মানবসৃষ্ট জীবাণু অস্ত্র, ভাইরাস কিংবা ছোঁয়াচে রোগের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয়না। পানাহ চাওয়া ও নিয়ম মানা বান্দার কাজ। ফায়সালা আল্লাহর।
সতর্কতা ১ : সবাই হাত ধুতে বলছেন। কারণ হাতের স্পর্শেই এ ভাইরাস ছড়ায় বেশি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার কাপড়, মাথার চুল, পায়ের জুতা যেগুলি আমরা বাইরে থেকে এসে ধুই না, কিংবা বদলাই না এগুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বাহির থেকে এসে যদি গোসল করেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।
সতর্কতা ২ : মনে রাখবেন করোনাভাইরাসের কারনে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী খুব সহজেই আক্রান্ত হয়। এটাকে প্রতিহত করার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। তাছাড়া রেগুলার ব্রিথিং এক্সারসাইস করুন যা আপনার ফুসফুসকে কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা ৩ : খাদ্যাভ্যাসকে একদমই বদলে ফেলুন। খাবারের তালিকা থেকে ফাস্টফুড, কোক, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার বাদ বাদ দিন। সিগারেট, জর্দা এড়িয়ে চলুন। কারন এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
সতর্কতা ৪ : প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন লেবু, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, পুদিনা পাতা, কমলা, গ্রিন টি ইত্যাদি। এতে আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যা করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।
সতর্কতা ৫ : নিজে ও নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। মুসলিমরা ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন। করোনা প্রতিরোধে মুসলিমরা যেহেতু দৈনিক ৫ বেলা ওজু করতে হয় তাই পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার বেনেফিটও বেশি পাবেন।সম্ভব হলে সারাক্ষণ ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন। অন্যান্য ধর্মের মানুষরা তাদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী প্রার্থনা করুন । নিজেদের পাপ থেকে অনুতাপ অনুশোচনা ও প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুন। সবাই প্রকৃত ধর্মের আশ্রয় নিন। কারণ এ বিপদ শুধু আমার বা আপনার নয়। এ বিপদ পুরো জাতির, পুরো পৃথিবীর।
আরো পড়ুন
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুফতি রেজাউল করিমের পরামর্শ
সতর্কতা ৬ : সিঁড়ির রেলিং বিশেষ করে লিফট এর ভেতরের রেলিংয়ে হাত দিয়ে ধরা বা হেলান দেয়ার অভ্যাস বন্ধ করুন। লিফটের ভিড় এড়িয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। বাইরের কোনো কিছুর হাতল যেমন গাড়ির ও দরজার হাতল ইত্যাদি ধরার আগে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করুন। বাসাবাড়ি, লিফট, সিঁড়ি পরিষ্কার রাখুন। প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিন ফেলে দিন। তবে যে কাজটাই করেন না কেন অবশ্যই
জীবানুনাশক ব্যবহার করুন।
সতর্কতা ৭ : রাস্তার পাশের খাবার বিশেষ করে চা, সিংগারা, ভেলপুরি, ফুচকা, চটপটি ও নানান স্ট্রিটফুড আপাতত এড়িয়ে চলুন। ট্রাস্ট মি, অস্বাস্থ্যকর স্ট্রিটফুড খাওয়ার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ভয়াবহতা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন। বাসায় তো নিয়ে আসবেনই না।
সতর্কতা ৮ : বাইরে যদি একান্তই চা পান করতে হয়ে তাহলে খেয়াল করুন চাযের কাপ ভালো করে গরম পানিতে ধোয়া হয়েছে কি না। চায়ের সাথে বিস্কিট, কেক কিংবা পলিথিনে ভরে রাখা কোনোকিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন এগুলোতে সবাই হাত দেয়। ফলে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।সম্ভব হলে বাসার বাইরে কিছু খাবেন না।প্রয়োজনে রোজা রাখুন।
সতর্কতা ৯ : বাইরে থেকে এসে কাপড় না বদলিয়ে সোফা কিংবা বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। চেষ্টা করুন বাইরের জুতা আর ভেতরের জুতা আলাদা আলাদা রাখতে। চেষ্টা করুন বাইরের জুতা বাড়ির বা বাসার দরজার বাইরেই রাখার।
