চ জান্নাতে- যার ফল থাকবে ঝুঁকে (হাতের নাগালের মধ্যে)। (বলা হবে) তোমরা বিগত জীবনে যেসব কাজ করেছিলে, তার বিনিময়ে খাও ও পান কর স্বাচ্ছন্দ্যে। وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيَهْ.وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ. يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ.مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَهْ هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ. خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ.ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ. আর যার আমলনামা দেওয়া হবে তার বাম হাতে; তো সে বলবে, আহা! আমাকে যদি আমলনামা দেওয়াই না হত! আর আমি জানতেই না পারতাম, আমার হিসাব কী? আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত! আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না! আমার থেকে আমার সব ক্ষমতাও লুপ্ত হয়ে গেল! (এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে হুকুম দেয়া হবে) ধর ওকে এবং ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর ওকে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। (সূরা আল-হাক্কাহ্ :১৯-৩১) তৃতীয় সাক্ষী : অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৃতীয় সাক্ষী হল আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আমার হাত, যা দ্বারা আমি ধরি। আমার এই পা, যা দ্বারা আমি চলি। আমার চোখ, যা দ্বারা আমি দেখি। কান, যা দ্বার আমি শুনি। এমনিভাবে আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। যা আমার উপর আল্লাহ্ প্রদত্ত অসংখ্য নিআমতের অন্যতম। এসকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার কাছে আল্লাহর আমানত। আমাকে এই আমানতের হেফাযত করতে হবে এবং এর খেয়ানতের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। ফলে তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।(সূরা ইয়াসীন ৬৫) শুধু কি তাই! আমার শরীরের চামড়াও সাক্ষী দিবে আমার বিরুদ্ধে, যদি আমি তা আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার করি। যে চামড়া আমার চেহারাকে সুন্দর করেছে তা যদি আমি আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যাবহার করি, হারাম ক্ষেত্রে রূপের প্রদর্শন করি, তাহলে তা আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। সে বলবে, দুনিয়াতে তুমি আমাকে আমার রবের নাফরমানিতে ব্যবহার করেছ। সেদিন আমি কিছু বলতে পারিনি। আজ আমার রব আমাকে বলার শক্তি দিয়েছেন। আমি আজ সব বলে দিব।  حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ অনুবাদ: অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।(সূরা হা-মীম আসসাজদাহ্ : ২০) তখন মানুষ নিজের শরীরের চামড়াকে বলবে, وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا. ‘তারা তাদের চামড়াকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরম্নদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন?’ সেগুলো  উত্তর দিবে- أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ. ‘আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দান করেছেন, যিনি বাকশক্তি দান করেছেন প্রতিটি জিনিসকে। (সূরা হা-মীম আসসাজদাহ্ : ২১) হাঁ, এখনই আমাকে ভাবতে হবে; আমার অবস্থা কেমন হবে। আল্লাহর দেয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কি আমি আল্লাহর আনুগত্যে ব্যবহার করছি না তাঁর নাফরমানিতে। তা কি কিয়ামতের ঐ কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর সামনে, সকল সৃষ্টিজীবের সামনে আমার পক্ষে সাক্ষী দিবে না বিপক্ষে! চতুর্থ সাক্ষী : আল্লাহ চতুর্থ সাক্ষী আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ্ই হলেন সবচেয়ে বড় সাক্ষী, প্রথম ও শেষ সাক্ষী, যদিও এখানে চতুর্থ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি হলেন সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, যিনি অন্তরের কথাও জানেন। যাঁর থেকে গোপন থাকে না আসমান যমীনের কোনোকিছু। যিনি ‘‘আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ্’’; যাঁর কাছে দৃশ্য অদৃশ্য সবই সমান। ইরশাদ হচ্ছে- أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ‘এটা কি তোমার রবের সম্পর্কে যথেষ্ট নয় যে, তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত? (সূরা হা-মীম আসসাজদাহ ৫৩) তিনি আমাকে দেখছেন, আমি যে অবস্থায়ই থাকি, যেখানেই থাকি। তাঁর কাছে আসমান যমীনের কোনো কিছুই গোপন নয়। إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ. ‘নিশ্চিত জেনে রাখ, আল্লাহর কাছে আসমান যমীনের কোনো কিছুই গোপন থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ৫) আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ও ত্রুটি হল, আল্লাহ মুরাকাবার বিষয়ে উদাসীনতা; ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ এই অনুভূতি দুর্বল হওয়া। ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ এই অনুভূতি সদা জাগরুক রাখা চাই। এই অনুভূতি যত প্রবল হবে গুনাহ থেকে বাঁচা তত সহজ হবে। বান্দা যতই গোপন অবস্থায় থাকুক, মানুষের দৃষ্টি থেকে যতই আড়ালে থাকুক, তার যদি এই অনুভূতি থাকে যে, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ তাহলে গুনাহ থেকে বাঁচা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বান্দা এ বিষয়েই থাকে উদাসীন। ফলে ডুবে থাকে পাপের সাগরে। আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন- أَلَمْ يَعْلَمْ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى. ‘সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন’। (সূরা আলাক : ১৪) আমাদের কেউ যদি বুঝে যে, অমুক আমার গুনাহের কথা জেনে গেছে বা আমাকে গুনাহের কাজে দেখে ফেলেছে, তাহলে তার লজ্জার আর শেষ থাকে না। লজ্জা করা উচিত তো আল্লাহকে! সুতরাং হে বান্দা! আল্লাহর বিষয়ে সবচেয়ে উদাসীন থেকো না। স্মরণ কর, আল্লাহ এই গুণবাচক নামগুলো। তিনি ‘আলীম’ সর্বজ্ঞ; যিনি অন্তরের কল্পনাও জানেন। তিনি ‘সামী’ সর্বশ্রোতা; যিনি পিঁপড়ার পদধ্বনিও শুনতে পান। তিনি ‘বাসীর’ সর্বদ্রষ্টা। তিনি ‘খাবীর’ যিনি সবকিছুর খবর রাখেন। তিনি ‘মুহীত’ সবকিছু তাঁর আয়ত্বাধীন, কোনো কিছু তাঁর পরিধির বাইরে নয়। আর এসবকিছুই বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আল্লাহ আমাকে সর্বদা দেখছেন। সুতরাং স্মরণ রাখি, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। হারাম বস্তুর দিকে তাকিয়ে সুখ অনুভব করছি? একটু ভাবি, যিনি আমাকে এই চোখ দান করেছেন, যিনি আমার কাছে এই চোখ আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তিনি কি আমাকে দেখছেন না? নির্জনে কোনো বেগানা নারীর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছি, অথবা মিছে সুখের ফাঁদে ফোনে কাটিয়ে দিচ্ছি সারারাত। একটু স্মরণ করি, কেউ দেখছে না, আল্লাহ্ও কি দেখছেন না? সুতরাং হে বন্ধু! কোনো পাপের পথে পা বাড়াবার আগে একটু ভাবি, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

أحدث أقدم