আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে লেখা থাকে- “ মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম।”
কোনো দীনি কাজের উদ্দ্যেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবি কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয। এতে কোন সমস্যা নেই৷ এর বৈধতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন,
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই স্থানে দাড়িয়ে ফযরের নামায আদায় করতেন সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে উঠতেন না৷ যখন সূর্যদয় হত তখন উঠতেন৷ রাবি বলেন,সাহাবায়ে কেরাম তখন জাহেলি যুগের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন আর হাসতেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের সাথে মুচকি হাসতেন৷ ( শরহুন নববী আলা মুসলিম, 15/473)
ইমাম আহমাদ রহ হযরত জাবের রা থেকে বর্ণনা করেন, জাবের রা বলেন,
অর্থাৎ মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করা জায়েয নেই৷ এ ব্যাপারে সকলেই একমত৷ কেননা, দুনিয়াবি কথা বার্তা বলার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি৷ হ্যা, তবে দুনিয়াবি বৈধ কথা বলা জায়য আছে যদিও যিকিরে লিপ্ত থাকা উত্তম৷ ( রদ্দুল মুহতার- 2/436)
إذا دخل المصلي إلى المسجد وجلس يتحدث مع شخص آخر قبل بداية الصلاة، تقول له الملائكة: اسكت ياولي الله، وإذا واصل في الحديث تقول له الملائكة اسكت ياعبدالله وإذا واصل في الحديث تقول له اسكت يا عدو الله وإذا واصل في الحديث تقول له اسكت عليك لعنة الله .
অর্থাৎ যদি কোন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ার পূর্বে অন্য কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু ‘আপনি’ চুপ করুন। আবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বান্দা ‘তুমি’ চুপ কর। তৃতীয়বার কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর দুশমন‘তুই’ চুপ কর। আবার কথা বললে ফেরেস্তা বলে তুমি চুপ কর তোমার উপর অভিসম্পাত৷
অর্থাৎ কাযী ইয়ায ও ইমাম ইরাকি রহ. বলেছেন, এর কোনো ভিত্তি নেই৷
তবে মনে রাখতে হবে, মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া নাজায়েয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إذا رأيتم من يبيع أو يبتاع في المسجد فقولوا لا أربح الله تجارتك.
অর্থাৎ যখন তোমরা কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বল, তোমার বেচা-কেনা লাভজনক، না হোক। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৬)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, বলেন,
অর্থাৎ কাউকে যদি মসজিদে হারানো বস্ত্তর এলান করতে দেখ তাহলে বল, আল্লাহ তোমার হারানো বস্ত্ত ফিরিয়ে না দিন ৷ ( সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩০৫)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক কথা অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন।
আরো পড়ুন:জুময়ার খুতবা পাঠ করার সময় ডানে বামে চেহারা ঘুরিয়ে পাঠ করা আরো জানুন, মহিলাদের কবর যিয়ারত ও জুনুবী ব্যক্তির ভুলক্রমে আদায়কৃত নামাযের হুকুম কি?
মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম।”
কথাটি যারা লেখে বা লেখান তারা তাহকিক করা ব্যতিত কাজটি করে থাকেন। না আছে এ ব্যাপারে তাদের কোনো গবেষণা না আছে সত্য জানার কোনো আগ্রহ। এবিষয়ে তারা অনেক হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যার সাথে হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এ প্রবন্ধে বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পাঠক এর থেকে সঠিক একটি সমাধান পাবেন ইংশাঅাল্লা।কোনো দীনি কাজের উদ্দ্যেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবি কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয। এতে কোন সমস্যা নেই৷ এর বৈধতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقوم من مصلاه الذي صلى فيه الصبح حتى تطلع الشمس ، فإذا طلعت قام ، قال : وكانوا يتحدثون فيأخذون في أمر الجاهلية فيضحكون ويتبسم.
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই স্থানে দাড়িয়ে ফযরের নামায আদায় করতেন সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে উঠতেন না৷ যখন সূর্যদয় হত তখন উঠতেন৷ রাবি বলেন,সাহাবায়ে কেরাম তখন জাহেলি যুগের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন আর হাসতেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের সাথে মুচকি হাসতেন৷ ( শরহুন নববী আলা মুসলিম, 15/473)
ক্লিক করুন, আরো পরুন: ব্লগ কি? কীভাবে তৈরি করবেন? এ প্রসঙ্গে ইমাম নববী রহ. বলেন,
يجوز التحدث بالحديث المباح في المسجد وبأمور الدنيا وغيرها من المباحات وإن حصل فيه ضحك ونحوه ما دام مباحا.