সতর্কতা ১০ : মাস্ক এর মতো বাজার থেকে স্যানিটাইজারও মার্কেট আউট হয়ে যেতে পারে এই ভেবে মাস্ক বা স্যানিটাইজার কোনোভাবেই মজুদ করার চেষ্টা করবেন না। হাত ও ব্যবহার্য জিনিস পরিস্কার রাখুন।সতর্কতা ১১ : মোবাইল ফোনে নাকি টয়লেট থেকেও বেশি জীবাণু থাকে। তাই সেইফটি রক্ষার্থে আপনার ফোন ও নিত্য প্রয়োজনীয় গেজেট বা ইলেক্ট্রনিক্স এন্টিসেপ্টিক লিকুইড দিয়ে মুছে ফেলুন। এটা প্রতিদিনই করার চেষ্টা করুন।
সতর্কতা ১২ : বাইরে বের হলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ বিশেষ জায়গা যেমন বাজার, স্কুল, লোকসমাগম হয় এমন আনহাইজেনিক কোন জায়গায় এই গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। পরবর্তীতে বাসায় এসে তা নিরাপদ ও আবৃত স্থানে ফেলে দিন।
সতর্কতা ১৩ : ছেলেরা এই গরমে গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টুপি,রুমাল বা ক্যাপ ব্যবহার করেন। এটা চুলকে আবৃত করার জন্য দারুন একটি উপায় হতে পারে। বোরকা,নিকাব ছাড়াও মেয়েরা স্কার্ফ বা হিজাব পরেন। তবে বাসায় এসে অবশ্যই এগুলো আলাদা খোলামেলা ও রোদেলা স্থানে রাখুন বা ধূয়ে ফেলুন।
সতর্কতা ১৪ : বাহির থেকে আসার পরই যে শুধু হাত ধোবেন এমনটা নয়। পাশাপাশি টাকা গোনা, মানিব্যাগ ধরা, বাইরের খবরের কাগজ পড়া, কোনো পার্সেল বা ফুড ডেলিভারী আসলে ধরার পর সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতা ১৫ : বাসার নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি, লোশন, ক্রিম, টুথপেস্ট, তেল, ব্যথার ক্রিম ইত্যাদি চেষ্টা করুন পারসোনালি ব্যবহার করতে।
সতর্কতা ১৬ : অযথাই অমুক মিডিয়া, তমুক ফ্রেন্ড, এই নিউজ পেজ, সেই পাব্লিক ফিগার ইত্যাদির দেয়া পোস্ট বা কোনো খবর তথ্য যাচাই না করে শেয়ার করে গণমাধ্যমে আতঙ্ক তৈরি করবেন না। চেষ্টা করুন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো বিশ্বস্ত মিডিয়া থেকে
তথ্য সংগ্রহ করার।
সতর্কতা ১৭ : সরকার, মিডিয়া, বিধর্মীরা খারাপ, ওরা মুসলমানদেরকে অত্যাচার করেছে তাই এ গজব- এগুলো বলার চেয়ে বরং নিজের ঈমানী অনুশীলন ও নেক আমল বাড়িয়ে দিন। দোয়া,দুরূদ,জিকির, তিলাওয়াত, নফল নামাজ,রোজা,ওজু,পবিত্রতা, দান,সদকা,মানবসেবা, পরোপকার, আত্মীয় পরিজন প্রতিবেশী ও অন্য সব ভাইয়ের হক আদায় করতে থাকুন। নিজের ওপর অন্যদের প্রাধান্য দিন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকুন।
মনে রাখবেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন আসে তখন সবার জন্যই বিপদ বয়ে আনে।
আমি বেঁচে থাকলেই হলো এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।মৃত্যু লেখা থাকলে তা হবেই। বিশ্বাসীদের জন্যই নির্ধারিত হবে শাহাদাৎ। সংক্রমণ বা ভাইরাসের নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নাই। তকদীর তাকে পরিচালিত করে। অতএব যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে এবং সতর্কতা অবলম্বন করে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সর্বাবস্থায় তার নিকটে পানাহ চাইতে হবে। মৃত্যু হলে তওবা ও ঈমানী মৃত্যু কামনা করতে হবে। আল্লাহ খুশী থাকলে যে কোনো সময়ের মৃত্যুই আনন্দের।
নিজের জায়গা থেকে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কিভাবে আপনার পাশের মানুষদেরও এ বিপদ থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য আন্তরিক হোন।সুন্নাহভিত্তিক সমস্ত দোয়া ও আমল নিজে চর্চা করুন অন্যদের শিখতে সাহায্য করুন।
সতর্কতা ১৮ : স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে বলে এখন যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। তাই বলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বাইরে বেড়ানো এগুলো কোনোভাবেই করবেন না। বাসায় থাকুন, বাসা বাড়ির কাজে মা-বোনদের সাহায্য করুন। সতর্কতা বজায় রাখুন।
সতর্কতা ১৯ : পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করুন। পারতপক্ষে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলুন। মনে রাখুন আপনি যে-কোনো সময় যে-কারো থেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। সে মোতাবেক নিজের চোখ-কান খোলা রাখুন।
