HMREZAULISLAM.BLOGSPOT.COM |
মেরাজের ঘটনা কি রজবের ২৭ তারিখে হয়েছিল?
রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুস্তক-পুস্তিকায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রসিদ্ধ আছে। এ কথাটি শুধু ইতিহাসের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যার সনদ সহীহ নয়। অন্যথায় এটি কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারাও প্রমাণিত নয়, হাদীস শরীফ কিংবা কোনো সাহাবীর উক্তি দ্বারা তো নয়ই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটুকুই পাওয়া যায় যে, মেরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন, তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।
অনেক আলেম বলেছেন, মেরাজের রাত নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ হয়নি তাই এর দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি।
ইবনু কাইয়্যিমিল জাওযিয়্যাহ বলছেন
ولم يقم دليل معلوم لا علي شهرها ولا علي عشرها ولا علي عينها
কোন্ মাসে হয়েছে? মাসের কোন্ দশকে হয়েছে?কোন্ রাতে হয়েছে? কোনো কিছুই প্রমাণিত নয়।
بل النقول في ذالك منقطعة مختلفة
এ বিষয়ে বর্ণিত সকল হাদীস পরিত্যজ্য। (যাদুল মাআদ 1/58
[আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ইমাম ইবনে কাছীর ২/৪৭১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪; ইসলাহি খুতুবাত, আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১/৪৬-৪৮]
আরো পড়ুন
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুফতি রেজাউল
তবে রজব মাস যেহেতু কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি তাই এর পুরোটাই বরকতময়। সুতরাং এ মাসের সকল দিন ও রাতে ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ। কিন্তু এর ২৭ তারিখ যেহেতু শবে মিরাজ হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ রাতকে বিশেষ ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট না করা উচিত।
শবে মেরাজ কেন ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাত নয়?
কারণ শবে মেরাজ ইবাদতের বিশেষ ফযীলতের ব্যাপারে কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। তাই শবে মেরাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ আমল ইসলামী শরীয়তে নেই।
রজব মাসের ১ম তারিখ ও ১ম শুক্রবার, ১০ ও ১৫ এবং ২৭ তারিখ শবে মেরাজে রোযা রাখা, সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ প্রকৃতির নামায পড়া সংক্রান্ত সকল হাদীসই জাল ও বানোয়াট।
فلم يصح في شهر رجب صلاة مخصوصة تختص به و الأحاديث المروية في فضل صلاة الرغائب في أول ليلة جمعة من شهر رجب كذب و باطل لا تصح و هذه الصلاة بدعة عند جمهور العلماء و من ذكر ذلك من أعيان العلماء المتأخرين من الحفاظ أبو إسماعيل الأنصاري و أبو بكر بن السمعاني و أبو الفضل بن ناصر و أبو الفرج بن الجوزي و غيرهم إنما لم يذكرها المتقدمون لأنها أحدثت بعدهم و أول ما ظهرت بعد الأربعمائة فلذلك لم يعرفها المتقدمون و لم يتكلموا فيها و أما الصيام فلم يصح في فضل صوم رجب بخصوصه شيء عن النبي صلى الله عليه و سلم و لا عن أصحابه (لطائف المعارف، ذكر ما يتعلق برجب من أحكام-131)
অনুবাদ-মাহে রজবে বিশেষ কোন নামায প্রমাণসিদ্ধ নয়, রজবের প্রথম শুক্রবারে সালাতুর রাগায়েবের ফযীলত সম্পর্কীয় হাদীসসমূহ বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের মতে এটি একটি নব আবিস্কৃত নামায। পরবর্তী যুগের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী বিদগ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা এটি বিদআত আখ্যা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারী, আবু বকর ইবনে সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসের ও আবুল ফারায বিন জাওযী রহঃ প্রমূখ।
পূর্ববর্তীরা এ নিয়ে আলোচনা করননি। কেননা তাদের [ইন্তেকালের বেশ] পরে তা আবিস্কৃত হয়েছে। চারশত হিজরীরও পরে এটির প্রকাশ ঘটে। তাই পূর্ববর্তীদের নিকট এটি পরিচয় ঘটেনি এবং তারা এ ব্যাপারে কিছু বলে যাননি।
আর রোযা! রজব মাসের রোযার বিশেষ ফযীলতের কথা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়, সাহাবীদের থেকেও নয়। (লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১)
আরো পডুন
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্যে যে এন্টিবায়োটিক নিয়মিত সেবন করতে হবে৷
আল্লামা ইমাম নববী রহঃ রজব মাসের সালাতুর রাগায়েব ও শবে বরাতের রাতে বিশেষ পদ্ধতির নামাযকে বিদআত আখ্যা দেওয়ার পর বলেন-
ولا يغتر بذكرهما فى كتاب قوت القلوب، وإحياء عليوم الدين، ولا بالحديث المذكور فيهما فإن كل ذلك باطل، (المجموع شرح المهذب-3/549
অনুবাদ-আবু তালেব মক্কী রহঃ কুতূল কুলূব এ এবং ইমাম গাজ্জালী রহঃ ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে এ নামায দু’টি এবং সাথে এ সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করার কারণে ধোঁকায় পড়বেন না। কেননা এ সবগুলোই বাতিল ও ভিত্তিহীন।{আাল মাজমাউ শরহুল মুহাযযাব-৩/৫৪৯)
শবে মেরাজে কোন আমল নেই কেন?
রাসূল সাঃ শবে মেরাজে বিশেষ কোন আমল করেন নি, তাই শবে মেরাজে বিশেষ আমল নেই। রাসূল সাঃ যা করেন নি, সেটাকে দ্বীন মনে করার নামই হল বিদআত। আর বিদআত পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ফযীলতপূর্ণ দিবস ও রজনীর যথাযথ মূল্যায়ন করার এবং সর্বপ্রকার বিদআত ও কুসংস্কার বর্জন করার তাওফিক দান করুন
আরো পড়ুন
নানার আগে মা মারা গেলে নাতীরা নানা থেকে মিরাছ পাবে?