তিনটি পরিভাষা ( الحافظ – الحجة – الحاكم ) ও তার বাস্তব অবস্থা।
মুফতি রেজাউল করিম।
মোল্লা
আলী আল কারী রহ.( জন্ম-
930 ওফাত,1014) شرح شرح نخبة কিতাবে পরিভাষাগুলোর নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন,
الحافظ: هو من احاط علمه بمأة الف حديث.
অর্থাৎ ‘হাফিয’ বলা
হয়, যার এক লাখ হাদীস মুখস্হ থাকে।
الحجة: هو من احاط
علمه بثلاث مأة الف حديث.
অর্থাৎ ‘হুজ্জত’ বলা
হয়, যার তিন লাখ হাদীস মুখস্হ থাকে।
الحاكم: وهو الذي
احاط علمه بجميع الاحاديث متنا واسنادا وجرحا وتعديلا و تاريخا.
অর্থাৎ ‘হাকিম’ বলা হয়, যার সমস্হ হাদীস সনদ, মতন,জরাহ, তাদীল ইতিহাসসহ মুখস্হ থাকে।
পরবর্তীতে শায়খ আব্দুল্লাহ টুংকী রহ. সহ অনেক
ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী আল কারী রহ. এর অনুসরণে
উল্লিখিত পরিভাষাসমূহের পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকভাকে প্রচার-প্রসার করেছেন।
তবে
বাস্তব কথা হলো,মোল্লা
আলী আল কারী রহ.সহ
অনেকের কলম দিয়ে উল্লিখিত পরিভাষাসমূহের যে ব্যাখ্যা বের হয়েছে তা ভুল ও অবাস্তব।
কারণ, এ পরিভাষাগুলো অনেক
পূর্ব হতে প্রচলিত। কিন্তু মোল্লা আলী আল কারী রহ.এর
পূর্বে কোনো আলিম থেকে পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়নি।
( الحافظ )
হাফিয
ইবনে হাজার আসকালানী রহ.( জন্ম,
773 ওফাত,852) তার বিভিন্ন কিতাবে الحافظ এর অর্থ ও মর্ম আলোচনা
করেছেন।
তিনি
نزهة الالباب في
الالقابকিতাবের প্রথম খন্ডের
188 পৃষ্ঠায় الحافظ এর হাকিকত ও বাস্তবতা সম্পর্কে
বলেন,
لقب من مهر في معرفة الحديث.
অর্থাৎ ‘হাফিয’ হলো, হাদীস শাস্ত্রের ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তির উপাধি।
ইবনে
হাজার আসকালানী রহ. النكت علي كتاب ابن الصلاح গ্রন্থে বলেন,
الحافظ في عرف
المحدثين شروط اذا اجتمعت في الراوي سموه حافظا, وهو الشهرة باالطلب والاخذ من
افواه الرجال لا من الصحف, والمعرفة بطبقات الرواة ومراتبهم, والمعرفة باالتجريح
والتعديل , وتمييز الصحيح من السقيم , حتي يكون ما استحضره من ذلك اكثر مما لا
يستحضره مع استجضار الكثير من المتون , فهذه الشروط اذا اجتمعت في الراوي سموه
حافظا.
অর্থাৎ মুহাদ্দিসিনে কেরামের
পরিভাষায় হাফেয এর জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। যে রাবীর মধ্যে ওই শর্তগুলো থাকে তাকে মুহাদ্দিসগণ হাফেয বলেন। সে শর্ত হলো, রাবী হাদিস
অর্জন মুহাদ্দিস গণের সরাসরি মুখ থেকে তা গ্রহণে প্রশিদ্ধ ও সুবিদিত হবেন। কিতাবাদী
হতে তিনি হাদিস সংগ্রহ করবেন না। রাবীদের তবকা ও তাদের স্তর
জানবেন। তাজরীহ ও তাদীল সম্পর্কে
অবহিত হবেন। সহীহ হাদীস কে দূর্বল হাদীস থেকে পৃথক করতে পারবেন। এমনকি এসব বিষয় তার অধিক হারে মুখস্ত থাকবে। হাদীসের মতনও অধিক মুখস্ত থাকবে। এ সমস্থ শর্ত
যে রাবীর মধ্যে বিদ্যমান থাকে মুহাদ্দিসেনে কেরাম তাকে হাফিয বলে অভহিত করেন।
এ প্রসঙ্গে
আল্লামা আলী ইবনে আদম ইবনে মুসা
ذخيرة العقبي في شرح المجتبي গ্রন্থে
বলেন,
الحافظ من الالقاب
التي يطلقها المحدثون علي العلماء بالحديث.
অর্থাৎ মুহাদ্দিসীনে কেরাম
হাদীস শাস্ত্রের ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তির حافظ শব্দের প্রয়োগ করেন।
হাফেয
আবুল হাজ্জাজ মিজ্জি রহ.( জন্ম,654
ওফাত,742) ‘হাফিয’ এর সজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
اقل ما يكون ان يكون
الرجال الذين يعرفهم ويعرف تراجمهم واحوالهم وبلدانهم اكثر من الذين لا يعرفهم .