সতর্কতা ২০ : যারা ফ্রিল্যান্সার কিংবা রাত জাগার অভ্যাস আছে অথবা কোন কারণ ছাড়াই রাত জাগার বাতিক আছে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি সে তত বেশি ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে পারবে।
আরো পড়ুন
স্ত্রী সহবাসের পর তৎক্ষণাৎ গোসল এবং কিছু ভুল ধারণা
সতর্কতা ২১ : মনে রাখবেন আমাদের এ দেশটি খুবই ছোট্ট। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের বিশাল জনসংখ্যা যদি একটা প্রাকৃতিক মহামারীতে আক্রান্ত হয় তাহলে এটাকে মোকাবেলা করা অত্যন্ত দূরূহ হয়ে পড়বে। তাই সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিন। নিজের মধ্যে কোনো শারীরিক পরিবর্তন দেখার সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
★করোনাভাইরাসে যতগুলো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাই মনোবল হারাবেন না। ধৈর্য ধরুন। একটা বিষয় খেয়াল করুন যারা মারা গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক ৬০ বা তদুর্ধ বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ততটা
শক্তিশালী ছিল না দীর্ঘ মেয়াদি রোগ যেমন ফুসফুসের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, অন্য ক্রোনিক রোগ ছিলো, এ ধরণের মানুষ বেশি মৃত্যু বরণ করেছেন।
★তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভ্যাস গড়ে তুলুন। হেলদি ফুড ও হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার মাধ্যমে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করুন। তাহলে যে কোনো ভাইরাসকেও আপনি প্রতিরোধ ও পরাস্ত করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
★যত্রতত্র ভীড় করবেন না। ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন।।
জ্বর,সর্দি কাশির সাথে শ্বাষকস্ট থাকলে হাসপাতালে অবশ্যই যাবেন।
হাঁচি কাশির সময় মুখে রুমাল চেপে রাখবেন।
ছোট খাটো অসুস্থতায় অযথা হাসপাতালে যেয়ে ভীড়ের মধ্যে নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবেন না।
আরো পড়ুন
তথ্যসূত্র সি ডি সি
সম্পাদনায়
পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শরয়ী সম্পাদনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী
মহাপরিচালক, ঢাকা সেন্টার ফর দাওয়াহ এন্ড কালচার
সতর্কতা ১ : সবাই হাত ধুতে বলছেন। কারণ হাতের স্পর্শেই এ ভাইরাস ছড়ায় বেশি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার কাপড়, মাথার চুল, পায়ের জুতা যেগুলি আমরা বাইরে থেকে এসে ধুই না, কিংবা বদলাই না এগুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বাহির থেকে এসে যদি গোসল করেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।
সতর্কতা ২ : মনে রাখবেন করোনাভাইরাসের কারনে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী খুব সহজেই আক্রান্ত হয়। এটাকে প্রতিহত করার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। তাছাড়া রেগুলার ব্রিথিং এক্সারসাইস করুন যা আপনার ফুসফুসকে কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা ৩ : খাদ্যাভ্যাসকে একদমই বদলে ফেলুন। খাবারের তালিকা থেকে ফাস্টফুড, কোক, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার বাদ বাদ দিন। সিগারেট, জর্দা এড়িয়ে চলুন। কারন এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
সতর্কতা ৪ : প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন লেবু, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, পুদিনা পাতা, কমলা, গ্রিন টি ইত্যাদি। এতে আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যা করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।
সতর্কতা ৫ : নিজে ও নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। মুসলিমরা ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন। করোনা প্রতিরোধে মুসলিমরা যেহেতু দৈনিক ৫ বেলা ওজু করতে হয় তাই পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার বেনেফিটও বেশি পাবেন।সম্ভব হলে সারাক্ষণ ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন। অন্যান্য ধর্মের মানুষরা তাদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী প্রার্থনা করুন । নিজেদের পাপ থেকে অনুতাপ অনুশোচনা ও প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুন। সবাই প্রকৃত ধর্মের আশ্রয় নিন। কারণ এ বিপদ শুধু আমার বা আপনার নয়। এ বিপদ পুরো জাতির, পুরো পৃথিবীর।
