গতকাল রোববার (২৯ নভেম্বর) বেলা ১২টায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, আমাদের আন্দোলন মুর্তির বিরুদ্ধে ; বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়৷
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পায়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। চলমান পরিস্থিতিতে নিজের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান তুলে ধরা, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৈরি করা ভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করাসহ আগামীর ভাবনা জাতির সামনে তুলে ধরতে করা সাংবাদিক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল রহ. এর দেয়া ৫ দফার সাথে একমত হয়ে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাখে সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক যুগপৎ একটি ঐতিহাসিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন। যা উপমহাদেশে দেওবন্দি ধারা হিসেবে পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই ধারারই একজন রাজনৈতিক কর্মী। বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামের বিজয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণই আমার রাজনৈতিক লক্ষ্য। কুরআন সুন্নাহর আলোকে, পূর্বসূরিদের অনুসৃত পথে, স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালানোই আমার ব্রত। কোন ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আতাতের মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি আমাদের নেই। অতিতে বিভিন্ন সময়ে জোটবদ্ধ রাজনীতিতে ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে আমি বা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কোন রাজনৈতিক জোটে যুক্ত নই।
আমাদের এমন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্বেও লক্ষ করছি একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পায়তারা চালাচ্ছে। আর এ জন্য জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অমূলক ও কল্পিত অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গন। স্বাভাবিকভাবেই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেমসমাজ এর প্রতিবাদ করছে। সেই সূত্রে আমিও ভাস্কর্য তথা মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধাচারণ করে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। কিন্তু সুকৌশলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে আমার বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। কখনো কোনভাবেই এমন একজন প্রয়াত মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচারণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না। আবারো স্পষ্ট করে বলছি আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।
তিনি আরও বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে নানামুখী একটি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ভুল ইনফরমেশনের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসনকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া হচ্ছে। আমি আশাবাদী, এই অনভিপ্রেত অপতৎপরতা বন্ধ হবে। আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, ইসলাম বিদ্বেষী মহল দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় দুই মহান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মরহুম শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মরহুম সৈয়দ ফজলুল করিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও জঘন্য কটূক্তি করে যাচ্ছে। তাদের হাজারো অনুসারীদেরকে উস্কে দিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। অথচ সরকার ও প্রশাসন এ ব্যপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার। আমরা এ বিষয়ে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
আলেম-ওলামা ও ইসলামবিরোধী এমন বহুমুখী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মপ্রাণ জনতা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। গত ২৭ শে নভেম্বর বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম থেকে এমনই একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। স্বত:স্ফূর্ত তৌহিদী জনতার সেই মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ২৩ জন মিছিলকারীকে আটক করে। আমরা আটককৃত সকল বন্দীদেরকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।