কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য টাকা নেয়া এবং লটারীর মাধ্যমে যে পুরুষ্কার দেয়া হয় তা না জায়েয ও হারাম।
১ম কারনঃ এখানে غرر তথা ধোঁকা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
"ধোঁকা" বলা হয়,যার পরিণাম জানা যায় না যে,তা পাওয়া যাবে কি না৷
এবং যার বাহ্যিক দিক মানুষকে উৎসাহী করলেও তার ভেতরগত দিক মানুষকে নিরুৎসাহী করে।
(মাবসুতে সারাখসী ১২/১৯৪ দারুল কুতুবিল আলামিয়্যা বৈরুত,লেবানন।
জামিউল উসুল ১/৫২৭।
আর হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,"রাসুল সাঃ ধোঁকার মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
(সহীহ মুসলীম ২/২।)
আর যেহেতু কুইজ প্রতিযোগিতায় ধোঁকা রয়েছে কেননা, কে বিজয়ী হবে তা জানা নেই৷ তাই তা নাজায়েয।
২য় কারনঃ এখানে যে বা যারাই অংশ গ্রহণ করবে,সবাই এ আশা নিয়েই অংশ গ্রহণ করে যে আমি পুরুষ্কার পাব।
তা থেকে বুঝা যায় যদি সে শুরুতেই একথা নিশ্চিত জানতে পারত যে আমি পুরুষ্কার পাব না তাহলে সে কখনই টাকা দিত না।
সুতরাং পুরুষ্কার না পাওয়ার সুরতে তার টাকা অন্যের জন্যে হালাল হবেনা।
আরো পড়ুন
বুখারী শরীফও ত্রুটি মুক্ত নয়৷
কেননা অন্যের মাল নিজের জন্যে হালাল হওয়ার জন্যে মালিকের সন্তুষ্টিকে আল্লাহ পাক শর্ত করেছেন,
আল্লাহ পাক বলেন" হে ঈমানদারগণ তোমরা অন্যায় ভাবে একে অপরের মাল ভক্ষণ করুনা, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে(ভক্ষণ করতে পারবে)। (সুরা -২৯)
সুতরাং একথা সুস্পষ্ট যে,পুরুষ্কার থেকে মাহরুম ব্যাক্তির টাকা অন্যের জন্যে বৈধ হবে না। তাই যে পুরুষ্কার পাবে সে বা কুইজ ব্যাবস্থাকারীগন তার টাকা খাওয়া বৈধ হবেনা।
৩য় কারনঃ صفقة في صفقة অর্থাৎ এক চুক্তির জন্যে অন্য চুক্তিকে শর্ত করা৷
যেমন এখানে,লটারীতে অংশ গ্রহণ করার জন্যে টাকা দিয়ে কুইজ পত্র ক্রয় করাকে শর্ত করা হয়েছে।
যা নাজায়েয ও হারাম কেননা রাসুল সাঃ তা থেকে নিষেধ করেছেন।
হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,"রাসুল সাঃ এক চুক্তির মাঝে অন্য চুক্তিকে শর্ত করা থেকে নিষেধ করেছেন।(মুসনাদে আহমদ,সহীহ হাদীস, হাদীস নং ৩৭৮৩)
৪র্থ কারনঃ এই প্রতিযোগিতায় সুদ রয়েছে, কেননা সুদ বলা হয়,ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে,বিনিময় ব্যতিত কোন কিছুর মালিক হওয়া।(হেদায়া ৩/৭৮ আশরাফিয়া)
আর এখানে যে পুরুষ্কার সে তা কোন প্রকার বিনিময় ছাড়াই পেল,তাই তা সুদ হওয়ার কারনে হারাম।
কেননা সুদের ব্যাপরে আল্লাহ পাক বলেন,"আল্লাহ পাক ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।
৫ম কারনঃ এখানে قمار তথা জুয়া রয়েছে,
কেননা জুয়া বলা হয় প্রত্যেক ঐ খেলাকে যেখানে বিজয়ী ব্যাক্তি পরাজিত ব্যাক্তির কোন কিছুর মালিক হয়।(মাজমুআয়ে কাওয়াইদুল ফিকহ পৃঃ৪৩৪ মির মুহাম্মদ কুতুখানা)
আরো পড়ুন
মহিলাদের কবর যিয়ারত ও জুনুবী ব্যক্তির ভুলক্রমে আদায়কৃত নামাযের হুকুম কি?
আর এখানে পুরুষ্কার প্রপ্ত ব্যাক্তি যে পুরুষ্কার পেল না তার উপর বিজয়ী হয়ে অপর ব্যাক্তিকে পরাজিত করে তার মালের মালিক হয়ে যায়,আর এটাই জুয়া।
৬ষ্ট কারনঃ এখানে অবৈধ লটারী রয়েছে।
আর আল্লাহ পাক জুয়া এবং লটারী সম্পর্কে বলেন" হে মুমিনগন,এই যে মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শর সমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়।
অত এব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।
(সুরা মায়েদা-৯০)
সুতরাং যেহেতু এখানে জুয়া এবং অবৈধ লটারী রয়েছে তাই কুইজ প্রতিযোগিতার ব্যাবস্থা করাও তাতে অংশ করা গ্রহন করা হারাম।