আরো পড়ুন
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুফতি রেজাউল করিমের পরামর্শ
সতর্কতা ৬ : সিঁড়ির রেলিং বিশেষ করে লিফট এর ভেতরের রেলিংয়ে হাত দিয়ে ধরা বা হেলান দেয়ার অভ্যাস বন্ধ করুন। লিফটের ভিড় এড়িয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। বাইরের কোনো কিছুর হাতল যেমন গাড়ির ও দরজার হাতল ইত্যাদি ধরার আগে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করুন। বাসাবাড়ি, লিফট, সিঁড়ি পরিষ্কার রাখুন। প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিন ফেলে দিন। তবে যে কাজটাই করেন না কেন অবশ্যই
জীবানুনাশক ব্যবহার করুন।
সতর্কতা ৭ : রাস্তার পাশের খাবার বিশেষ করে চা, সিংগারা, ভেলপুরি, ফুচকা, চটপটি ও নানান স্ট্রিটফুড আপাতত এড়িয়ে চলুন। ট্রাস্ট মি, অস্বাস্থ্যকর স্ট্রিটফুড খাওয়ার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ভয়াবহতা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন। বাসায় তো নিয়ে আসবেনই না।
সতর্কতা ৮ : বাইরে যদি একান্তই চা পান করতে হয়ে তাহলে খেয়াল করুন চাযের কাপ ভালো করে গরম পানিতে ধোয়া হয়েছে কি না। চায়ের সাথে বিস্কিট, কেক কিংবা পলিথিনে ভরে রাখা কোনোকিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন এগুলোতে সবাই হাত দেয়। ফলে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।সম্ভব হলে বাসার বাইরে কিছু খাবেন না।প্রয়োজনে রোজা রাখুন।
সতর্কতা ৯ : বাইরে থেকে এসে কাপড় না বদলিয়ে সোফা কিংবা বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। চেষ্টা করুন বাইরের জুতা আর ভেতরের জুতা আলাদা আলাদা রাখতে। চেষ্টা করুন বাইরের জুতা বাড়ির বা বাসার দরজার বাইরেই রাখার।
সতর্কতা ১০ : মাস্ক এর মতো বাজার থেকে স্যানিটাইজারও মার্কেট আউট হয়ে যেতে পারে এই ভেবে মাস্ক বা স্যানিটাইজার কোনোভাবেই মজুদ করার চেষ্টা করবেন না। হাত ও ব্যবহার্য জিনিস পরিস্কার রাখুন।সতর্কতা ১১ : মোবাইল ফোনে নাকি টয়লেট থেকেও বেশি জীবাণু থাকে। তাই সেইফটি রক্ষার্থে আপনার ফোন ও নিত্য প্রয়োজনীয় গেজেট বা ইলেক্ট্রনিক্স এন্টিসেপ্টিক লিকুইড দিয়ে মুছে ফেলুন। এটা প্রতিদিনই করার চেষ্টা করুন।
সতর্কতা ১২ : বাইরে বের হলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ বিশেষ জায়গা যেমন বাজার, স্কুল, লোকসমাগম হয় এমন আনহাইজেনিক কোন জায়গায় এই গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। পরবর্তীতে বাসায় এসে তা নিরাপদ ও আবৃত স্থানে ফেলে দিন।
সতর্কতা ১৩ : ছেলেরা এই গরমে গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টুপি,রুমাল বা ক্যাপ ব্যবহার করেন। এটা চুলকে আবৃত করার জন্য দারুন একটি উপায় হতে পারে। বোরকা,নিকাব ছাড়াও মেয়েরা স্কার্ফ বা হিজাব পরেন। তবে বাসায় এসে অবশ্যই এগুলো আলাদা খোলামেলা ও রোদেলা স্থানে রাখুন বা ধূয়ে ফেলুন।
সতর্কতা ১৪ : বাহির থেকে আসার পরই যে শুধু হাত ধোবেন এমনটা নয়। পাশাপাশি টাকা গোনা, মানিব্যাগ ধরা, বাইরের খবরের কাগজ পড়া, কোনো পার্সেল বা ফুড ডেলিভারী আসলে ধরার পর সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতা ১৫ : বাসার নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি, লোশন, ক্রিম, টুথপেস্ট, তেল, ব্যথার ক্রিম ইত্যাদি চেষ্টা করুন পারসোনালি ব্যবহার করতে।
সতর্কতা ১৬ : অযথাই অমুক মিডিয়া, তমুক ফ্রেন্ড, এই নিউজ পেজ, সেই পাব্লিক ফিগার ইত্যাদির দেয়া পোস্ট বা কোনো খবর তথ্য যাচাই না করে শেয়ার করে গণমাধ্যমে আতঙ্ক তৈরি করবেন না। চেষ্টা করুন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো বিশ্বস্ত মিডিয়া থেকে
তথ্য সংগ্রহ করার।
সতর্কতা ১৭ : সরকার, মিডিয়া, বিধর্মীরা খারাপ, ওরা মুসলমানদেরকে অত্যাচার করেছে তাই এ গজব- এগুলো বলার চেয়ে বরং নিজের ঈমানী অনুশীলন ও নেক আমল বাড়িয়ে দিন। দোয়া,দুরূদ,জিকির, তিলাওয়াত, নফল নামাজ,রোজা,ওজু,পবিত্রতা, দান,সদকা,মানবসেবা, পরোপকার, আত্মীয় পরিজন প্রতিবেশী ও অন্য সব ভাইয়ের হক আদায় করতে থাকুন। নিজের ওপর অন্যদের প্রাধান্য দিন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকুন।
