লতা মঙ্গেশকারের মৃত্যু, শাহরুখ খানের দোয়া; কী বলে ইসলাম



মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের জন্য দুআ করা জায়েজ নেই।
 আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয় একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।” (সূরা তওবা: ১১৩)

নুহ আলাইহিস সালাম নিজের ছেলের মুক্তির জন্য আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তালার সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছেন। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘ লাইসা মিন আহলিক’। দেখুন আল্লাহর ভাষায়,

وَ نَادٰی نُوۡحٌ رَّبَّهٗ فَقَالَ رَبِّ اِنَّ ابۡنِیۡ مِنۡ اَهۡلِیۡ وَ اِنَّ وَعۡدَکَ الۡحَقُّ وَ اَنۡتَ 
اَحۡکَمُ الۡحٰکِمِیۡنَ
আর নূহ নিজ প্রতিপালককে ডেকে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার এই পুত্রটি আমারই পরিবারভুক্ত। আর তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য এবং তুমি সমস্ত বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ 
আল্লাহ বললেন,

قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۖ إِنِّي 
أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
আল্লাহ বললেন, হে নূহ! জেনে রেখ, সে তােমার পরিবারবর্গের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে তাে অসৎ কর্মে কলুষিত। সুতরাং তুমি আমার কাছে এমন কিছু চেও না, যে সম্পর্কে তােমার কোনও জ্ঞান নেই। আমি তােমাকে উপদেশ দিচ্ছি তুমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়াে না।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য ইব্রাহিম আলাইহি সালামের জীবনীতে আদর্শ রয়েছে। তবে তিনি তার পিতার জন্য যে ইস্তেগফার কামনা করেছেন তা ব্যতীত। অর্থাৎ মুশরিক কারো জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না এখানে এ কথাই বলা হয়েছে’ । দেখুন,

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষের শুরু হয়ে গেছে- যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে। কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশ্যে এই আদর্শের ব্যতিক্রম, সে বলেছিল- আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব, আর আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে কিছু করার অধিকার রাখি না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।

কোরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘আপনি মুশরিকদের জন্য ৭০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আমি তাদের ক্ষমা করব না’। দেখুন,

اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِن تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফারমানদেরকে পথ দেখান না। এ আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে কোন অমুসলিম কাফেরদের জন্য দোয়া করা যাবে না।


সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হুদাইবিয়া সন্ধির সময় প্রিয় নবী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- সাহাবীদের সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাথে আছে এক হাজার ঘোড় সওয়ার। মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত আবওয়া নামক স্থানে তাঁর প্রাণ প্রিয় মা-জননী চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি যাত্রা বিরতি করে তাঁর মা’র কবর যিয়ারত করতে গেলেন। কবরের কাছে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বললেন,

اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي في أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي، وَاسْتَأْذَنْتُهُ في أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي، فَزُورُوا القُبُورَ فإنَّهَا تُذَكِّرُ المَوْتَ

“আমি আল্লাহর দরবারে আমার মা’র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু তার কবর জিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাতে অনুমতি দেন। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, কবর জিয়ারত করলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।” (সহীহ মুসলিম)

মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ করা বিষয়ে আলেমদের ফতোয়া:

➧ ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع 
“কোনো কাফিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (funeral) করা এবং তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা কুরআনের আয়াত ও উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম” (আল মাজমু: ৫/১১৯)

➧ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহ.) বলেন-
فإن الاستغفار للكفار لا يجوز بالكتاب والسنَّة والإجماع
“নিশ্চয় কাফিরদের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত অনুযায়ী নাজায়েয।” (মাজমুঊল ফাতাওয়া:১২/৪৮৯)
সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

أحدث أقدم