আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ও তার কিছু অনন্য গুণ

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ও তার কিছু অনন্য গুণ
ছবি সংগৃহীত

কিছু জ্ঞান, কিছু গুণ, কিছু  কৃতিত্ব, কিছু অস্তিত্ব যা দ্বারা মানুষ জনমনে থাকে স্মরণীয়। ইতিহাস হয় বরণীয়। মরেও তারা চির অমর হয়ে থাকেন।লোকমুখ তাদের প্রশংসায় থাকে পঞ্চমুখ। এমনই ব্যক্তিত্বের অধিকারী আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন কিছু অনন্য গুণের অধিকারী।

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (১০ জানুয়ারি ১৯৪৬ — ১৩ ডিসেম্বর ২০২০) ছিলেন একজন  দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, আকাবির ও আসলাফের প্রতিচ্ছবি, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় বক্তা ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ইসলামি নেতা হিসেবে মুসলিম জনসাধারণের মাঝে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।

জন্ম ও বংশ

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল ওয়াদুদ।

শিক্ষাজীবন

বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে চতুর্থ শ্রেনী শেষ করে চড্ডার কাশিপুর কাশেমুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হন বরুডার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায়। এখানে হেদায়া জামাত (স্নাতক ২য় বর্ষ) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।

এরপর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার উদ্দেশ্যে ভারতে গমন করেন। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ভর্তি হন ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায়। এখানে জামাতে জালালাইন (স্নাতক) সমাপ্তির পর দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান। দেওবন্দ মাদ্রাসায় তার অধ্যয়নকাল মোট ৩ বছর। এখানে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সমাপ্তির পর আরবি সাহিত্য ও দর্শনে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন।

তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী, আনজার শাহ কাশ্মীরি, ফখরুদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী, মুহাম্মদ সালেম কাসেমি, তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি।

কর্মজীবন

ভারতের মজঃফরনগর জেলায় অবস্থিত মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুরাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। এখানে ১ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় চলে যান। এখানে তিনি ৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ছাত্রাবাস পরিচালক ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি কাজী মুতাসিম বিল্লাহ প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে চলে আসেন। এখানে তার অধ্যাপনাকাল মোট ৬ বছর।

এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং ১৯৯৮ সালে জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদীস ও মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।

২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।  আইন অনুসারে একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ছিলেন।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি হেফাজতের ঢাকা জেলার সভাপতি ছিলেন। 

১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

রাজনীতি

১৯৭৫ সালে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন এবং ৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে তিনি এর মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। 

তাসাউফ

ভারতের মুরাদিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে তিনি মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির কাছে বাইআত গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহীর নিকট বায়’আত হন এবং খেলাফত  লাভ করেন। কাসেমীর খলিফা  মোট ৩ জন। মাসউদুল করীম (গাজীপুর), বশির আহমদ (সৈয়দপুর) ও মুহাম্মদ ইছহাক (মানিকনগর)। 

পরিবার

পারিবারিক জীবনে তিনি ২ ছেলে যুবায়ের হুসাইন ও জাবের কাসেমী এবং দুই মেয়ের জনক। তার ছোট ছেলে জাবের কাসেমী একজন ইসলামি পণ্ডিত ও জামিয়া মাহমুদিয়া ইসহাকিয়া মাদ্রাসা, মানিকনগরের অধ্যাপক।

দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতের হিন্দুত্ববাদের সমালোচনা
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয় ভারতের বিশেষ আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাসেমী বলেন, ‘ভারতীয় আদালত উগ্র হিন্দুত্ববাদের পক্ষ নিয়ে সত্য, ন্যায়-ইনসাফ ও বাস্তবতার সঙ্গে শুধু তামাশাই করেনি, বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে শুরু করেছে। এই রায়ে ভারতের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়াই কেবল প্রমাণ করে না; বরং দেশটির বিচার বিভাগের ওপরও যে হিন্দুত্ববাদিরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে সেটাও স্পষ্ট হয়েছে।
মৃত্যু

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ছোট ছেলে জাবের কাসেমীর ইমামতিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তারই প্রতিষ্ঠিত সোবহানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজ জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সরকারি অনুমতি দেওয়া হয় নি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।




আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ও তার কিছু অনন্য গুণ

আকাবীর ও আসলাফের জীবন্ত এ প্রতিচ্ছবিকে কখনো কারো গীবত করতে শুনিনি। এমনকি হযরতের সামনে কেউ কারো গীবত করতে পারত না৷৷ তিনি নিজের মতের বিরুদ্ধে কাউকে নিয়ে সমালোচনা করেননি৷ যোগ্যতাসম্পন্য হওয়া সত্ত্বেও নিজ সন্তানকে নিজের মাদরাসায় নিয়োগ দেননি৷ ছাত্রের যোগ্যতা যেমনই হোক৷ ছাত্রকে কাজে লাগিয়ে সেরাটা বের করে আনার কারিগর ছিলেন আমাদের কাশেমী৷

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কিছু মূল্যবান উক্তি

এক ৷ কখনো কারো সমালোচনা করো না৷ তোমার কাজ তুমি কর৷ কাজের নাম ইসমে আযম৷ কেউ সমালোচনা করলেও তার জবাব দিতে যেও না৷তোমার কাজই তার সমালোচনার জবাব দিবে৷ 
দুই ৷ খোকা৷ পরিবেশ আকাশ থেকে নাযিল হয় না, পরিবেশ পরিস্থিতি নিজেকে গড়তে হয়৷  
তিন ।  বাজি! কাজের নাম ইসমে আযম৷
চার ৷ আমরা শুধু  ‍মুসল্লিদের থেকে নিতে চাই;  দিতে চাই না৷ এটা একজন ইমামের বৈশিষ্ট হতে পারে না৷
পাঁচ ৷ তুমি কাজ করবা আর তোমার সমালোচনা হবে না৷ এটা তুমি কিভাবে ভাবতে পার৷
ছয় ৷ যদি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চাও;  তাহলে আগে নিজেকে গঠন কর৷
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

أحدث أقدم