মনে রাখবেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন আসে তখন সবার জন্যই বিপদ বয়ে আনে।
আমি বেঁচে থাকলেই হলো এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।মৃত্যু লেখা থাকলে তা হবেই। বিশ্বাসীদের জন্যই নির্ধারিত হবে শাহাদাৎ। সংক্রমণ বা ভাইরাসের নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নাই। তকদীর তাকে পরিচালিত করে। অতএব যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে এবং সতর্কতা অবলম্বন করে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সর্বাবস্থায় তার নিকটে পানাহ চাইতে হবে। মৃত্যু হলে তওবা ও ঈমানী মৃত্যু কামনা করতে হবে। আল্লাহ খুশী থাকলে যে কোনো সময়ের মৃত্যুই আনন্দের।
নিজের জায়গা থেকে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কিভাবে আপনার পাশের মানুষদেরও এ বিপদ থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য আন্তরিক হোন।সুন্নাহভিত্তিক সমস্ত দোয়া ও আমল নিজে চর্চা করুন অন্যদের শিখতে সাহায্য করুন।
সতর্কতা ১৮ : স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে বলে এখন যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। তাই বলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বাইরে বেড়ানো এগুলো কোনোভাবেই করবেন না। বাসায় থাকুন, বাসা বাড়ির কাজে মা-বোনদের সাহায্য করুন। সতর্কতা বজায় রাখুন।
সতর্কতা ১৯ : পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করুন। পারতপক্ষে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলুন। মনে রাখুন আপনি যে-কোনো সময় যে-কারো থেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। সে মোতাবেক নিজের চোখ-কান খোলা রাখুন।
সতর্কতা ২০ : যারা ফ্রিল্যান্সার কিংবা রাত জাগার অভ্যাস আছে অথবা কোন কারণ ছাড়াই রাত জাগার বাতিক আছে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি সে তত বেশি ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে পারবে।
আরো পড়ুন
স্ত্রী সহবাসের পর তৎক্ষণাৎ গোসল এবং কিছু ভুল ধারণা
সতর্কতা ২১ : মনে রাখবেন আমাদের এ দেশটি খুবই ছোট্ট। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের বিশাল জনসংখ্যা যদি একটা প্রাকৃতিক মহামারীতে আক্রান্ত হয় তাহলে এটাকে মোকাবেলা করা অত্যন্ত দূরূহ হয়ে পড়বে। তাই সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিন। নিজের মধ্যে কোনো শারীরিক পরিবর্তন দেখার সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
★করোনাভাইরাসে যতগুলো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাই মনোবল হারাবেন না। ধৈর্য ধরুন। একটা বিষয় খেয়াল করুন যারা মারা গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক ৬০ বা তদুর্ধ বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ততটা
শক্তিশালী ছিল না দীর্ঘ মেয়াদি রোগ যেমন ফুসফুসের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, অন্য ক্রোনিক রোগ ছিলো, এ ধরণের মানুষ বেশি মৃত্যু বরণ করেছেন।
★তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভ্যাস গড়ে তুলুন। হেলদি ফুড ও হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার মাধ্যমে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করুন। তাহলে যে কোনো ভাইরাসকেও আপনি প্রতিরোধ ও পরাস্ত করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
★যত্রতত্র ভীড় করবেন না। ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন।।
জ্বর,সর্দি কাশির সাথে শ্বাষকস্ট থাকলে হাসপাতালে অবশ্যই যাবেন।
হাঁচি কাশির সময় মুখে রুমাল চেপে রাখবেন।
ছোট খাটো অসুস্থতায় অযথা হাসপাতালে যেয়ে ভীড়ের মধ্যে নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবেন না।
আরো পড়ুন
তথ্যসূত্র সি ডি সি
সম্পাদনায়
পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শরয়ী সম্পাদনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী
মহাপরিচালক, ঢাকা সেন্টার ফর দাওয়াহ এন্ড কালচার