অর্থাৎ
حافظ শব্দের
প্রয়োগ ঐ ব্যক্তির উপর
হয়, কমপক্ষে যিনি
রিজালদের সম্পর্কে জানেন, তাদের জীবনী,অবস্থা ও
তাদের শহর সম্পর্কে অবগত থাকেন। এবং তার জানা রিজালদের সংখ্যা না জানা রিজালদের তুলনায় বেশী হয়।
এ প্রসঙ্গে কেবল
ইবনে হাজার নয়, শায়খ আব্দুল
ওয়াহহাব শারানী রহ.)জন্ম,889ওফাত,973) لواقح الانوارفي
طبقاتالاخيار
গ্রন্থে , সাইয়েদ আব্দুল হাই কাত্তানী রহ.,(জন্ম,1302
ওফাত,1382) فهرس الفهارس গ্রন্থে শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.(জন্ম,1336
ওফাত,1417) امراء المومنين في
الحديثগ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা
করেছেন।
الحافظ শব্দটির অর্থ মোল্লা আলী কারী রহ. যা উল্লেখ
করেছেন এবং তার যে সজ্ঞাটি ব্যাপক প্রচার প্রসার পেয়েছে তা সঠিক না হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, যুগে যুগে
যারা হাফিযে হাদীস লকবে ভূষিত হয়েছেন হাফিয যাহাবী রহ.(জন্ম,673
ওফাত,748) تذكرة الحفاظ নামক
গ্রন্থে এবং হাফেয সুয়ূতী রহ. ( জন্ম,849 ওফাত,911) طبقات الحفاظ নামক গ্রন্থে তাদের জীবনী সংকলন করেছেন। তারা এসব গ্রন্থে এমন অনেক হাফিযে হাদীসের নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এক লাখ তো দূরের কথা দশ হাজারও নয়। অনেক নাম তো এমন আছে যাদের রেওয়ায়েতের সংখ্যা উল্লিখিত হয়নি। আবার যাদের উল্লেখ হয়েছে তাদের রেওয়ায়েত সংখ্যা দশ হাজারেরও অনেক কম। সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত
হয় যে, হাফিয হওয়ার
জন্য এক লাখ হাদীস মুখস্ত থাকা জরুরী নয়। যদি তাই হতো তাহলে হুফ্ফাযদের কাতারে তারা শামিল হতে পারতেন না। বরং আসল কথা হলো, হাফিযের সম্পর্ক
সুনির্দিষ্ট পরিমাণ হাদীস মুখস্ত করার সাথে নয়। বরং হাফিয হলো, লকব বিশেষ
কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে কোন রাবী বা মুহাদ্দিস ঐ লকবে ভূষিত
হন।
(الحجة)
আা্ততকআর الحجة শব্দটিও মূলতও মুহাদ্দিস গণের একক কোনো লকব নয়। বরং তা অন্য অর্থেও
ব্যবহ্রত হয়। এ সম্পর্কে الوجيز في معرفة انواع علم الحديث الشريف
আব্দুল মালেক দা.বা. বলেন,
واما
لفظ الحجة فكثيرا ما يستعمل في مجال التوثيق والتعديل فيكون بمعني الحجة في
الرواية اي الذي يحتج بروايته ويستعمل بكثرة ايضا كلقب من الالقاب فيطلق علي من
كان من ايمة الحديث حجة في التصحيح والتضعيفوالجرح والتعديل.
অর্থাৎ ‘হুজ্জত’ শব্দটি বেশীর ভাগ ব্যবহ্রত হয়, সমর্থন ও প্রত্যয়ন
এর স্থলে। সুতরাং الحجة في الرواية এর অর্থ হলো, ঐ ব্যক্তি
যার রেওয়ায়েত দ্বারা হুজ্জত তথা প্রমাণ
পেশ করা হয়।
الحجة শব্দটি আবার অন্যান্য লকবের মতো একটি লকব হিসেবেও বহুলভাবে
ব্যবহ্রত হয়। আর এটা লকব হয় ঐ ব্যাক্তির যিনি তাসহীহ- তাযয়ীফ
ও জারাহ তাদিলের ব্যাপারে হুজ্জত তথা প্রমাণ স্বরুপ হন।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা আলী ইবনে আদম ইবনে মুসা স্বীয় ذخيرة العقبي في شرح
المجتبي গ্রন্থে বলেন,
الحجة العالم الذي يجعل حجة وبرهانا في الحديث
لطلاب الحديث.
অর্থাৎ الحجة বলা হয় ঐ আলেমকে, যিনি
হাদীসের শিক্ষার্থীদের জন্য দলীল প্রমাণ স্বরুপ হন।
(الحاكم)
আর الحاكم শব্দটি মুহাদ্দিস গণের কোনো লকব নয়; বরং তা
বিচারকার্য পরিচালনাকারীর উপাধি। এ সম্পর্কে ড, হাসান পাসা তার الالقاب الاسلامية গন্থে বলেন,
الحاكم
فاعل من الحكم بمعنني القضاء وهو من القاب القضاة.
অর্থাৎ
আর হাকিম হলেন তিনি , যিনি বিচার কার্য পরিচালনা করেন তথা বিচারক। হাকিম এটা বিচারকদের লকব।
এ সম্পর্কে আব্দুল মালেক দা.বা. বলেন, তার الوجيز في معرفة
انواع علم الحديث الشريف গন্থে
বলেন
বলেন-
واما
لفظ الحاكم فليس هو بلقب من القاب رتب المحديثين بل هو وصف لمن ولي القضاء.ولا دخل
له في حفظ الحديث وروايته.
অর্থাৎ হাকিম শব্দটি মুহাদ্দিসীনে কেরামের স্তরগত কোনো লকব নয়; বরং তা বিচারকের পদে আসীন ব্যক্তিবর্গের পদের নাম। এ নামের
সাথে
হাদীস
মুখস্ত
ও রেওয়ায়েতের
কোনো
সম্পর্ক
নেই।
অতএব , হাকিম এর যে মাশহুর সজ্ঞা দেওয়া হয় যে, যার সমস্ত হাদীস মুখস্থ সেই হাকিম- এটা সমপূর্ণ অবাস্তব এবং ভুল।
الله اعلم بالصواب واليه
المرجع والماب.
লিঙ্ক আসিতেছে...