অর্থাৎ মসজিদের মধ্য দুনিয়াবী বিষয় ও বৈধ কতা বার্তা এবং অন্যান্য হালাল কথা বার্তা বলা জায়েয যদিও তাতে হাসি আসুক না কেন? (আলমাজমু শরহুল মুহায্যাব, 2/177)ইমাম আহমাদ রহ হযরত জাবের রা থেকে বর্ণনা করেন, জাবের রা বলেন,
شهدت النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ أكثر من مائة مرة في المسجد وأصحابه يتذاكرون الشعر وأشياء من أمر الجاهلية، فربما يبتسم معهم،
অর্থাৎ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একশত বারেরও অধিক মসজিদে উপস্থিত হয়েছি তখন সাহাবীগন কবিতা আবৃতি ও জাহেলি যুগের বিভিন্ন ব্যাপারে আলোচনা করতেন৷ কখনো কখোনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে মুচকি হাসতেন৷ ( ইমাম শাওকানী রহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, নাইলুল আওতার, 2/166)ইবনু আবেদিন শামী রহ. বলেন,
(قَوْلُهُ بِأَنْ يَجْلِسَ لِأَجْلِهِ)
فَإِنَّهُ حِينَئِذٍ لَا يُبَاحُ بِالِاتِّفَاقِ لِأَنَّ الْمَسْجِدَ مَا بُنِيَ لِأُمُورِ الدُّنْيَا. وَفِي صَلَاةِ الْجَلَّابِي: الْكَلَامُ الْمُبَاحُ مِنْ حَدِيثِ الدُّنْيَا يَجُوزُ فِي الْمَسَاجِدِ وَإِنْ كَانَ الْأَوْلَى أَنْ يَشْتَغِلَ بِذَكَرِ اللَّهِ تَعَالَى، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها، فروع افضل المساجد، مطلب: فى الغرس فى المسجد-2/436
অর্থাৎ মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করা জায়েয নেই৷ এ ব্যাপারে সকলেই একমত৷ কেননা, দুনিয়াবি কথা বার্তা বলার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি৷ হ্যা, তবে দুনিয়াবি বৈধ কথা বলা জায়য আছে যদিও যিকিরে লিপ্ত থাকা উত্তম৷ ( রদ্দুল মুহতার- 2/436)
মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা প্রসঙ্গে যে হাদীসটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত তার কোনো ভিত্তি নেই৷
হাদিসটি এই,
إذا دخل المصلي إلى المسجد وجلس يتحدث مع شخص آخر قبل بداية الصلاة، تقول له الملائكة: اسكت ياولي الله، وإذا واصل في الحديث تقول له الملائكة اسكت ياعبدالله وإذا واصل في الحديث تقول له اسكت يا عدو الله وإذا واصل في الحديث تقول له اسكت عليك لعنة الله .
অর্থাৎ যদি কোন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ার পূর্বে অন্য কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু ‘আপনি’ চুপ করুন। আবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বান্দা ‘তুমি’ চুপ কর। তৃতীয়বার কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর দুশমন‘তুই’ চুপ কর। আবার কথা বললে ফেরেস্তা বলে তুমি চুপ কর তোমার উপর অভিসম্পাত৷
এ বিষয়ক আরেকটি জাল বর্ণনা হলো-
الكلام في المسجد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب.
অর্থাৎ ‘‘মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে।’’এ হাদীস সম্পর্কে শায়খ আতিয়্যা বলে,
جاء في كتاب “غذاء الألباب” للسفاريني قوله: وأما ما اشتُهِر على الألسنة من قولهم: إنَّ النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ قال: “الحديث في المسجد ـ وبعضهم يُزيد المُباح ـ يأكل الحسناتِ كما تأكل النَّار الحَطب” فهو كذب لا أصل له.
অর্থাৎ হাদীসটি মিথ্যা এর কোনো ভিত্তি নেই ৷কাযী ইয়ায ও ইমাম ইরাকি রহ.এর বক্তব্য
وذكره القاضي في موضوعاته، كما ذكر العراقي على الإحياء: أنه لا أصل له .অর্থাৎ কাযী ইয়ায ও ইমাম ইরাকি রহ. বলেছেন, এর কোনো ভিত্তি নেই৷
তবে মনে রাখতে হবে, মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া নাজায়েয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إذا رأيتم من يبيع أو يبتاع في المسجد فقولوا لا أربح الله تجارتك.
অর্থাৎ যখন তোমরা কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বল, তোমার বেচা-কেনা লাভজনক، না হোক। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৬)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, বলেন,
مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ : لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ ؛ فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا
অর্থাৎ কাউকে যদি মসজিদে হারানো বস্ত্তর এলান করতে দেখ তাহলে বল, আল্লাহ তোমার হারানো বস্ত্ত ফিরিয়ে না দিন ৷ ( সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩০৫)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক কথা অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন।
আরো পড়ুন:জুময়ার খুতবা পাঠ করার সময় ডানে বামে চেহারা ঘুরিয়ে পাঠ করা আরো জানুন, মহিলাদের কবর যিয়ারত ও জুনুবী ব্যক্তির ভুলক্রমে আদায়কৃত নামাযের হুকুম কি?